রবিবার রাতে মুম্বইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে ফিলিপাইন্সের যে নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, তার তদন্ত করবে বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের একটি পর্যালোচনা কমিটি। তিনি প্রথমে বিএমসি পরিচালিত কস্তুরবা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তাঁর SARS-CoV-2 পরীক্ষার নেতিবাচক ফল পাওয়া যায়।
বিএমসি-র কমিটি খতিয়ে দেখবে যে তাঁর মৃত্যু কোভিড ১৯-এর কারণে হয়েছে নাকি তীব্র শ্বাসকষ্ট ও বৃক্কঘটিত সমস্যায় হয়েছে।
করোনায় মৃত রোগীর দেহ নিয়ে কী করতে হবে?
এই রোগীর ইতিহাস কী বলছে?
গত ৩ মার্চ ফিলিপাইন্সের ৯ জনের একটি দল মুম্বই পৌঁছয়। এই ব্যক্তি সে দলের সঙ্গে ছিলেন। তিনি ট্রেনে করে নয়া দিল্লি যান, সেখান থেকে ১০ মার্চ মুম্বই ফেরেন। ১২ মার্চ বিকেলে তাঁর শ্বাসকষ্টের উপসর্গ দেখা দেয়, তাঁকে এক স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৩ মার্চ তাঁর কোভিড ১৯ পরীক্ষার ইতিবাচক ফল পাওয়া যায় ও তাঁকে কস্তুরবা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ডায়াবেটিস ও অ্যাস্থমা ছিল তাঁর। তাঁর অবস্থা সংকটজনকই ছিল, রাখা হয়েছিল ভেন্টিলেটরে। এর মধ্যে তাঁর কিডনির সমস্যা শুরু হয়, এবং ডায়ালিসিসের জন্য তাঁকে বিএমসি-র বিওয়াইএল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়মমাফিক ফের তাঁর পরীক্ষাকরা হয়, এবং কয়েকদিন আগে তাঁর নাক ও গলার সোয়াব পরীক্ষা করা হয়। সে পরীক্ষায় দেখা যায় তাঁর নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ নেই।
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খেলে কোভিড ১৯ সারবে, কে বলল?
এর পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং কিডনির চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় একটি বেসরকারি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে। বিএমসির ডেপুটি একজিকিউটিভি হেলথ অফিসার ডক্টর দক্ষ শাহ বলেছেন, যেহেতু তাঁর পরীক্ষার ফল নেতিবাচক এসেছে ফলে ধরে নেওয়া যায় যে তাঁর করোনাজনিত কারণে মৃত্যু হয়নি।
এ বিষয়ে কেন আরও গবেষণা প্রয়োজন?
মূল প্রশ্ন হল, নাক ও গলার সোয়াব পরীক্ষাই কি ভাইরাসের সংক্রমণ নেই বলে ধরে নেবার পক্ষে যথেষ্ট? বা, শ্বাসযন্ত্রের নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমেই কি বলে দেওয়া চলে যে কোনও ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসের চিহ্ন নেই?
ল্যানসেট গ্যাসট্রোএন্টারোলজি অ্যান্ড হেপাটোলজির এক নয়া গবেষণায় দেখা যাচ্ছে কোনও রোগীর শ্বাসযন্ত্রের পরীক্ষার ফল নেতিবাচক হবার পরও তাঁর শরীরের মলে পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত করোনাভাইরাস থাকতে পারে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও ধূমপান
৭৪ জন রোগীর শ্বাসযন্ত্রের নমুনা ও মল পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে চিনের এক হাসপাতালে। ৫৫ শতাংশ ক্ষেত্রে শ্বাসযন্ত্রের নমুনায় প্রথম উপসর্গর ১৬.৭ দিন পরে ইতিবাচক ফল পাওয়া গিয়েছে, মলে তা পাওয়া গিয়েছে ২৭.৯ দিন পরে।
অর্থাৎ কোনও ব্যক্তির নাকের সোয়াব পরীক্ষার ফল নেতিবাচক হলেও তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস থাকতেই পারে।
৬৮ বছরের ফিলিপিন্সের নাগরিকের সঙ্গে এর সম্পর্ক কী?
এর অর্থ মৃতের শ্বাসযন্ত্রের পরীক্ষার ফল নেতিবাচক হলেও, তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস থাকতেই পারত। হতেই পারে, তাঁর বয়স, অ্যাস্থমা, ডায়াবেটিস ও কিডনির সমস্যার সঙ্গে এই ভাইরাস জুডে় তাঁর শরীরের হাল আরও খারাপ করে দিয়েছিল।
বিএমসির যে পর্যালোচনা কমিটি তৈরি হয়েছে, তার সদস্য ডক্টর ওম শ্রীবাস্তব বলেছেন, "লালা, অশ্রু, বীর্যে ভাইরাসের আরও পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। জিকা ভাইরাস বীর্যে ৯ মাস সক্রিয় থাকতে পারে।"
‘কোয়ারান্টাইন’ শব্দটা কোথা থেকে এল জানেন?
কস্তুরবা হাসপাতালের কোভিড ১৯ রোগীদের রক্ত, মূত্র ও বিষ্ঠা পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিট্যুট অফ ভাইরোলজিতে পাঠানো হচ্ছে।
বিএমসি-র প্যানেল এবার কী করবে?
কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন ফিলিপিনসের নাগরিকের বিষ্ঠা, মূত্র ও রক্ত পরীক্ষা করা হবে তাতে ভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে কিনা তা দেখার জন্য। এই কমিটিতে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ, ইনটেন্সিভ মেডিসিনের চিকিৎসক এবং পুর স্বাস্থ্য আধিকারিকরা রয়েছেন।
করোনাভাইরাস বাতাসেও ছড়াতে পারে, বলছে গবেষণা
এর আগে ডেঙ্গি ও H1N1 সংক্রমিত হয়ে মৃতদের ক্ষেত্রেও বিএমসি অনুরূপ ব্যবস্থা নিয়েছিল। একাধিক রোগ রয়েছে এমন রোগীর মৃত্যুর কারণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংক্রমণের কারণে হয়েছে কিনা তা বুঝতে পর্যালোচনা করেছিল তারা।
মহারাষ্ট্রের প্রথম কোভিড ১৯ সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছিল ৬৪ বছর বয়স্ক একজনের, যিনি দুবাই গিয়েছিলেন। মৃত্যুর একদিন আগে তাঁর পরীক্ষার ফলও নেতিবাচক এসেছিল। তা সত্ত্বেও তাঁর মৃত্যুকে করোনাজনিত মৃত্যু বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে, কারণ দ্বিতীয় পরীক্ষার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। সরকারি নিয়ম হল কোনও সংক্রমিত ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুবার পরীক্ষা করতে হবে তাঁর শরীরে ভাইরাস রয়েছে কিনা তা জানার জন্য।
৬৮ বছরের ফিলিপিনসের নাগরিকের মৃত্যুর আগে দুবার পরীক্ষা করেই তাঁর শরীরে সংক্রমণ নেই বলে ঘোষণা করা হয়।