Advertisment

কোভিড ১৯: ফলস নেগেটিভ টেস্টের বিপদ

মেয়ো ক্লিনিকের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর প্রিয়া সম্পৎকুমার বলছেন, একটি নেগেটিভ টেস্ট মানেই ওই ব্যক্তির রোগ নেই এমন নয়, টেস্টের রেজাল্ট দেখতে হবে রোগীর বৈশিষ্ট্য ও এক্সপোজারের প্রেক্ষিত থেকে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

কোভিড ১৯ টেস্টের উপর অতিরিক্ত আস্থা প্রদর্শন করলে ক্লিনিকাল ও জনস্বাস্থ্য সিদ্ধান্তে সমস্যা হতে পারে

কিছু কোভিড ১৯ রোগী একবার সারার পর ফের আক্রান্ত হবার ঘটনায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। টেস্টের ফল নেগেটিভ আসবার কয়েকদিন পরে দ্বিতীয় পরীক্ষায় তাঁরা পজিটিভ হয়েছেন। পুনেতে বছর ষাটেকের এক মহিলা নেগেটিভ আসার তিন চারদিন পর মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন ও মারা যান।

Advertisment

এঁরা কি নতুন করে সংক্রমিত? ডাক্তারেরা সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন এবং বলছেন রোগীরা কোনও সময়েই সংক্রমণহারা হননি, তাঁদের পরীক্ষায় ভাইরাস ধরা পড়েনি। এগুলিকে তাঁরা বলছেন ফলস নেগেটিভ।

উপসর্গবিহীন কোভিড ১৯ রোগীদের চিকিৎসায় চিনের প্রোটোকল কী?

আন্টোয়ের্পের ইনস্টিট্যুট অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ডিরেক্টর ডক্টর মার্ক অ্যালান উইডোসন বলেন, কোনও ল্যাব টেস্টই ১০০ শতাংশ যথাযথ নয়। ফলস নেগেটিভ পরীক্ষা নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি বলেন, এ ধরনের পরীক্ষা খুবই সংবেদনশীলতার বিষয়।

এর কারণ হতে পারে সোয়াব ঠিকমত সংগ্রহ করা হয়নি বা টেস্ট ঠিকভাবে করা হয়নি, বা কোনও কোনও সময়ে তারা হয়ত নাকের এই জায়গায় ছিলই না। ফুসফুসে সংক্রমণ হলে নাকের সোয়াব থেকে তা ধরা নাও পড়তে পারে। সাধারণত নিশ্চিত হবার জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুবার সোয়াব নেগেটিভ হওয়া প্রয়োজন।

করোনা সংক্রমিতদের হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে কখন?

২০০৩ সালে ডক্টর উইডোসন এক গবেষণা দেখান, সার্সের ক্ষেত্রে নাকের সোয়াব নেগেটিভ ও বিষ্ঠা পজিটিভ হতে পারে, অর্থাৎ শরীরে ভাইরাস থেকে যেতে পারে যদি সে সময়ে নাকে তার উপস্থিতি না থেকেও থাকে।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের অধ্যাপক ডক্টর হারলান এম ক্রুমহোলজ নিউ ইয়র্ক টাইমসে মতামতের কলামে লিখেছেন, প্রথমবার গৃহীত সোয়াবের নমুনা পরীক্ষা যথাযথ না হতেও পারে। বিশেষ করে যাঁদের উপসর্গ বেশি নেই, তাঁদের এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সাবধানতার প্রয়োজন

মহারাষ্ট্রের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের সরকারি কমিটির চেয়ারম্যান ডক্টর সুভাষ সালুঙ্খে বলছেন ফলস নেগেটিভের হার কীরকম তা যেহেতু সকলের জ্ঞাত নয়, ফলে আমাদের ধরে নিয়ে এগোতে হবে সমস্ত রেজাল্টই নেগেটিভ।

ন্যাশনাল ইনস্টিট্যুট অফ ভাইরোলজির এক বিজ্ঞানীর কথায় টেস্টের জন্য গ়হীত নমুনা যথাযথ ভাবে না রাখা হলে বা না গ্রহণ করা হলে রেজাল্ট নেগেটিভ আসতে পারে।

“সমস্ত পরীক্ষাতেই ফলস পজিটিভ ও ফলস নেগেটিভ হয়। আমরা এ নিয়ে নিরন্তর যুদ্ধ করে চলি”। বলছিলেন এপিডেমিয়োলজিস্ট অধ্যাপক জয়প্রকাশ মুলিইল। তাঁর পর্যবেক্ষণ, কোনও একজন ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে ও তাঁর মৃত্যু হয়েছে মানেই সে মৃত্যু করোনাজনিত না-ও হতে পারে।

গলদ নিরাপত্তা

মেয়ো ক্লিনিক প্রসিডিংসের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা আরেকটি উদ্বেগের বিষয় প্রত্যক্ষ করেছেন- কোভিড ১৯ টেস্টের উপর অতিরিক্ত আস্থা প্রদর্শন করলে ক্লিনিকাল ও জনস্বাস্থ্য সিদ্ধান্তে সমস্যা হতে পারে।

মেয়ো ক্লিনিকের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর প্রিয়া সম্পৎকুমার বলছেন, একটি নেগেটিভ টেস্ট মানেই ওই ব্যক্তির রোগ নেই এমন নয়, টেস্টের রেজাল্ট দেখতে হবে রোগীর বৈশিষ্ট্য ও এক্সপোজারের প্রেক্ষিত থেকে।

ডায়াগনোস্টিক টেস্ট রেজাল্ট ও ফলস নেগেটিভ- দু ক্ষেত্রেই প্রমাণভিত্তির উপর জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের জোর দেওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন লেখকরা।

মেয়ো ক্লিনিকের চিকিৎসক ডক্টর কলিন ওয়েস্ট বলেছেন যাঁদের সত্যিই কম ঝুঁকি, তাঁদের ক্ষেত্রে নেগেটিভ রেজাল্ট যথেষ্ট হতে পারে। কিন্তু যাঁদের ঝুঁকি বেশি, তাঁদের উপসর্গ কম থাকলেও ফলস নেগেটিভের সম্ভাবনার জন্য তাঁদের ক্ষেত্রে সেলফ আইসোলেশনের সময়সীমা বর্ধনের মত অতিরিক্ত পদক্ষেপ জরুরি।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus
Advertisment