৯ এপ্রিল নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর সারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বৃদ্ধির কার্ভ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায় প্রকাশিত হয়েছিল। দেখানো হয়েছিল, ৭ এপ্রিল পর্যন্ত একমাসের সামান্য বেশি সময়ে জাতীয় স্তরে ও বেশ কিছু রাজ্যের ট্র্যাজেকটরি সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক এক্সপোনেনশিয়াল কার্ভের দিকে যেতে শুরু করেছে।
জাতীয় পর্যায়ের লকডাউন শেষ হওয়ার এক সপ্তাহও আর বাকি নেই। পরবর্তী কনটেনমেন্ট কৌশলও তৈরি হবে। তার আগে আমরা আরেকবার বৃদ্ধির বর্তমান কার্ভের দিকে তাকাব, দেখার চেষ্টা করব লকডাউনের প্রভাব কী বা অন্তত এই পর্যায়ে কী ঘটেছে।
জাতীয় পর্যায়ের লকডাউন শুরু হয় ২৩ মার্চের মধ্যরাত খেকে, যাকে মানবেতিহাসের বৃহত্তম কোয়ারান্টিন বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এর লক্ষ্য ছিল মহামারীর বৃদ্ধি হার শ্লথ করা, যাতে যেসব রোগীর আপৎকালীন চিকিৎসা পরিষেবা প্রয়োজন তাঁদের তদারকি করা যায় এবং সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি ঘটাতে পারে যাতে পরবর্তী পর্যায়ে বেশি সংখ্যক মানুষ অসুস্থ হলে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এই পর্যায় যখন শেষ হতে চলেছে, তখন দেখা যাচ্ছে, লকডাউন মহামারীর গতি তাৎপর্যপূর্ণভাবে শ্লথ করতে পেরেছে।
লকডাউন যে রোগ ছড়ানোর গতি শ্লথ করার ব্যাপারে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে আমার মনে হয়না সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ রয়েছে, বললেন চেন্নাইয়ের ইন্সটিট্যুট অফ ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্সেসের বিজ্ঞানী সিতাভ্র সিনহা। তিনি কম্পিউটার মডেলিংয়ের মাধ্যমে ভারতে মহামারী ছড়ানোর বিষয়ে গবেষণা করছেন।
গত ১২ এপ্রিল সিতাভ্র সিনহা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছিলেন, তিনি ও তাঁর সহকর্মী সৌম্য ঈশ্বরণের গবেষণা অনুসারে ২০ এপ্রিলের সংক্রমিতের সংখ্যা ২০ হাজারের নিচে থাকবে। তিনি বলেন, এটা ঘটবে লকডাউনের সরাসরি প্রভাবে, যা না হলে, কম্পিউটার মডেলিংয়ের হিসেবে সংখ্যাটা দাঁড়াত ৩৫ হাজারে। ২০ এপ্রিল সারা ভারতে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছিল ১৮৪৬৫-তে, যা তাঁর অনুমানকে সঠিক প্রমাণ করে।
সংখ্যার হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ কেন উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে?
এখানে যে রিপ্রোডাকশন সংখ্যা (R)-এর উল্লেখ করা হয়েছে, তার দ্বারা একজন সংক্রমিত মানুষ কতজনকে সংক্রমিত করতে পারেন, সে ব্যাপারে সিতাভ্র সিনহাদের দলের করা গড় হিসেব বোঝানো হয়েছে।
বিভিন্ন রাজ্যের আগের বারের করা গ্রোথ কার্ভে ব্যাপক বদল পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিছু রাজ্য, যেমন কেরালা মহামারী নিয়ন্ত্রণে খুব ভাল ভূমিকা প্রদর্শন করে তাদের প্রচেষ্টার জন্য বিশ্বের প্রশংসা পেয়েছে, তেমনই মহারাষ্ট্র ও দিল্লির মত কিছু রাজ্যে সংখ্যা বৃদ্ধি প্রায় একইভাবে ঘটতে থেকেছে।
কিছু রাজ্য, যেমন গুজরাটে, সেই সময়ে সংক্রমিতের সংখ্যা যথেষ্ট কম ছিল, যা দ্রুত বৃদ্ধিশালী হটস্পটে পরিণত হয়েছে। এবং পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের মত রাজ্যগুলির সংখ্যা এমন সংকেত বয়ে নিয়ে আসছে, যা থেকে মনে হচ্ছে, এখন সংখ্যা তত বেশি না হলেও আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এ জায়গাগুলি মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন