করোনায় অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের কামাল! জানুন ঠিক কী করবে এই ভ্যাকসিন

'নন রেপ্লিকেটিং ভাইরাল ভেক্টর' ভ্যাকসিন প্রস্তুত করে অক্সফোর্ড। যার মূল কাজ করোনা ভাইরাসের এই স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে শরীরে এক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

'নন রেপ্লিকেটিং ভাইরাল ভেক্টর' ভ্যাকসিন প্রস্তুত করে অক্সফোর্ড। যার মূল কাজ করোনা ভাইরাসের এই স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে শরীরে এক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

করোনার যে মূল চরিত্র সেই 'স্পাইক প্রোটিন' ভ্যাকসিন আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।

'বিষে বিষে বিষক্ষয়' এই নীতি নিয়েই করোনা প্রতিরোধের কাজ শুরু করেছিল ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড এবং ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা। আর তাতেই এসেছে সাফল্য। প্রাথমিক বাধাবিঘ্ন কাটিয়ে মানবদেহে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের তৃতীয় এবং শেষ ধাপে পৌঁছে গিয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা।

Advertisment

ঠিক কোন পদ্ধতিতে তৈরি করা হল এই ভ্যাকসিন?

ভাইরোলজি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রথমেই জানান হয় যে করোনা আদতে একটি আরএনএ ভাইরাস। যা ক্ষণে ক্ষণে চরিত্র বদল করতে সক্ষম। আর ঠিক সেই কারণেই এই জীবাণুকে বাগে আনতে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছে গবেষক-বিজ্ঞানীদের। তবে করোনা ভাইরাসের প্রধান যে অস্ত্র যে অর্থাৎ 'স্পাইক প্রোটিন' তাকে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে কোণঠাসা করতে শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছে বিজ্ঞানীরা। তাঁরা দেখেছেন স্পাইক প্রোটিনকে কাবু করলেই কোভিড-১৯ ভাইরাসের দেহকোষের মধ্যে প্রবেশকে আটকানো যায়। আর রুখতে পারা যায় পরবর্তী সংক্রমণ।

আরও পড়ুন, করোনা রোগীদের সারিয়ে তুলতে ‘টি সেল’-এ ভরসা বিজ্ঞানীদের

Advertisment

এই ভাবনা রেখেই 'নন রেপ্লিকেটিং ভাইরাল ভেক্টর' ভ্যাকসিন প্রস্তুত করে অক্সফোর্ড। যার মূল কাজ করোনা ভাইরাসের এই স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে শরীরে এক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। আর এর জন্য নয়া ভ্যাকসিনটি মানবদেহে প্রবেশ করেই এই স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে একের পর এক অ্যান্টিবডি তৈরি করে যায়। এর ফলে দেহকোষের বাইরে সুরক্ষা তৈরির পাশাপাশি করোনার এই স্পাইক প্রোটিন যাতে দেহকোষকে কোনওভাবেই আক্রমণ করতে না পারে তাও নিশ্চিত হয়।

কী এই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন?

ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে AZD1222 (ChAdOx1 nCoV-19) ভ্যাকসিনটি তৈরি করে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এরমধ্যে মানবদেহে তৃতীয়বারের জন্য পরীক্ষামূলক ট্রায়ালও শুরু করতে চলেছে এই যৌথ উদ্যোগ। এই ভ্যাকসিনের গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হল করোনা আক্রান্তের দেহে এটা একবার প্রয়োগ করলে পরবর্তী এক বছর এর কার্যকারিতা থাকবে শরীরে। মানবদেহে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরিতেও সাহায্য করবে এই ভ্যাকসিন, এমনটাই দাবি করেছেন অ্যাস্ট্রাজেনেকার সিইও।

আরও পড়ুন, করোনার ভ্যাকসিন পরীক্ষায় বড় সাফল্য, দ্বিগুণ সুরক্ষা, বলছে অক্সফোর্ড

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা যে ভ্যাকসিন তৈরি করেছে তা আসলে 'অ্যাডেনোভাইরাস'। এ পর্যন্ত পড়ে আপনার মনে হতে পারে, তাহলে কি এক ভাইরাসকে খতম করতে আবার ভাইরাস ঢুকছে শরীরে? না ঠিক তা নয়। অ্যাডেনোভাইরাস খুবই প্রচলিত, দুর্বল একটি ভাইরাস। এটিকে ব্যবহার করে করোনার 'স্পাইক'কে আদপে আটকাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ভ্যাকসিন হিসেবে যখন একে মানবদেহে প্রবেশ করানো হচ্ছে তখন বদলে দেওয়া হচ্ছে এই ভাইরাসের জিনগত চরিত্র। যাতে তারা শরীরের জন্য ক্ষতিকর না হয়ে ওঠে। এটি কেবল দেহে ঢুকে করোনাকে আটকাতেই কার্যকরী হবে। পাশাপাশি মানব শরীরে সহজাত যে প্রক্রিয়ায় অ্যান্টিবডি তৈরি হয় সেটিকেও ত্বরাণিত করবে। এরপর যেই মুহুর্তে দেহে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হয়ে যাচ্ছে, তখনই এই ভ্যাকসিনরূপে ঢোকানো অ্যাডেনোভাইরাসকে ধ্বংস করে দেবে আমাদের শ্বেতরক্তকণিকা।

ক্লিনিকাল ট্রায়ালে কতটা কাজ করতে সক্ষম হচ্ছে এই ভ্যাকসিন?

বিজ্ঞানের যে সূত্র ধরে এই কাজ করা হচ্ছিল সেখানে সাফল্য এসেছে প্রথম থেকেই। প্রথম পর্যায়ে যে সব রোগীকে এই ভ্যাকসিনের একটি মাত্র ডোজ দেওয়া হয়েছিল, সেখানে দেখা গিয়েছে প্রথমে নিষ্ক্রিয় ছিল এই ভ্যাকসিন। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে সেই সকল রোগীদের দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। প্রথম ডোজ দেওয়ার ২৮ দিনের মধ্যে স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছিল এই ভ্যাকসিন।

তবে ক্লিনিকাল ট্রায়ালে এই ভ্যাকসিনের কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা গিয়েছে। যেমন গায়ে ব্যথা, জ্বরের অনুভূতি, ঠান্ডা লাগা, পেশীতে ব্যথা অনুভব হওয়া, মাথা ব্যথা। তবে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয় গবেষকরা। প্রফাইল্যাকটিক প্যারাসিটামল ব্যবহার করেই এ ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রভাবগুলি কম করতে পেরেছিলেন তাঁরা।

Read the story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus COVID-19