Advertisment

“ভ্যাকসিন তৈরির আগে আন্তর্জাতিক স্তরে লভ্যতার চুক্তি হওয়া উচিত”

 পোলিও, হাম, কলেরা, এইচপিভি, ইয়েলো ফিভার বা মেনিনজাইটিসের  টিকাকরণ গরিব দেশগুলিতে স্থগিত হয়ে গিয়েছে। এর ফলে অন্তত ১৩.৫ মিলিয়ন মানুষ ভ্যাকসিন পেতেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Coronavirus Vaccine

ভ্যাকসিন তৈরি করা সময়সাপেক্ষ ও সম্পদ-নিবিড় প্রক্রিয়া

বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের অংশীদার গাভি - দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সিইও ডক্টর শেঠ বার্কলে। এঁরা ভ্যাকসিন যাতে আরও ভালভাবে ও সমপরিমাণে বণ্টিত হয়, এঁরা সে ব্যাপারে দেখভাল করে থাকেন। গাভি পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশগুলির ৭৬০ মিলিয়ন শিশুকে ভ্যাকসিন পেতে সাহায্য করেছে। ই মেলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রসকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি।

Advertisment

 কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের খোঁজে বিজ্ঞান কতটা এগিয়েছে এবং গাভির ভূমিকা কী?

ভ্যাকসিন তৈরি করা সময়সাপেক্ষ ও সম্পদ-নিবিড় প্রক্রিয়া। সাধারণত নতুন ধরনের ভ্যাকসিন তৈরি, চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতি এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়ায় ১০-১৫ বছর লাগে। যেরকম অভূতপূর্ব উপায়ে সারা পৃথিবীতে একসঙ্গে কাজ ও তথ্যের আদানপ্রদান হচ্ছে, তাতে সম্ভাব্য প্রকোপের প্রতিরোধী ভ্যাকসিন তৈরিতে প্রাথমিকভাবে দেড় থেকে দু বছর সময় লাগবে। তেমনটা ঘটলে আগের যে কোনও ভ্যাকসিন তৈরির সঙ্গে তুলনায় তা হবে অবিশ্বাস্য, এবং যেসব প্রকল্প পাইপলাইনে রয়েছে তার উপর নির্ভর করে বলা যায়, সে জন্য সৌভাগ্যেরও প্রয়োজন রয়েছে।

মোবাইল ফোন থেকে করোনা সংক্রমণ- ইঙ্গিত দিচ্ছে গবেষণা

সার্স কোভ ২ ভ্যাকসিন তৈরি ও ডেলিভারির প্রতিটি পর্যায়ে গাভি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে প্রস্তুত। জটিল ভ্যাকসিনের লভ্যতার বিষয়ে ইবোলা ভ্যাকসিনের ক্ষেত্র সহ  আমাদের আগের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা হু, কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস, এবং অন্যদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি যাতে ভ্যাকসিনের গ্রহীতাদের অগ্রাধিকার স্থির করা যায়, একই সঙ্গে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে লভ্যতার ন্যায্যতার দিকটিতেও।

গাভির উদ্ভাবনী আর্থিক উপায়গুলিও রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স ফেসিলিটি ফর ইমিউনাইজেশনের মাধ্যমে গাভির ভ্যাকসিন বন্ড পাওয়া যাচ্ছে।

ইবোলা ভ্যাকসিনের তিন লক্ষ ডোজ যখন পরীক্ষামূলক পর্যায়ে ছিল তখন গাভির সহায়তায় আগে থেকে ক্রয়ের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছিল, কিন্তু তা সম্পূর্ণ লাইসেন্স পাবার আগে... এ ধরনের প্রয়াস প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বা স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য নেওয়া যেতে পারে।

ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে গেলেই কি করোনার সঙ্গে যুদ্ধমুক্তি ঘটবে?

১০০ রও বেশি ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে, বিজ্ঞান ও শিল্পমহলের কাছ থেকে অভাবিত সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু অবশ্যই ভ্যাকসিন তৈরিই শেষ কথা নয়। ভ্যাকসিন সরবরাহের আন্তর্জাতিক বিষয় দেখভাল করার মত কোনও ব্যবস্থা নেই এবং যেসব দেশ বহু পরিমাণ ভ্যাকসিন বানাতে সক্ষম হবে, তাদের উপর চাপ থাকবে নিজেদের দেশের মানুষের ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেওয়ার। কোনও ভ্যাকসিন তৈরি হওয়ার আগে আন্তর্জাতিক স্তরে তার লভ্যতার বিষয়ে চুক্তি হওয়া উচিত।

আমার কাছে এর দুটো দিক রয়েছে। জনস্বাস্থ্য- যদি পৃথিবীর কোথাও রোগের প্রকোপ মাত্রাছাড়া হয়, তাহলে তা সে দেশের নয়, সারা পৃথিবীর কাছেই বিপদ। দ্বিতীয়ত অগ্রাধিকারের ব্যাপারেও চুক্তি হওয়া উচিত- স্বাস্থ্যকর্মীরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এর পর বয়স্কদের মত ঝুঁকিপ্রবণ এবং তারপর সমস্ত মানুষ।

করোনাভাইরাসের মৃত কণা কীভাবে পরীক্ষার ফলকে প্রভাবিত করতে পারে?

 কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে রুটিন ইমিউনাইজেশন ও টিকাকরণ কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে বলে কি আপনার আশঙ্কা?

কোভিড-১৯ আমাদের মনে করিয়ে দিল যে সংক্রামক রোগের কোনও সীমান্ত নেই এবং নতুন ধরনের প্যাথোজেন তৈরি হওয়া অভিযোজনের এক অবশ্যম্ভাবী ফল। যেসব দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা পিছিয়ে, সেখানে এর ফল মারাত্মক হতে পারে, দেশের মধ্যে এবং দেশীয় সীমান্তেও। প্রস্তুত থাকা এবং দ্রুত চিহ্নিতকরণ, অর্থাৎ প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও ইমিউনাইজেশনে বিনিয়োগ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তার প্রথম ধাপ বললে অত্যুক্তি হবে না।

আমরা ইতিমধ্যেই অতিমারীর প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। গাভি যেসব টিকাকরণ কর্মসূচিতে সহায়তা করে, যেমন পোলিও, হাম, কলেরা, এইচপিভি, ইয়েলো ফিভার বা মেনিনজাইটিসের  টিকাকরণ গরিব দেশগুলিতে স্থগিত হয়ে গিয়েছে। এর ফলে অন্তত ১৩.৫ মিলিয়ন মানুষ ভ্যাকসিন পেতেন। এই টিকাহীন মানুষের সংখ্যা আগামী মাসগুলিতে আরও বাড়বে কারণ প্রয়োজনীয় কর্মীদের অন্যত্র নিযুক্ত করা হয়েছে।

এই ঝুঁকির সঙ্গে বিভিন্ন দেশ কীভাবে মানিয়ে নেবে?

এখন সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত রুটিন টিকা চালু করা এবং কোভিড-১৯-এর জন্য ব্যাপক পরিমাণ জনস্বাস্থ্য নীত গ্রহণ করা। রুটিন টিকাকরণ ছাড়া আমরা ভ্যাকসিন দ্বারা প্রতিরোধযোগ্য রোগের সম্ভাব্য প্রকোপের মুখে পড়তে পারি, যা এই কোভিড সময়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেবে।

পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মৃত্যু নিয়ে সংশয় ও উদ্বেগের কারণ বাড়ছে

আরও একটা কথা মনে রাখতে হবে, যে রুটিন টিকাকরণ পদ্ধতি চালু থাকলে মানুষ স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে আসেন, ফলে তাঁদের মধ্যে নতুন রোগ থাকলে তা ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেশি। এর ফলে তাঁরা প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী, পরিসংখ্যান, রোগের উপর নজরদারি এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রাথমিক ল্যাবরেটরি টেস্টিংয়ের মত একটা শৃঙ্খলে আসতে পারবেন।

রুটিন টিকাকরণ ছাড়াও আমরা মনে করি আন্তর্জাতিক মহামারীর প্রস্তুতির জন্য মজুত একটা বড় বিষয়। গাভি কলেরা, ইয়েলো ফিভার, ইবোলার মত ভ্যকাসিন মজুতের ব্যাপারে সহায়তা করে, যাতে রোগের প্রকোপ দেখা দিলে আমরা সেই জনগোষ্ঠীর মধ্যে দ্রুত ভ্যাকসিন দিতে পারি এবং রোগ ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এই আপৎকালীন মজুতের মাধ্যমে প্রয়োজনে দ্রুত ভ্যাকসিন দেওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়া যায়, যা শুধু যে দেশে রোগ ছড়িয়েছে সেখানকার জন্য নয়, সারা বিশ্বের জন্যই প্রয়োজনীয়।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus COVID-19
Advertisment