ভারতে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে এর মধ্যে সামূহিক সংক্রমণ, অর্থাৎ অনেক মানুষ যেখানে একত্রিত হয়েছেন, সেখানেই এই সংক্রমণ তুলনামূলক ভাবে বেশি ঘটেছে। এর ফলে ভারতে রোগ ছড়ানোর বিষয়টি নতুন একটি মাত্রার সন্ধান দিচ্ছে। রোগের প্রকোপের সময় থেকে হিসেব করলে গত তিনদিনে সংক্রমিতের মাত্রা যা বেড়েছে, তেমনটা আগে ঘটেনি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন রোগ ছড়ানো আটকে যাবার প্রেক্ষিত থেকে বিবেচনা করলে এই সামূহিক সংক্রমণ ইতিবাচক।
গত পাঁচদিনে সংক্রমিতের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে, ২৬ মার্চ থেকে ৭০০-র কম যে সংখ্যা ছিল তা আজ বেড়ে ১৪০০-র বেশি। এর মধ্যে নতুন যাঁরা সংক্রমিত, দেখা যাচ্ছে তাঁদের অনেকেই নয়া দিল্লির তাবলিগি জামাতের মত বিভিন্ন বড় সমাবেশে মিলিত হয়েছিলেন। তবে এরকম সামূহিক সংক্রমণ শুধু তাবলিগি জামাতে নয়, দেখা গিয়েছে মিরাট, সাংলি, আহমেদনগর, দিল্লি ও তেলেঙ্গানাতেও।
এ ধরনের সংক্রমণের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উৎসকে নির্ভরযোগ্য উপায়ে চিহ্নিত করা যেমন সম্ভব, তেমনই বিশেষজ্ঞরা বলছেন স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে এরকম সামূহিক সংক্রমণ বিচ্ছিন্ন সংক্রমণের ঘটনার চেয়ে মোকাবিলা করা সহজ, বিশেষ করে যদি তাঁদের আইসোলেশন ও তাঁদের থেকে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়।
আরও পড়ুন, কোভিড ১৯ মহামারীর মধ্যে কেন বন্দিদের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে?
অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক এল এস শশীধর বলেন, “ভারতে এমন ১০০ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে যাঁরা দিল্লিতে জমায়েত হয়েছিলেন। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই সংক্রমণকে বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের দ্বারা ঘটেছে বলেও চিহ্নিত করা যাচ্চে। এই ধরনের সামূহিক সংক্রমণ থেকে এ কথা আরও বেশি করে মনে করার কারণ রয়েছে যে কোনও কমিউনিটি সংক্রমণ ঘটেনি।”
তিনি বলেন, “বিজ্ঞানীদের উচিত সারা ভারতের সমস্ত সামূহিক গোষ্ঠীর মধ্যেকার সংক্রমণের বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করা যাতে ভূ জলবায়ূ ঘটিত পরিস্থিতি ও পুরনো মেডিক্যাল ইতিহাস পর্যালোচনা করে সংক্রমণের বিস্তারকে প্রভাবিত করা যায়।”
ইনস্টিট্যুট অফ ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্সেসের কম্পিউটেশনাল বায়োলজির অধ্যাপক গৌতম মেননও বলেছেন, সামূহিক সংক্রমণ মোকাবিলা করা সহজ। “এক জায়গায় একটা বড় সংক্রমিত গোষ্ঠীর উপর নজরদারি চালানো এবং পৃথক করে রাখা সহজতর, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা বিচ্ছিন্ন ঘটনাও যে বাড়ছে তা দেখতে পাচ্ছি, যাঁদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের উৎস কী তা ধরা যাচ্ছে না।”
তিনি আরও বলেন “এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের অনেকেই, দীর্ঘদিন ধরে যা বলে আসছিলাম, সেই কমিউনিটি সংক্রমণ একটা বাস্তবতা এবং আমরা তা থেকে নিজেদের এড়াতে পারছি না।”
সরকার ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জায়গাকে চিহ্নিত করে সেগুলিকে হটস্পট বলে ঘোষণা করেছে, যেখানে সামূহিক সংক্রমণ ঘটেছে। সরকার এও বলেছে যে নজরদারি বাড়ানো হবে এবং এসব জায়গায় নমুনা পরীক্ষার পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।