/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/04/cov2-sars.jpg)
কলকাতার এক কোয়ারান্টাইন কেন্দ্র। ছবি: পার্থ পাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
Coronavirus (COVID-19): সারা পৃথিবী জুড়েই এখনও অব্যাহত করোনাভাইরাসের দাপট, গৃহবন্দি কোটি কোটি মানুষ। তার মধ্যেই এখন বিভিন্ন দেশের সরকারের চিন্তা, কীভাবে লকডাউন তুলে নিয়ে কিছুটা হলেও স্বাভাবিকত্ব ফেরানো যায়। ভ্যাকসিন তৈরি হতে অন্তত আরও ১২ থেকে ১৮ মাস, ইত্যবসরে বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের যা ভাবিয়ে তুলেছে, তা হলো মহামারী (বা অতিমারী)-পরবর্তী পর্যায় কীভাবে সংক্রমণ ঘটবে SARS-CoV-2 ভাইরাসের, এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কী কী প্রয়োজন হতে পারে।
মহামারীর প্রাথমিক, এবং সবচেয়ে তীব্র ধাক্কা সামলে ওঠার পর কী হতে পারে, তাই আলোচিত হয়েছে 'সায়েন্স' পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণাপত্রে।
মহামারীর পর: কী বলছে গবেষণা
দুটি সম্ভাবনা নজরে এসেছে গবেষকদের। এক, জনস্বাস্থ্য ভিত্তিক পদক্ষেপের মাধ্যমেই উৎপাটিত হবে SARS-CoV-2 অর্থাৎ COVID-19 অর্থাৎ করোনাভাইরাস। ঠিক যেমন ভাবে হয়েছিল SARS-CoV-1, যা জিনগত দিক থেকে বর্তমান ভাইরাসের ঘনিষ্ঠতম। তবে জনস্বাস্থ্য আধিকারিকরা এই সম্ভাবনার ওপর খুব একটা ভরসা করছেন না।
দুই, ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর সংক্রমণের পথেই চলবে এই ভাইরাসও। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী সংক্রমণের ঢেউ থিতিয়ে এলে ঋতুকালীন অসুখে পরিণত হবে তা। গবেষকরা মনে করছেন, এর পর থেকে শীতকালে নিয়ম করে হানা দেবে COVID-19।
তবে মহামারী-পরবর্তী সময়ে SARS-CoV-2 ভাইরাসের সংক্রমণ নির্ভর করবে কিছু শর্তের ওপর। প্রথমত, আদৌ ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ধরন বদলাবে কিনা, তার ওপর। গ্রীষ্মের দাবদাহে করোনাভাইরাস মরতে পারে কিনা, তা জানতে পড়ুন আমাদের এই বিশ্লেষণ।
দ্বিতীয়ত, এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি তৈরি হলেও তা স্থায়ী কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বলার অর্থ হলো, একবার SARS-CoV-2 আক্রান্ত হলে ফের একবার তার শিকার হওয়া পর্যন্ত কতটা সময় অতিবাহিত হবে, তা এখনও অজানা। যদি স্বল্পমেয়াদী ইমিউনিটি হয় (৪০ সপ্তাহ), যেমনটা দেখা গিয়েছে HCoV-OC43 এবং HCoV-HKU1 ভাইরাসের ক্ষেত্রে, তবে প্রতি বছর একবার হানা দেবে করোনাভাইরাস, বলছেন গবেষকরা। তবে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘমেয়াদী ইমিউনিটি (আন্দাজ দু'বছর) গড়ে উঠলে সেই হামলার সময়সীমা হয়ে যাবে দু'বছর।
আরও পড়ুন: কোভিড ১৯ রোগে পুরুষের মৃত্যুহার মহিলাদের চেয়ে বেশি কেন?
তৃতীয়ত, গবেষকরা SARS-CoV-2 এবং করোনাভাইরাস গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে 'ক্রস ইমিউনিটি'র বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন। 'ক্রস ইমিউনিটি'র অর্থ হলো, কোনও এক ধরনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে অন্যান্য করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি গড়ে ওঠার সম্ভাবনা। উদাহরণস্বরূপ, SARS-CoV-1 এ আক্রান্ত রোগী সাধারণভাবে HCoV-OC43 (যা থেকে সাধারণত সর্দি হয়) ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি উৎপাদন করতে সক্ষম। একইভাবে, HCoV-OC43 ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হলে SARS-CoV-1 এর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।
অন্যান্য করোনাভাইরাস, যেমন SARS-CoV-1 এবং MERS-এর তুলনায় মৃদু মনে হতে পারে SARS-CoV-2 ভাইরাসকে, তবে HCoV-OC43 এবং HCoV-HKU1-এর তুলনায় এর তীব্রতা বেশি। SARS-CoV-2 ভাইরাসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে যা বেগ দিচ্ছে, তা হলো প্রাথমিক ধাপে মৃদু উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর অতিরিক্ত ছোঁয়াচে প্রকৃতি।
শেষমেশ, প্রতিষেধক পদক্ষেপ কতটা শক্তিশালী এবং সময়োপযোগী, তার ওপরেও নির্ভর করবে এই ভাইরাসের ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি।
এই সমস্ত বিষয় মাথায় রেখেই গবেষকরা বলছেন, যে ভবিষ্যতের সবরকম সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে যথেষ্ট সুদূরপ্রসারী প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে SARS-CoV-2 ভাইরাসের। তাঁদের বক্তব্য, শীতকালীন/বসন্তকালীন প্রাদুর্ভাব হবে অপেক্ষাকৃত মৃদু, আবার হেমন্ত/শীতের প্রাদুর্ভাব হবে আরও তীব্র।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/04/PP-18-ROAD-BLOCK-06.jpg)
এর অর্থ কী?
সোজা কথায়, SARS-CoV-2 এর বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী ইমিউনিটি তৈরি হলে বড়সড় প্রাদুর্ভাবের পর পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় কার্যত উধাও হয়ে যেতে পারে সে। তবে অপেক্ষাকৃত স্বল্পমেয়াদী ইমিউনিটির ক্ষেত্রে, ধরুন দু'বছর, এবং HCoV-OC43 এবং HCoV-HKU1-এর থেকে কিছুমাত্রায় 'ক্রস ইমিউনিটি' গড়ে উঠলে তিন বছর পর্যন্ত রুখে দেওয়া যেতে পারে এর সংক্রমণ, যার পর, ২০২৪ নাগাদ ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে COVID-19।
গবেষকরা অবশ্য এও বলছেন, মহামারী-পরবর্তী সময় সংক্রমণের ধরন যাই হোক না কেন, বর্তমান সঙ্কট কাটাতে "জরুরি পদক্ষেপ" গ্রহণ করা প্রয়োজন, যার মধ্যে অন্যতম হলো 'non-pharmaceutical interventions' (NPI), বা 'চিকিৎসা-বহির্ভূত হস্তক্ষেপ', যেহেতু ভ্যাকসিন তৈরি হতে এখনও অনেক দেরি। NPI-এর একটি উদাহরণ হলো সামাজিক দূরত্ব বা সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং, যা এখন বহু দেশেই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গবেষকদের সম্ভাব্য মডেল বলছে, একবার সামাজিক দূরত্ব-বিধি শিথিল করলে সংক্রমণের তীব্রতা বাড়বে। তবে তাঁদের বক্তব্য, "সাময়িক সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং-এর মেয়াদ এবং কঠোরতা বাড়ালেই যে মহামারীর শক্তি বেশি মাত্রায় হ্রাস পাবে, এমন সংযোগ এখনও পাওয়া যায় নি"।
তবে একথা ঠিক, এই রোগের বিরুদ্ধে ইমিউনিটিই ঠিক করে দেবে যে এই ভাইরাসের মৃত্যু ঘটবে, নাকি তা বছরে বা দু'বছরে একবার ফিরে ফিরে আসবে।
আরও পড়ুন: কোভি়ড ১৯ চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার ওষুধ দেওয়া কি উচিত?
এছাড়াও এককালীন সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং হলে মহামারীর তুঙ্গে থাকার সময়কাল দীর্ঘায়িত হতে পারে, তবে নিয়মিত সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং লাগু হলে বিভিন্ন আপৎকালীন ব্যবস্থাকে তাদের বর্তমান স্তরেই রাখা যেতে পারে। গবেষকরা বলছেন, "দূরত্ব লাগু করার সঠিক সময় এবং আপৎকালীন ব্যবস্থার ওপর যাতে বেশি চাপ সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক হারে নজরদারি প্রয়োজন"।
এছাড়াও, নিয়মিত সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং-এর পাশাপাশি চালিয়ে যেতে হবে 'কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং' এবং কোয়ারান্টাইনের প্রচেষ্টা।
রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে বুঝতে হবে SARS-CoV-2'র বিরুদ্ধে ইমিইউনিটি'র শক্তি এবং স্থায়িত্ব, যা নির্ধারণ করবে মহামারী-পরবর্তী পরিস্থিতি।
এছাড়াও "ব্যাপক নজরদারির" সাহায্যে রূপায়িত করতে হবে নিয়মিত কার্যকরী সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং, এবং প্রস্তুতি রাখতে হবে এই সম্ভাবনার যে ২০২৫ সালেও ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে এই ভাইরাস, "দীর্ঘকাল আপাতদৃষ্টিতে উধাও হয়ে যাওয়ার পরেও"।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন