Advertisment

বিশ্লেষণ: কর্পোরেট করে ছাড় ও তার প্রভাব

সরকারি হিসেবে দেখা যাচ্ছে যে কৃষি ও উৎপাদনের মত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কর্মীদের আয় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ ছাড়া দেশে কর্মহীনতা বাড়ছে। এর ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে এবং সে কারণেই তাঁরা কম কেনাকাটা করছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Nirmala Sitharaman

ফাইল ছবি

গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুনিয়ার লগ্নিকারীদের কাছে ভারতে আসার আহ্বান করেছেন। এদিকে দেশে সরকার আর্থিক বৃদ্ধির ক্রমহ্রাসমানতা আটকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ করেছে।

Advertisment

কর্পোরেট করে ছাড় এর মধ্যে সবচেয়ে বদল- যার মধ্যে রয়েছে সেস ও সারচার্জ। সেস ও সারচার্জ সহযোগে হারের পরিমাণ ৩৫ শতাংশ থেকে কমে প্রায় ২৫ শতাংশ হয়েছে। সেস ও সারচার্জ বাদ দিয়ে হিসেব করলে করের পরিমাণ ৩০ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশ হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলিকে নতুন ব্যবসার জন্য ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে বলার পাশাপাশি সরকার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ ধরনের ঋণের খরচ কমানোর জন্য আর্থিক নীতিতে বদল ও সুদের হার কমানোর কথা বলছে।

নীতির প্রেক্ষিত থেকে দেখলে এ পরিস্থিতি সম্পদ সৃষ্টিকারীদের পক্ষে সুবিধাজনক, যেমনটা স্বাধীনতা দিবসের দিন প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেছিলেন।

আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: কেন পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করতে হল কেন্দ্রকে

সরকার কর হারে ছাড় দিল কেন?

কর্পোরেট করে ছাড় অনেকটাই ব্যক্তিগত স্তরে আয়কর ছাড়ের মতই। সংক্ষেপে বললে, নিম্ন হারের কর্পোরেট করের অর্থ ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি টাকা থেকে যাবে, অর্থাৎ তাঁদের লাভের পরিমাণ বাড়বে। তালিকার ১ ও ২ নং হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ভারতের কর্পোরেট কর প্রতিবেশী দেশগুলির তুলনায় বেশি ছিল। কম করহার শুধু কর্পোরেটদের লাভের পরিমাণই বাড়াবে না, এর ফলে ভারত লগ্নির পক্ষে প্রতিযোগিতার বাজারও তৈরি করবে।

এর ফলে আর্থিক ক্ষেত্রে কী প্রভাব পড়বে?

করহারের তিনটি বড় প্রভাব রয়েছে।

প্রথমত, তাৎক্ষণিকভাবে কর্পোরেটদের হাতে বেশি টাকা থাকবে, যা তাঁরা বর্তমান সংস্থায় ফের লগ্নি করতে পারেন বা অন্য কোনও লাভজনক সংস্থাতেও বিনিয়োগ করতে পারেন। কিন্তু এমন সম্ভাবনাও রয়েছে যে তাঁরা এই অর্থ পুরনো ঋণ মেটাতে খরচ করতে পারেন বা শেয়ারহোল্ডারদের বেশি লভ্যাংশ দিতে পারেন এই অর্থে। সংস্থা ফের বিনিয়োগ করবে কিনা তা নির্ভর করবে আর্থিক পরিস্থিতির উপর।

publive-image সূত্র- AceEquity, CARE Ratings

বিনিয়োগ নির্ভর করে একটি নির্দিষ্ট অর্থনীতির ভোগের মাত্রার উপর। যদি উপভোক্তা চাহিদা, ধরা যাক গাড়ির ক্ষেত্রে বেশি থাকে, তাহলে সংস্থা সেখানে খুশি হয়েই বিনিয়োগ করবে। আবার ধরা যাক, চকোলেটের চাহিদা নেই, তাহলে সেই সেক্টরে বিনিয়োগ করতে সংস্থা উৎসাহী হবে না। তবে যাই হোক না কেন, যদি সব মিলিয়ে আয় কম থাকে ও তার জন্য ভোগের মাত্রাও কম থাকে, এবং কোম্পানিগুলির বহু পরিমাণ অবিক্রিত পণ্য থাকে, তাহলে নতুন লগ্নি হবে না।

দ্বিতীয়ত, মাঝারি থেকে দীর্ঘ মেয়াদে, এক-দুই থেকে পাঁচ বা বেশি বছরের মেয়াদে কর্পোরেট করে ছাড় লগ্নিতে উৎসাহ দেবে এবং অর্থনীতির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। তার কারণ হল, চাহিদায় স্বল্পমেয়াদী মন্দা থাকলেও, বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় দীর্ঘমেয়াদি চাহিদা সম্পর্কিত অনুমানের উপর নির্ভর করে। চাহিদা যদি বাড়ে, তাগলে লগ্নি ফলদায়ক হবে এবং কম কর দিতে হলে লাভের পরিমাণ বাড়বে। এই বিনিয়োগ চাকরি তৈরি করবে এবং নির্দিষ্ট সময়ে আয়ের বৃদ্ধি ঘটাবে।

তবে কর্পোরেট করে ছাড় আর্থিক সক্রিয়তা কমাবেও, কারণ সরকারের হাতে করের দরুন আয় কমে আসবে। এই অর্থ যদি সরকারের হাতে থাকত, তাহলে তা হয় বেতন দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হত, নয়ত সড়কের মত নতুন উৎপাদনক্ষম সম্পদ সৃষ্টি হত। যে ভাবেই হোক না কেন অর্থ সরাসরি যেত উপভোক্তার হাতে, বিনিয়োগকারীর হাতে নয়।

আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও গ্লোবাল গোলকিপার অ্যাওয়ার্ড

তাহলে কর ছাড় কি এ বছর আর্থিক বৃদ্ধিতে গতি আনবে?

