পশ্চিমবঙ্গে বৃহ্স্পতিবার ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। একদিনে এত মৃত্যু এর আগে হয়নি। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ৩৩। কিন্তু তার চেয়েো গুরুত্বপূর্ণ যে তথ্য সরকার জানিয়েছে, তা হল আরও ৭২ জন করোনাভাইরাস রোগীর মৃত্যু হয়েছে, যা গোনা হচ্ছে না।
তার কারণ হল রাজ্য সরকারের নিয়োগ করা বিশেষজ্ঞ কমিটি জানিয়েছে যে এই ৭২ জন আগেই অন্য রোগে ভুগছিলেন এবং তাঁদের মৃত্যুর প্রাথমিক কারণ নভেল করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ নয়।
করোনাভাইরাসের মৃত কণা কীভাবে পরীক্ষার ফলকে প্রভাবিত করতে পারে?
বৃহস্পতিবারের রাজ্য সরকার বুলেটিনে জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয় সংক্রমণের সংখ্যা ৫৭২। আরও ১৩৯ জন রোগমুক্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ও ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে রাজ্যে করোনাক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৭৪৪। কিন্তু যেহেতু অন্য যে ৭২ জন মারা গিয়েছেন, যাঁদের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছিল, তাঁদের সক্রিয় সংক্রমিতদের মধ্যেও ফেলা যাচ্ছে না, বা যাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যেও ফেলা যাচ্ছে না, ফলে বৃহস্পতিবার সন্ধে অবধি রাজ্যে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিতের সংখ্যা ৮১৬।
৮১৬ জন নিশ্চিত সংক্রমিতের মধ্যে ১০৫ জনের মৃত্যুর ফলে রোগে মৃত্যুর হার দাঁড়াল ১৩ শতাংশে যা অন্য যে কোনও রাজ্যের তুলনায় বেশি। দেশের সবচেয়ে খারাপ হাল যে রাজ্যের, সেই মহারাষ্ট্রে ১০৪৯৮ জন সংক্রমিতের মধ্যে ৪৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, অর্থাৎ সেখানে রোগে মৃত্যুহার ৪ শতাংশ। একইভাবে গুজরাটে ৪৩৯৫ জন সংক্রমিতের মধ্যে ২১৪ জনের মৃত্যুর ফলে সেখানে এই হার ৫-এর কম।
জাতীয় পর্যায়ে রোগে মৃত্যুহার মাত্র ৩ শতাংশ। বৃহস্পতিবার দেশে মোট ১৯৭৮টি সংক্রমণ ধরা পড়ায় নিশ্চিত সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪,৯৪৯-এ। মৃত্যুর সংখ্যা ১১২০ অতিক্রম করেছে।
রোগে মৃত্যুহার (Case Fatality Rate বা CFR)-এর নিখুঁত হিসেবের জন্য বিজ্ঞানীরা জনসংখ্যার মোট সংক্রমিতের সঙ্গে মৃত্যুর অনুপাত দেখেন, শুধু যাঁরা সংক্রমিত তাঁদের হিসেব নয়।
ভাইরাস কার্ভে লকডাউনের প্রভাব
যেহেতু ভারতের মত দেশে সমস্ত জনগণের পরীক্ষা অসম্ভব, ফলে মোট সংক্রমিতের বিশ্বাসযোগ্য সংখ্যা একমাত্র মহামারী শেষেই পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সে সংখ্যা অবশ্যম্ভাবী ভাবেই যাঁরা পজিটিভ এসেছেন তাঁদের তুলনায় বেশি, এবং এ ক্ষেত্রে CFR অবশ্যই নিশ্চিত সংক্রমণে মৃত্যুর অনুপাতের চেয়ে কম হবে।
এমনটা হতেই পারে যে পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমিতের সংখ্যা যা জানা যাচ্ছে, তার তুলনায় বেশি এবং এ রাজ্যে যথেষ্ট পরিমাণ পরীক্ষা হচ্ছে না। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ১৬৫২৫ জনের। এমনকি পাঞ্জাব ও জম্মু-কাশ্মীরের চেয়েও এ সংখ্যা কম, এবং এই দুই রাজ্যেই সংক্রমণের সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় কম।
কিন্তু সংক্রমণের সংখ্যা যদি পশ্চিমবঙ্গে বেশিও হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রেও রোগে মৃত্যুর ন্যূনতম হার ১৩ শতাংশ যথেষ্ট বেশি। গত কয়েকদিন ধরেই আমরা বলে আসছি এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে করোনাসংক্রমণ বৃদ্ধি হার সবচেয়ে বেশি। এ রাজ্যে রোগে দ্বিগুণত্বের হার, দিনের হিসেবে এই মুহূর্তে দেশে সবচেয়ে কম।
সে কারণেই বিজ্ঞানীরা বলছেন পশ্চিমবঙ্গে প্রকাশিত সংখ্যা মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের তুলনায় কম হলেও এ রাজ্য আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সম্ভাব্য বিপজ্জনক এলাকায় পরিণত হতে চলেছে।
অন্যদিকে পাঞ্জাবে একদিনে সবচেয়ে বেশি করোনাসংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, সৌজন্য মহারাষ্ট্রের নান্দেড থেকে ফেরা একদল তীর্থযাত্রী যাঁরা ভাইরাস সংক্রমিত।
শিখদের অন্যতম মহাতীর্থ নান্দেডে লকডাউনে আটকে পড়েছিলেন ২০০০-এর বেশি শিখ তীর্থযাত্রী। পাঁচদিন আগে তাঁদের জীবাণুমুক্ত চার্টার্ড বাসে করে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা হয়। তার পর থেকে আরও অনেককে পাঞ্জাবে নিয়ে আসা হচ্ছে। ফেরার পর তাঁদের পরীক্ষা করা হলে অনেকের মধ্যেই সংক্রমণ দেখতে পাওয়া গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধে পর্যন্ত ১৮৩ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে, একদিনে পাওয়া গিয়েছে ১৪৯ জনের সংক্রমণ। আরও অনেকের টেস্টের ফল আসার অপেক্ষা চলছে।
এর ফলে বুধবার যে পাঞ্জাবে সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৩৭৫, তা বৃহস্পতিবার বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪২-এ। এই গ্রুপের মধ্যে সংক্রমণের ফলে পাঞ্জাব ও নান্দেড দু জায়গাতেই নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে, আশঙ্কা করা হচ্ছে এখানকার ঘটনাও মধ্য-মার্চের দিল্লির তবলিঘি জামাতের মত বিশাল রোগ ছড়ানোর ঘটনা হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন