কোভিড-১৯ টেস্ট- ভারতের ক্রমপরিবর্তনশীল কৌশল

আইসিএমআরের টেস্টিং প্রটোকল রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর পর কীভাবে বদলাতে থেকেছে তা একবার দেখে নেওয়া যাক।

আইসিএমআরের টেস্টিং প্রটোকল রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর পর কীভাবে বদলাতে থেকেছে তা একবার দেখে নেওয়া যাক।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Covid-19 testing strategy

৪ এপ্রিল আইসিএমআর হটস্পট ও পরিযায়ী কেন্দ্রগুলিতে অ্যান্টিবডি টেস্টের পরামর্শ দেয়

মঙ্গলবার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) কোভিড ১৯-এর টেস্টিং কৌশলে বড়সড় বদল এনেছে। জানানো হয়েছে দেশের সমস্ত প্রান্তে সমস্ত উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা হবে। এ জন্য বেসরকারি হাসপাতাল, অফিস, এবং সরকারি ক্ষেত্রগুলিকে বলা হয়েছে নজরদারি পদক্ষেপ হিসেবে অ্যান্টিবডি টেস্ট করাতে। আইসিএমআরের টেস্টিং প্রটোকল রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর পর কীভাবে বদলাতে থেকেছে তা একবার দেখে নেওয়া যাক।

Advertisment

মার্চ- টেস্ট নিয়ে মাপা পদক্ষেপ

১৭ মার্চ এই কৌশল এখনকার চেয়ে অনেক বেশি সংশয়পূর্ণ ছিল। বলা হয়েছিল, বাছবিচার না করে টেস্ট পরিহার করতে হবে এবং প্যানিক কমাতে হবে। একই সঙ্গে দেশের পরিকাঠামো যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে ও টেস্টিংয়ের সুযোগ বাড়াতে হবে। এই কৌশলে তিন ধরনের উপসর্গযুক্তদের পরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছিল- আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারী, সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসা কোনও ব্যক্তি ও স্বাস্থ্য কর্মী।

Advertisment

সে সময়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে আইসিএমআরের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট নিবেদিতা গুপ্তা বলেছিলেন যাঁদের ভ্রমণের ইতিহাস নেই বা সংক্রমিতের সঙ্গে সংস্পর্শের ইতিহাস নেই তাঁদের কেন টেস্ট করাব! এই প্রক্রিয়ায় ভারতের মত বড় দেশে আমি অনেক মানুষ যাঁদের টেস্ট করানো সত্যিই প্রয়োজন তাঁদের টেস্ট করাতে পারব না, অনেক অকারণ টেস্ট করিয়ে শক্তিক্ষয় করব। আমরা যাতে আমাদের টেস্টিং ক্ষমতা অকারণ টেস্টের মাধ্যমে নষ্ট না করে ফেলি সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি কাল সংক্রমণের পরিমাণ বাড়ে তখন হয়ত দেখা যাবে আমাদের সব টেস্টিং ক্ষমতা শেষ হয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুন, ভারতে কোভিড-১৯ উপসর্গে কী চিকিৎসা হচ্ছে?

সে সময়ে বেসরকারি স্তরে  টেস্টের কথা বলা হয়নি এবং আইসিএমআপ তাদের ল্যাবরেটরির ক্ষমতা বৃদ্ধি করা শুরু করেছিল। মার্চের শেষ তারা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের টেস্ট শুরু করে এবং সংক্রমিতদের উপসর্গবিহীন সংস্পর্শিত, ও গুরুতর শ্বাসকষ্টে ভোগা মানুষজনেরও টেস্ট করাতে থাকে।

 এপ্রিল- নয়া টেকনিক

৪ এপ্রিল আইসিএমআর হটস্পট ও পরিযায়ী কেন্দ্রগুলিতে অ্যান্টিবডি টেস্টের পরামর্শ দেয়, তবে সিদ্ধান্তগ্রহণের ভার রাজ্য সরকারের উপর ছেডে় দেওয়া হয়। এ টেস্ট ডায়াগনোস্টিক নয়, তবে এর মাধ্যমে বোঝা যায় রোগীর আহে করোনাসংক্রমণ ছিল কিনা। কেরালা, তামিলনাড়ু এবং ছত্তিসগড়ের মত রাজ্যগুলি এ ধরনের নজরদারি লুফে নেওয়ার অপেক্ষায় ছিল। পরে আইসিএমআর তাদের সিদ্ধান্ত বদলায় চিন থেকে সমস্যযুক্ত কিট আসার পরে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আইসিএমআরের এ নিয়ে মতদ্বৈধতারও সৃষ্টি হয়। হু বলেছিল অ্যান্টিবডি টেস্ট গবেষণার জন্য ব্যবহার করা উচিত। আইসিএমআরের বক্তব্য ছিল বিস্তারিত অ্যান্টিবডি টেস্ট আরটি-পিসিআর টেস্টের সমতুল।

আইসিএমআর ২০টি হটস্পটে টেস্টের পরিমাণ বাড়ানোর কথাও বলেছিল, যার মধ্যে ছিল দিল্লির নিজামুদ্দিন  ও দিলশাদ গার্ডেন, কেরালার পাঠানমতিত্তা ও মুম্বই এবং পুনে।

৯ এপ্রিল আইসিএমআর টেস্টিং স্ট্র্যাটেজিতে যোগ করে জন্য হটস্পট, বড় পরিযায়ী মিলনস্থল ও অপসারণ কেন্দ্রগুলির উপসর্গযুক্তদের। আইসিএমআরের নয়া গবেষণায় সে সময়ে দেখা গিয়েছিল সারা দেশে গত এক মাসে শ্বাসকষ্টের রোগীদের মধ্যে কোভিড সংক্রমণ বেড়েছে।

১৩ এপ্রিল আইসিএমআর যেসব জায়গায় সংক্রমণ কম ও পজিটিভিটির হার নিম্ন, সে সব জায়গায় পুলড স্যাম্পলিং করতে বলে। যদি পুলড স্যাম্পলের মধ্যে পজিটিভ মেলে তাহলে আলাদা করে টেস্ট হবে বলে জানানো হয়। উচ্চরপ্রদেশের মত রাজ্য এই ব্যবস্থা গ্রহণে ঝাঁপিয়ে পড়েয

সে সময়ে আইসিএমআরের এপিডেমিওলজি ও ইনফেকশাস ডিজিজের প্রধান ডক্টর আর আর গঙ্গাখেড়েকর বলেন, উপসর্গ থাকলে তবেই পজিটিভ হয়, ফলে খরচের ব্যাপার ও ঝুঁকিভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির দিকে যদি নজর রাখা যায়, তাহলে আপনার সম্ভাবনা টেস্ট করালেই কমবে। টেস্টিংয়ের কৌশল বদলের ব্যাপের আমি এখনই কিছু বলতে পারছি না।

মে- প্রটোকলের বিস্তার

১৮ মে আইসিএমআর উপসর্গবিহীন পরিযায়ী, হাসপাতালে ভর্তি রোগী, সামনের সারির কর্মীদের টেস্টের কথা বলে। আইএলআই উপসর্গযুক্ত হাসাপাতালে ভর্তি সমস্ত রোগীদের টেস্টের কথা বলা মাধ্যমে হাসপাতাল থেকে সংক্রমণ হওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়। উপসর্গবিহীন বা হটস্পট থেকে ফেরত আসা নিরপেক্ষভাবই পরিযায়ীদের যুক্ত করার মাধ্যমে ইঙ্গিত মেলে গোষ্ঠী সংক্রমণের।

মে মাসেই স্বাস্থ্যমন্ত্রক সিদ্ধান্ত নেয় হোম আইসোলেশনের পর বা ডিসচার্জের আগে টেস্ট না করানোর। সরকার সংক্রমণ কতটা ছড়িয়েছে তার হিসেব নেওয়ার জন্য সেরো সার্ভের সিদ্ধান্ত নেয়।

৩০ মে আইসিএমআর ফের রাজ্যগুলিকে অ্যান্টিবডি টেস্ট করানোর পরামর্শ দেয়, জোর দিতে বলা হয় ভিন রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকদের, যাঁরা একত্রে অনেকে থাকেন বা যাঁদের বাসস্থানে আলোহাওয়া তেমন খেলে না, যাঁরা নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে কাজ করেন, কনট্যামিনেশন জোনের বাসিন্দা, ও কারাকর্মীদের উপর।

আরও পড়ুন, ভয় থেকে বিশ্বাস: ভারতের রোগদেবতা

মে মাসের শেষে যখন দেশে প্রতিদিন এক লক্ষ টেস্ট হতে শুরু করে, তখন পজিটিভিটির হারও বাড়তে থাকে। টেস্টিং কৌশল বৃ্দ্ধির সঙ্গে সঙ্গে টেস্টিংয়ের সুবিধা ও কিটের প্রকারও বাড়তে থাকে।

 জুন- অ্যান্টিজেন টেস্ট

১৫ জুন কনটেনমেন্ট জোনে ডায়াগনোস্টিক কিট অনুমোদন করে আইসিএমআর। এ টেস্টে ল্যাবরেটরি দরকার হয়না, ফল মেলে কম সময়ে, খরচও কম।

কনটেনমেন্ট জোনে অ্যান্টিজেন টেস্ট যাঁদের জ্বর ও কাশি রয়েছে এমন সকলের এবং যাঁরা সংক্রমিতের সংস্পর্শে এসেছেন তেমন উপসর্গবিহীন ও অন্যান্য অসুখে প্রবল আক্রান্ত, তাঁদের টেস্ট করার কথা বলা হয়।

মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাট, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ এই কিট সংগ্রহ করেছে। কিট সরবরাহকারী সংস্থা এস ডি বায়োসেন্সরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সমস্ত রাজ্যই এই কিট কিনবে। অনেক হাসপাতাল এর খোঁজখবর নিচ্ছে এবং অর্ডার করা শুরু করে দিয়েছে। ২৩ জুনের অ্যাডভাইজরিতে বলা হয়েছে, নতুন ধরনের টেস্টিং কিট সংযোজিত হলেও ভারতের মত বড় দেশে টেস্টিং একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসেবেই রয়ে যাচ্ছে।

coronavirus COVID-19