এরকমটা বলা শক্ত। কর্পোরেট করে ছাড় দিলেও এই আর্থিক বছরে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধি নিয়ে সমস্যা চলার সম্ভাবনাই বেশি। তার বেশ কিছু কারণ রয়েছে।

প্রথমত, সরকারি হিসেবে দেখা যাচ্ছে যে কৃষি ও উৎপাদনের মত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কর্মীদের আয় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ ছাড়া দেশে কর্মহীনতা বাড়ছে। এর ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে এবং সে কারণেই তাঁরা কম কেনাকাটা করছেন, যে কারণে কোম্পানিগুলির কাছে অবিক্রিত পণ্যের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি হয়ে পড়েছে।

তৃতীয় চার্টে ২৩৭৭ টি সংস্থার বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে কর্পোরেট করে যে ছাড় দেওয়া হয়েছে, তার ৪২ শতাংশ যাবে ব্যাঙ্কিং ও আর্থিক ও বিমা ক্ষেত্রের সংস্থাগুলির হাতে। কিন্তু এই সংস্থাগুলি খুব বেশি হলে অন্যদের ঋণ দিতে পারে- তারা সরাসরি বিনিয়োগ করতে পারে না বা উৎপাদন চালু করে দিতে পারে না। ফলে কর ছাড় তাদের আর্থিকভাবে বলশালী করলেও এর ফলে আর্থিক ক্রিয়াশীলতায় তাৎক্ষণিক সুফল নাও দিতে পারে। চার্টে অন্য যে সেকটরগুলি দেখা যাচ্ছে, সেই অটোমোবাইল বা তার অনুসারী সংস্থা, বিদ্যুৎ, এবং লৌহ ও ইস্পাত শিল্প ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত উৎপাদনসংকটে ভুগছে, ফলে তারা আর বিনিয়োগে উৎসাহী না হবার সম্ভাবনাই বেশি।

তৃতীয়ত, কর হারে ব্যাপক ছাড়ের কথা যতই বলা হোক না কেন, ইতিমধ্যেই সংস্থাগুলি ২৯.৫ শতাংশ কর্পোরেট কর দিয়ে ফেলছে- ২৫ শতাংশ নতুন করের হার তাদের পক্ষে মোটেই খুব বেশি ছাড় নয়, যেমনটা শুরুতে ভাবা হয়েছিল। ফলে ছাড়ের ইতিবাচক প্রভাব সীমাবদ্ধ থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েই যাচ্ছে।

তবে দীর্ঘমেয়াদে কর ছাড় আর্থিক গতিবিধিকে উজ্জীবিত করবে।

আরও পড়ুন, ভারতের ধনীদের সম্পদ কমল কেন?

আর্থিক ঘাটতির কী হল?

কর ছাড়ের কথা ঘোষণা করবার সময়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেছিলেন কর্পোরেট করে ছাড় দেবার ফলে সরকারের আয় কমবে ১৪.৫ লক্ষ কোটি টাকা, অর্থাৎ জাতীয় গড় উখপাদনের ০.৭ শতাংশ। এর সঙ্গে যদি বাজেটে উল্লিখিত জিডিপি-তে ৩.৫ শতাংশ আর্থিক ঘাটতি যুক্ত করা হয়, তাহলে সব মিলিয়ে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৪.২ শতাংশ।

কিন্তু এখানেও নেতিবাচক প্রভাব প্রথমে যেমনটা আশঙ্কা করা হয়েছিল তেমন নয়, যদিও আর্থিক ঘাটতির জন্য খরচ কমানোর সম্ভাবনা অর্থমন্ত্রী নাকচ করে দিয়েছেন।

এরও একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, কর ছাড়ের পরিমাণ আগে যেমন বলা হয়েছে, খুব বেশি না-ও হতে পারে। দ্বিতীয়ত, যে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, তার একটা বড় অংশ সরকারের কাছে লভ্যাংশ আকারে ফিরে আসবে, কারণ সরকারি সংস্থাগুলেও কম কর দিচ্ছে। তৃতীয়ত, যে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে তা প্রায় সমপরিমাণে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বণ্টিত হবে। সবচেয়ে বড় কথা, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ৫৮ হাজার কোটি টাকা ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত লভ্যাংশ দিয়ে দিয়েছে যা বাজেটে দেখানো ছিল না। শেষত, স্টক মার্কেটে গতি এবং সব মিলিয়ে ব্যবসা নিয়ে যে মনোভঙ্গি তার ফলে সরকার বিলগ্নিকরণ থেকে বেশি আয় করতে চলেছে।

এর ফলে আর্থিক ঘাটতি জিডিপি-র ৩.৭ শতাংশ ছাড়াবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

Read the Full Story in English

Nirmala Sitharaman
Advertisment