বৃহ্স্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রক কোভিড ১৯ সংক্রমণের দ্বিগুণ হারের একটি চার্ট প্রকাশ করেছে। ওই চার্টে আরও ৭টি দেশের নাম রয়েছে, যাদের মধ্যে ৬টি দেশে সংক্রমণের সংখ্যা ওই দিনের হিসেব পর্যন্ত সর্বোচ্চ। দ্বিগুণত্বের হারে দেখানো হয়েছে কোনও একটি দেশে রোগীর সংখ্যা কতদিনে দ্বিগুণ হয়েছে।
ভারতের দ্বিগুণ হারের ঘটনা স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেখানো হিসেবে বাকি সাতটিদেশের তুলনায় অনেকটাই নিচে, আরও ১২টি দেশ রয়েছে, যেখানে ১৬ এপ্রিলের হিসেব অনুসারে ভারতের থেকে সংক্রমিতের সংখ্যা বেশি।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লকডাউন ও সতর্কতামূলক নীতি
১৬ এপ্রিল পর্যন্ত যেসব দেশে সংক্রমণের সংখ্যা বেশি, শীর্ষ থেকে নিম্ন পর্যন্ত সে দেশগুলির তালিকা থাকছে - আমেরিকা, স্পেন, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চিন, ইরান, তুরস্ক, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, সুইৎজারল্যান্ড, রাশিয়া, পর্তুগাল, অস্ট্রিয়া, আয়ারল্যান্ড এবং ইজরায়েল।
দ্বিগুণ হার কেন
মডেল যাঁরা তৈরি করেন, সেই বিশেষজ্ঞরা রোগ ছড়ানোর হার বুঝতে এই হিসেব ব্যবহার করে থাকেন। এতে বোঝা যায় বর্তমান সংখ্যা কম হলেও প্রকোপ কত দ্রুত ছড়াতে পারে। প্রতিদিন যদি সংখ্যাবৃদ্ধির হার একই হয় (লিনিয়র গ্রোথ) তাহলে তা কম উদ্বেগজনক। স্বল্প সময়ে বৃদ্ধির হার যদি বেশি হয় (এক্সপোনেনশিয়াল গ্রোথ) তাহলে তা উদ্বেগজনক। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বর্তমান সংখ্া কম হলেও তা খুব দ্রুত বেড়ে যায়। সমস্ত কোভিড ১৯ মডেলে টেস্টিংয়ের কৌশল এই হিসেবেই ধার্য করা হয়েছে।
মন্ত্রক এই হার তুলনা করার জন্য চারটি রেঞ্জ বেছে নিয়েছে, ৭৫০ থেকে ১৫০০, ১৫০০ থেকে ৩০০০, ৩০০০ থেকে ৬০০০ এবং ৬০০০ থেকে ১২০০০। মন্ত্রক ভারতের নিজস্ব খতিয়ানের কথা বললেও আমরা (ভারত সহ) সমস্ত দেশের তথ্যের জন্য একটি সূত্রই ব্যবহার করেছি, জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য। সে কারণে এই বিশ্লেষণে দ্বিগুণের হার মন্ত্রকের দেওয়া হারের চেয়ে সামান্য আলাদা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর্যায়
ভারতে ৭৫০ থেকে ১৫০০ হতে সময় লেগেছে ৫ দিন, বলছে জন হপকিন্সের তথ্য। যে কোনও অন্য দেশের থেকে এই সময়টা বেশি। ইরান, স্পেন ও তুরস্কে একদিনে এই সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটেছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ের বৃদ্ধির সময়ে (১৫০০ থেকে ৩০০০) ভারত দেশগুলির মধ্যস্থানে চলে গিয়েছে। সাতটি দেশে বৃদ্ধি সংখ্যা ভারতের চেয়ে কম, ১২ টি দেশে ভারতের চেয়ে দ্রুত বা সমগতিতে (৩ দিন) বেড়েছে। এই পর্যায়ে ভারতের চেয়ে দীর্ঘতর সময় ধরে বৃদ্ধি হয়েছে ব্রিটেন, রাশিয়া, পর্তুগাল, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস ও আয়ারল্যান্ডে ৬দিনে এই বৃদ্ধি ঘটেছে।
কোভিড ১৯ রোগে পুরুষের মৃত্যুহার মহিলাদের চেয়ে বেশি কেন?
তৃতীয় পর্যায়ে ভারত এই প্রকোপ বৃদ্ধির হার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলেছে, ৩০০০ থেকে ৬০০০-এ যেতে সময় লেগেছে পাঁচদিন। আয়ারল্যান্ড, যাদের এই বৃদ্ধিতে ৮ দিন সময় লেগেছে, তারা ছাড়া বাকি দেশগুলিতে হয় ভারতের সমান, নয়ত ভারতের চেয়ে কম সময়ে এই বৃদ্ধি হয়েছে। স্পেনে মাত্র একদিনে এই বৃদ্ধি ঘটেছে।
চূড়ান্ত পর্যায়ের বৃদ্ধিতে ৬০০০ থেকে ১২০০০-এ পৌঁছতে ভারতের সময় লেগেছে মাত্র ৬দিন। মাত্র চারটি দেশে বৃদ্ধরি হার ভারতের চেয়ে কম। ইজরায়েলে, বৃদ্ধির হার তাৎপর্যপূর্ণভাবে কম, তাদের এই বৃদ্ধিতে সময় লেগেছে ১৩ দিন। অস্ট্রিয়ায় এই বৃদ্ধিতে সময় লেগেছে ১০ দিন, পর্তুগালে ৮ দিন, এবং আয়ারল্যান্ডে সাত দিন। অন্য যে দেশগুলিতে ভারতে চেয়ে দ্রুত হারে এই বৃদ্ধি ঘটেছে তার মধ্যে রয়েছে আমেরিকা, জার্মানি এবং চিন। তিনটি দেশেই মাত্র দু দিনে এই বৃদ্ধি ঘটেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন