করোনাভাইরাস: সংক্রমণ যুঝতে কীভাবে এগোচ্ছেন বিজ্ঞানীরা?

বেশ কিছু দেশ অন্যদের চেয়ে অনেক দ্রুত জিনোম কাঠামো দিচ্ছে। চিন এখনও পর্যন্ত ১২০টি দিয়েছে, তবে গত কয়েকদিনে নতুন কিছু আর দেয়নি তারা। আমেরিকা ৪৩টি, হল্যান্ড ও ব্রিটেন ২৫টি করে জিনোম কাঠামো দিয়েছে।

বেশ কিছু দেশ অন্যদের চেয়ে অনেক দ্রুত জিনোম কাঠামো দিচ্ছে। চিন এখনও পর্যন্ত ১২০টি দিয়েছে, তবে গত কয়েকদিনে নতুন কিছু আর দেয়নি তারা। আমেরিকা ৪৩টি, হল্যান্ড ও ব্রিটেন ২৫টি করে জিনোম কাঠামো দিয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Coronavirus, Sure, Scientists

চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ইটালি, এমনকি আমেরিকার চেয়ে ভারতে সংক্রমিতের সংখ্যা কম (ছবি- পার্থ পাল)

সারা পৃথিবীর বৈজ্ঞানিকরা COVID-19-এর সম্ভব্য প্রতিষেধক তৈরি করার ও চিকিৎসার পদ্ধতি খোঁজার চেষ্টা করে চলেছেন। এই রোগে ইতিমধ্যেই ১০০০০-এরও বেশি আক্রান্ত এবং ৪০০০ জনের প্রাণ গিয়েছে। অতি আশাবাদীরাও আগামী বছরের আগে প্রতিষেধক বা চিকিৎসা পদ্ধতি খুঁজে পাবার আশা করছেন না। ইতিমধ্যে সারা পৃথিবী জুড়ে নতুন এই ভাইরাসের জিনগত কাঠামো সংগ্রহ ও তা বিশ্লেষণের চেষ্টা চলছে। তা সম্ভব হলে এই রোগের চিকিৎসা ও প্রতিষেধক আবিষ্কারে বড়সড় সাফল্য আসবে।

Advertisment

কী ধরনের জিনগত তথ্য নিয়ে কাজ চলছে?

বিভিন্ন দেশের ল্যাবরেটরিতে ভাইরাসের জিনোম কাঠামো আলাদা করার কাজ চলছে একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চের উদ্যোগে। প্রতিটি প্রাণসম্পন্নের জিনগত কাঠামো আলাদা প্রকার হয়। যেমন করোনাভাইরাসের জিন কাঠামো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের চেয়ে আলাদা।

জল-সাবানই কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ আটকানোর মোক্ষম অস্ত্র

Advertisment

এখনও পর্যন্ত ৩২৬ ধরনের ডেটা মিলেছে। ভারত এখনও পর্যন্ত দু ধরনের ডেটা দিয়েছে। উহানের রোগীদের কাছ থেকে যে ধরনের কাঠামো মিলেছিল, তার সঙ্গে এ দুটির মিল রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন কেরালায় প্রথম রোগীদের কাছ থেকে যেহেতু এই নমুনা সংগৃহীত হয়েছিল, ফলে এমনটাই স্বাভাবিক। কারণ সেখানে যাঁরা ছিলেন তাঁরা উহান থেকেই ফিরেছিলেন। চিন মোট ১২০ রকমের কাঠামো দিয়েছে।

এত রকমের জিন কাঠামো নিয়ে কী হচ্ছে?

ভাইরাস যখন সংখ্যায় বাড়ে বা বংশবৃদ্ধি করে, তখন তারা জিন পদ্ধতি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু কখনওই তা ঠিক আগের মত হয় না। সংখ্যাবৃদ্ধির সময়ে ভাইরাস সামান্য পরিবর্তিত হয়, যাকে বলে মিউটেশন। এই মিউটেশন সময়ের সঙ্গে একত্রিত হয়, এবং দীর্ঘ সময় পর তা নতুন আকারে বিবর্তিত হয়। একটি মাত্র বংশবৃদ্ধির সময়ে এই বদল থাকে অত্যল্প। জিন কাঠামো ৯৫ শতাংশ একই থাকে।

করোনাভাইরাস আটকাতে সারা দেশে জারি হওয়া ১৮৯৭ সালের মহামারী আইনে কী বলা আছে?

এই সামান্য পরিবর্তনগুলি তার প্রকৃতি ও ব্যবহার বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়। এ ক্ষেত্রে এই সামান্য পরিবর্তনগুলিই বিজ্ঞানীদের কাছে উৎস, সংক্রমণ ও রোগীর উপর ভাইরাসের প্রভাব বোঝার জন্য জরুরি হয়ে উঠতে পারে। বিভিন্ন স্বাস্থ্য কাঠামোর মধ্যে রোগীদের উপর এই ভাইরাস কতটা ভিন্ন প্রভাব ফেলে তারও ইঙ্গিত মিলতে পারে এর মাধ্যমে।

ভারতের ২ ও চিনের ১২০ টি জিনোম কাঠামো- এতটা তফাতের কারণ কী?

চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ইটালি, এমনকি আমেরিকার চেয়ে ভারতে সংক্রমিতের সংখ্যা কম। প্রতিদিন সারা বিশ্বে ২০-৩০টি জিন কাঠামো শেয়ার করা হচ্ছে। যে সব রোগী একই রকম পরিস্থিতিতে সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে জিনোম কাঠামোয় বড়ধরনের বদল হওয়ার সম্ভাবনা কম। যেমন গত মাসে দুবাই সফররত মহারাষ্ট্রের যে ৪০ জনের মধ্যে এই সংক্রমণ দেখা গিয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে জিনোম কাঠামো একই রকম থাকার কথা।

বেশ কিছু দেশ অন্যদের চেয়ে অনেক দ্রুত জিনোম কাঠামো দিচ্ছে। চিন এখনও পর্যন্ত ১২০টি দিয়েছে, তবে গত কয়েকদিনে নতুন কিছু আর দেয়নি তারা। আমেরিকা ৪৩টি, হল্যান্ড ও ব্রিটেন ২৫টি করে জিনোম কাঠামো দিয়েছে।'

করোনাভাইরাসকে প্যানডেমিক ঘোষণা করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এর অর্থ কী?

ভারত যে দুটি জিনোম কাঠামো দিয়েছে, তা গত ডিসেম্বরে উহানে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটার পর যাঁরা সেখান থেকে ফিরেছিলেন তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া।

এখন সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ কী?

এই মুহূর্ত পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের তা অজানা। এক-দুজনের ক্ষেত্রে ওষুধ পরীক্ষা হলে যে ফল পাওয়া যায় তা থেকে তেমন কিছু বোঝা যায় না।

ওষুধের ট্রায়ালের ক্ষেত্রে অনেকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। যদিও ওষুধ তৈরির বিভিন্ন চেষ্টা চলছে, তা সত্ত্বেও বিজ্ঞানীরা বলছেন দ্রুত সাফল্য আসার সম্ভাবনা কম।

এখন, একই ধরনের রোগের পুরনো ওষুধ COVID-19-এর ক্ষেত্রে কেমন কাজ করে তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এই ওষুধগুলি যদি কাজ করে, তাহলে এর ক্লিনিকাল ট্রায়াল হবে, এবং তারপরেই তা জনগণের জন্য লভ্য হবে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই জ্বর, গায়ে ব্যথা ও কাশি- এই সব লক্ষণের ওষুধ যথেষ্ট। আরও গুরুতর ক্ষেত্রে অক্সিজেন ও অন্যান্য সাপোর্ট দেওয়া যেতে পারে।

ট্রানস্লেশনাল হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিট্যুটের একজিকিউটিভ ডিরেক্টর ডক্টর গগনদীপ কাং বলেছেন, "মারাত্মক ক্ষেত্রে নতুন ওষুধ কার্যকর হলেও আমাদের অপেক্ষা করতে হবে নতুন ওষুধের জন্য।"

coronavirus