করোনার জেরে আর্থিক সংকট, ফিরে আসবে গ্রেট ডিপ্রেশন?

আমেরিকায় কর্মহীনতা ১৩ শতাংশ হতে পারে, যা গ্রেট ডিপ্রেশনের পরবর্তীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ- বলছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্ট। 

আমেরিকায় কর্মহীনতা ১৩ শতাংশ হতে পারে, যা গ্রেট ডিপ্রেশনের পরবর্তীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ- বলছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্ট। 

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Corona Economy, Great Depression

গ্রেট ডিপ্রেশন এক আর্থিক সংকট, যা আমেরিকায় শুরু হয়েছিল ১৯২৯ সালে এবং ১৯৩৯ সালে যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে

নভেল করোনাভাইরাস অতিমারী সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ একে গ্রেট ডিপ্রেশনের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেছেন। বিশ শতকের ত্রিশের দশকে পৃথিবীব্যাপী অসংখ্য ঘটনার জেরে এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট গ্রেট ডিপ্রেশন নামে পরিচিত।

Advertisment

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন কিছু দেশে কর্মহীনতা সেই সময়ে পর্যায়ে পৌঁছবে - যথন খাস আমেরিকায় কর্মহীনতা পৌঁছেছিল ২৫ শতাংশে।

লকডাউনে ভারতের পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার তাড়া- বিশেষজ্ঞের অভিমত

Advertisment

বর্তমানে, আমেরিকায় কর্মহীনতা ১৩ শতাংশ হতে পারে, যা গ্রেট ডিপ্রেশনের পরবর্তীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ- বলছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্ট।

গ্রেট ডিপ্রেশন কী ছিল?

গ্রেট ডিপ্রেশন এক আর্থিক সংকট, যা আমেরিকায় শুরু হয়েছিল ১৯২৯ সালে এবং ১৯৩৯ সালে যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

এর শুরু ১৯২৯ সালের ২৪ অক্টোবর, যাকে ব্ল্যাক থার্সডে বলে উল্লেখ করা হয়। ওইদিন নিউ ইয়র্কের স্টক এক্সচেঞ্জে ব্যাপক ধাক্কা লাগে, স্টকের দাম পড়ে যায় ২৫ শতাংশ।

ওয়াল স্ট্রিটের পতন বেশ কিছু ছোট ছোট ঘটনার জন্ম দেয়, কিন্তু বিশাল পতনের কারণ নিহিত ছিল আরও গভীর কিছু বিষয়ের মধ্যে, যেমন মোট চাহিদার পতন, ভ্রান্ত আর্থিক নীতি এবং  মজুত পণ্যের ব্যাপক বৃদ্ধি।

আমেরিকায় শিল্প উৎপাদন কমে যায় ৪৭ শতাংশ, পাইকারি মূল্য সূচি ৩৩ শতাংশ এবং রিয়েল জিডিপি কমে ৩০ শতাংশ।

আমেরিকায় এই সংকট অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়াপ মূল কারণ ছিল সোনার দাম, যা প্রায় গোটা বিশ্বের ফিক্সড এক্সচেঞ্জ রেট হিসেবে চালু।

পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশে এর জেরে ব্যাপক কর্মহানি, মুদ্রাহ্রাস ঘটে।

১৯২৯ থেকে ১৯৩৩ সালের মধ্যে আমেরিকায় কর্মহীনতা ৩.২ শতাংশ থেকে ২৪.৯ শতাংশে পৌঁছয়। ১৯২৯ থেকে ১৯৩২ সময়কালে ব্রিটেনে তা পৌঁছয় ৭.২ থেকে ১৫. ৪ শতাংশে।

এর ফলে মানুষ যেমন চূড়ান্ত কষ্টের মধ্যে পড়েছিলেন, তেমনই সারা পৃথিবীর রাজনীতিতে উথালপাথাল ঘটে গিয়েছিল।

ইউরোপে ফ্যাসিজমের উত্থান ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনার জন্য দায়ী করা হয় অর্থনীতির এই পরিস্থিতিকে।

এর ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সারা পৃথিবীর নীতি নির্ধারণে ব্যাপক প্রভাব পড়ে।

করোনা সংক্রমণে মোদী ট্রাম্পদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে কী করে?

ভারতে এর প্রভাব

এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়েছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে। পৃথিবীময় সংকটের কারণে কৃষি উৎপাদনের দাম ব্যাপক কমে যায়, এবং নীতিপ্রণেতারা টাকার দাম কমাতে রাজি না হওয়ায় ব্যাপক ঋণ সংকোচন হয়।

১৯৮০ সালে ভারতের ইতিহাস কংগ্রেসে জার্মানি অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ ডিটেৎমার রদারমুন্ড এক গবেষণাপত্রে লেখেন, কৃষিপণ্যের মূল্য গ্রাস যা চূড়ান্ত রূপ নেয় ব্রিটিশদের ভারতে আর্থিক নীতির কারণে, তার জেরে ভারতীয় কৃষকরা বিক্ষোভে শামিল হন এবং এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের কর্মীরা।

১৯৩০ সালে ফলল কাটার মরশুমে ডিপ্রেশনের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, যার পরে পরেই সে বছরের এপ্রিলে মহাত্মা গান্ধী আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দেন।

দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে খাজনা না দেবার প্রচার শুরু হয় যা বিহার ও উত্তর প্রদেশে শুরু করেছিল তৎকালীন বিপ্লবী সংগঠন কিষাণ সভা।

২১ দিন পর কি সীমিত লক ডাউনের পথে যাবে দেশ?

কৃষকদের ক্ষোভ কংগ্রেসের সমর্থনের ভূমি তৈরি করে, যা পৌঁছে যায় গ্রামাঞ্চলেও।

কৃষকশ্রেণির মধ্যে কংগ্রেসের সমর্থনের জেরে ১৯৩৫ সালে ভারত সরকার আইনানুয়ী সংঘটিত ১৯৩৬-৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে কংগ্রেস ব্যাপক জয়লাভ করে এবং পরবর্তী বছরগুলিতে কংগ্রেসের রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus