কোভিড-১৯ জাতীয় উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের প্রেসক্রিশন ছাড়া প্রদাহনিবারক ওষুধ আইবুপ্রেোফেন খেতে নিষেধ করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মঙ্গলবার তারা এই পরামর্শ দিয়েছে। শুধু আইবুপ্রোফেন নয়, আরও কয়েকটি ওষুধ সম্পর্কে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলে হু এর ঘোষণা, এর জেরে রোগীদের কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে তারা। ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এর সঙ্গে অ্যাসপিরিনের মত ব্যাথানিরোধক ওষুধ খেতেও নিষেধ করেছেন।
হুয়ের মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার জেনিভায় সাংবাদিকদের বলেছেন আইবুপ্রোফেনের সম্ভাব্য কুপ্রভাব নিয়ে গবেষণা চলছে।
এর মধ্যে যেন দাঁতে ব্যথা না হয়
আইবুপ্রোফেন কী?
এটি একটি প্রদাহ নিরোধক ওষুধ যা ভারতের সমস্ত ওষুধের দোকানে সহজলভ্য, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এ ওষুধ কেনা যায়। এতে ব্রুফেন ও কমবিফ্লাম থাকে। গাঁটের ব্যথা, মাইগ্রেন, দ্বর, গায়ে ব্যথা এমনকী ঋতুকালীন সময়ের ব্যথা তাড়াতে এ ওষুধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ব্যথা ছাড়াও জ্বর ও ফোলাভাব কমাতেও এ ওষুধ কাজে দেয়। আইবুপ্রোফেনর মত অন্য কয়েকটি নন-স্টেরয়েড ওষুধ হল অ্যাসপিরিন, কোর্টিজোন, ন্যাপ্রোক্সেন ও ডাইক্লোফেনাক।
এক দল বিজ্ঞানীর বক্তব্য, আইবুপ্রোফেন সেবনের ফলে কিছু নির্দিষ্ট এনজাইমের সংখ্যাধিক্য ঘটে যা কোভিড ১৯ সংক্রমণকে আরও খারাপ স্তরে নিয়ে যাবে।
সাবধানবাণী ও সংশয়
ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওলিভিয়ের ভেরান একজন নিউরোলজিস্ট। ১৪ মার্চ টুইটারে তিনি পোস্ট করেছিলেন, আইবুপ্রোফেন, কোর্টিজোনের মত ওষুধ খেলে সংক্রমণ আরও ক্ষতিকর হতে পারে। জ্বর হলে প্যারাসিটামল খান। ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
করোনাভাইরাস লকডাউন: দূষণ কমছে চিন ও ইতালিতে
বুধবার সকাল পর্যন্ত ফ্রান্সে ৭৭০০ কোভিড ১৯ সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে এবং প্রায় ১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নন স্টেরয়েড ব্যথা নিরোধক ওষুধের ব্যাপারে ফরাসি আধিকারিকরা যে বিপদ বার্তা দিয়েছেন, সে সম্পর্কে লিখতে শুরু করেছে ফরাসি সংবাদমাধ্যম।
ব্রিটেনের দ্য মিরর পত্রিকায় এক চার বছরের কোভিড ১৯ সংক্রমিত মেয়ের কথা বলা হয়েছে, যাকে আইবুপ্রোফেন দেবার পর তার বমি, খিঁচুনি ও প্রবল জ্বর দেখা দেয়।
তবে ফরাসি মন্ত্রীর কথা নিয়ে সংশয়ও রয়েছে। স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর মুগে সেভিক ওইদিনই টুইটারে লেখেন. ফরাসি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কোনও রেফারেন্স ছাড়া এ দাবি, যা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে তাতে উদ্বিগ্ন বোধ করছি। কোভিড ১৯-এর সংক্রমণ আইবুপ্রোফেন সেবনে খারাপ হতে পারে, এর কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আমি পাইনি।
ভারতের চিকিৎসকদের সাবধানবাণী
গরম পড়লে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমবে, এমন কোনও প্রমাণ নেই
মুম্বইয়ের জসলোক হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর ওম শ্রীবাস্তব বলছেন আইবুপ্রোফেনের প্রভাব নিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও প্রমাণ করতে হবে।
ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের বিশেষজ্ঞ ডক্টক প্রবীণ আমিন বলেছেন আরও গবেষণা না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা করোনাভাইরাস রোগীদের আইবুপ্রোফেন প্রেসক্রাইব করা বন্ধ রাখবেন।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর তরুণ সিংহল বলেছেন, আইবুপ্রোফেন কিডনির ক্ষতির জন্য দায়ী এবং বয়স্কদের মধ্যে এটি গ্যাসট্রিক আলসারের কারণও বটে।
তিনি বলেন আইবুপ্রোফেন খুব ভাল ওষুধ নয়, আমরা এটা এড়িয়েই চলি। হাইপারটেনশন ও ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এ ওষুধে স্বাস্থ্য খারাপ হয়। তবে এর সঙ্গে করোনাভাইরাসের কোনও যোগাযোগের প্রমাণ মেলেনি।