Advertisment

করোনা সংকটে পিছনের সারিতে চলে যেতে পারে জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যু

হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট, হেলথ অ্যান্ড দ্য গ্লোবাল এনভায়ার্নমেন্টের ডিরেক্টর আরন বার্নস্টাইন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন স্বাস্থ্যকে পরিবেশ নীতির সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে দেখা "একটা বিপজ্জনক বিভ্রম"।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Coronavirus, Climate change

করোনায় লকডাউনের জেরে আকাশ বাতাস এখন অনেক স্বচ্ছ (ছবি- নন্দগোপাল রাজন)

অতিমারীর সময়ে সারা পৃথিবীতেই মানুষ স্বচ্ছ বাতাসে শ্বাস নিচ্ছেন এবং আকাশ পরিষ্কার, আরও নীল দেখাচ্ছে। এর কারণ দুনিয়ার বহু দেশে লক ডাউন। দিল্লিতে গত পাঁচ বছরে মানুষ এই সময়ে এত স্বচ্ছ বাতাসে শ্বাস নেননি।

Advertisment

কিন্তু বাতাস যতই পরিষ্কার হোক, জলবায়ু পরিবর্তনের দিক থেকে দেখলে লকডাউন আদৌ ভাল ব্যাপার নয়। এর জেরে এই খাতে খরচ কমানো হবে, জলবায়ু সম্মেলন বাতিল হবে, এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় রাজনৈতিক উদ্যোগ কমবে। এমআইটি টেকনলজি রিভিউয়ে বলা হয়েছে, অতিমারীর কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে এমনটা ধরে নেওয়া ভুল হবে।

মেডিক্যাল মাস্ক, বাড়িতে তৈরি মাস্ক, কার কী পরা উচিত?

একটা বড় আশঙ্কা যে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এবং অতিমারী নিয়ন্ত্রণে আসবার পরেও ফের তা নিয়ে আলোচনা শুরু করা কঠিন হতে পারে।

গার্ডিয়ানের রিপোর্ট বলছে পরিবেশ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের যেসব কাজ নির্ধারিত ছিল, সেগুলি হয় বাতিল নয় স্থগিত হয়ে গিয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও আবহাওয়ার উপর নিয়মিত নজরদারিও এখন সংকটের মুখে। এ ছাড়া বাণিজ্যিক বিমানের উড়ান কমে যাওয়ায় বাতাসের গতি ও তাপমাত্রা সংগ্রহের বিষয়টিও সংকটের মুখে। বিমানের সেন্সর থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

তবে শুধু জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত গবেষণাই ধাক্কা খেয়েছে এমনটা নয়। নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, অতিমারীর কারণে অন্য সমস্ত ল্যাবরেটরি রিসার্চই বন্ধ। তার কারণ হল গবেষক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের এখন এক ও একমাত্র করোনাভাইরাসের দিকে নজর দিতে হচ্ছে। তা ছাড়া লক ডাউনের কারণে, বাড়ি থেকে কাজ ও সামাজিক দূরত্ববিধির জন্য অন্য গবেষণাগুলি প্রায় বন্ধ।

 কোভিড ১৯ এক আপৎকালীন সংকট, এ পরিস্থিতিতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশের মত বিষয়গুলি কি কিছুদিন পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে না?

বর্তমানে বাড়তে থাকা স্বাস্থ্য সংকটের কারণে মানবজাতির টিকে থাকাই এখন সবচেয়ে বড় বিষয়। কিন্তু তা এই মুহূর্তের প্রয়োজন হলেও মানবজাতির স্বার্থেই জলবায়ু নীতির বিষয়টি পুরোপুরি অগ্রাহ্য করা ঠিক হবে না।

হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট, হেলথ অ্যান্ড দ্য গ্লোবাল এনভায়ার্নমেন্টের ডিরেক্টর আরন বার্নস্টাইন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন স্বাস্থ্যকে পরিবেশ নীতির সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে দেখা "একটা বিপজ্জনক বিভ্রম"।

করোনার জেরে আর্থিক সংকট, ফিরে আসবে গ্রেট ডিপ্রেশন?

"আমাদের স্বাস্থ্য পুরোপুরি জলবায়ু এবং গ্রহের অন্যান্য প্রাণবিশিষ্টদের উপর নির্ভরশীল। এই সকলকে একসঙ্গে আনতে হবে। প্রাণী থেকে মানুষে প্যাথোজেন চলে যাবার ঝুঁকি নিয়ে আমরা অনেকটাই এগিয়েছি। কিন্তু আমরা এখনও মূলত পরিবেশের দিকে এবং পৃথিবীতে জীবনসমূহের দিকে দেখছিষ পরের সংক্রামক মহামারী আটকাতে আমাদের এর চেয়ে ভালভাবে কাজ করতে এবং পারতে হবে।"

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কি সংক্রামক রোগের সম্পর্ক রয়েছে ?

প্রত্যক্ষ সংযোগ নেই। অর্থাৎ করোনাভাইরাস সংক্রমণ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ছড়িয়েছে, এ কথা বলা যাবে না, কিন্তু কোভিড ১৯ মানুষের মধ্যে যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে তার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করা যেতে পারে। যেমন বায়ু দূষণের ফলে মানবস্বাস্থ্যে যে প্রভাব পড়েছে তা অল্প হলেও কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ভয়াবহ আকার নিয়েছে। ২০০৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, যাঁরা বায়ুদূষণের শিকার সার্সে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা তাঁদের মধ্যে বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সার্স, এইচআইভি এইডস, এবং হান্টাভাইরাসের মত সংক্রামক রোগ যা জনবিন্যাস, পরিবেশ,গত, সামাজিক, প্রযুক্তিগত এবং অন্যান্য বদল নিয়ে আসতে পারে তা ক্রমবর্ধমান। হুয়ের মতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।

হু বলেছে, "উনবিংশ শতাব্দীতে সংক্রামক এজেন্ট আবিষ্কার হবার অনেক আগেই মানুষ সংক্রামক রোগের সঙ্গে জলবায়ুর সম্পর্কের কথা জানত। রোমান অভিজাতরা ম্যালেরিয়ার হাত থেকে বাঁচতে গ্রীষ্মে পাহাড়ে যেতেন। দক্ষিণ এশিয়ার বাসিন্দারা আগেই জানতেন খুব গরমের সময়ে ভাল করে রান্না করা খাবার ডায়ারিয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারে।"

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus
Advertisment