Advertisment

যেসব ওষুধ নিয়ে কোভিডের সঙ্গে লড়াই করছে ভারত

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের সলিডারিটি ট্রায়ালে ল্যানসেটের একটি গবেষণার ফল প্রকাশিত হওয়ার পর হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন বাদ দিয়ে দিয়েছিল, গবেষণাপত্রের লেখকরা মত বদলানোর পর আবার তা ট্রায়ালের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Covid 19 Drugs in India

কাদের প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হবে সে নিয়ে আইসিএমআর একটি প্রটোকল নির্ধারণ করেছে

রেমডেসিভির

Advertisment

এই অ্যান্টিভাইরাল ওষুধটি ২০১৪ সালে ইবোলার চিকিৎসার সময়ে প্রথম তৈরি হয়েছিল। কোভিড ১৯ চিকিৎসার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সলিডারিটি ট্রায়ালে এই ওষুধ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। এই ওষুধ শরীরে ভাইরাস রেপ্লিকেশন রোধ করে।

গত মালে মার্কিন সংস্থায় ন্যাশনাল ইনস্টিট্যুটস অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস একটি প্রাথমিক ট্রায়ালের ফল প্রকাশ করে জানিয়েছে, রেমডিসিভির প্রয়োগে কোভিড রোগীদের সুস্থতার সময় ১৫ দিন থেকে কমে ১১ দিনে দাঁড়িয়েছে। ভারতের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল ১ জুন রেমডিসিভিরের পাঁচ দিনের কোর্সের অনুমতি দিয়েছেন। মাঝারি থেকে তীব্র অসুস্থদের জন্য চিকিৎসকরা এই ওষুধ প্রেসক্রাইব করছেন। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর ওম শ্রীবাস্তব বলেছেন, কোন রোগীর উপর কোন সময়ে এই ওষুধ প্রয়োগ করা হবে তা একেবারেই চিকিৎসকদের উপর নির্ভর করছে, কারণ এখনও পর্যন্ত ক্লিনিকাল ট্রায়ালের যথেষ্ট ফল এসে পৌঁছয়নি।

আরও পড়ুন, হাইপারটেনশনের কোভিড রোগীদের মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি

রেমডিসিভিরের প্রতি ভায়ালের দাম ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। এই ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা গাইলিড সায়েন্সেস ভারত ও পাকিস্তানে ওষুধ সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য সিপলা, ফিরোজসনস ল্যাবস, হেটারো ল্যাবস, জুবিল্যান্ট লাইফসায়েন্সেস এবং মাইলানের মত কোম্পানিগুলির সঙ্গে লাইসেন্স চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

 ফাভিপিরাভির

ভাইরাল রেপ্লিকেশন রোধে এই ওষুধ ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধী ওষুধ। এ ওষুধ প্রথম প্রস্তুত করে জাপানের ফুজিফিল্ম টয়োমা কেমিক্যাল লিমিটেড। ভারতে এ ওষুধ তৈরি করে গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যান্ড স্ট্রাইডস ফার্মা। মাঝারি উপসর্গযুক্ত থেকে তীব্র অসুস্থ কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে এ ওষুধ ব্যবহার করা হলেও ওষুধ পাওয়া  মুশকিল। এর তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য ১০টি হাসপাতালকে বাছা হয়েছে। গ্লেনমার্ক সংস্থা ফাভিরাপিরের সঙ্গে আরেকটি ওষুধ উমিফেনোভির মিলিয়ে ১৫৮ জন কোভিড রোগীর উপর আরেকটি ট্রায়াল টেস্ট করবে।

টোসিলিজুমাব

এই ওষুধটি সাধারণত রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। মুম্বইয়ে ১০০-র বেশি তীব্র অসুস্থ কোভিড রোগীকে এই ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে। এর একটি ডোজের দাম ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। ভেন্টিলেটরের প্রয়োজনীয়তা রোধ করা যায় এই ওষুধের মাধ্যমে। সরকারি হাসপাতালে এই মূল্যবান ওষুধ ফ্রি-তে দেওয়া হচ্ছে।

প্রথমবার লীলাবতী হাসপাতালে ৫২ বছর বয়সী এক রোগীর উপর ব্যবহার করা হয়। ওই রোগী শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন এবং তাঁর অবস্থার আর উন্নতি হচ্ছিল না। অন্য রোগীদের ক্ষেত্রেও এই ওষুধ প্রয়োগে আরোগ্যের ঘটনা ঘটলেও এ সম্পর্কিত তথ্য দেওয়ার সময় এখনও আসেনি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। নায়ার হসপিটালের ডিন ডক্টর মোহন জোশী বলেছেন সরকারি হাসপাতালে এই ওষুধ প্রয়োগে ৯৫ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। লীলাবতী হাসপাতালের পালমোনোলজিস্ট ডক্টর জলিল পার্কার বলেছেন "আমরা শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ার রোগী ও যাঁদের সাইটোকিন স্টর্মের ঝুঁকি রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ দিচ্ছি।"

আরও পড়ুন, কোভিড সংক্রমণ আটকাতে ‘সোশাল বাবল’-এর গুরুত্ব

ভারতের বিভিন্ন কেন্দ্রে  রান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়ালের শুরু হয়েছে। এই ওষুধের প্রস্তুত করে রচে ফার্মা, বাজারজাত করে সিপলা। ভারতে অ্যাকটেমরা ব্র্যান্ড নেমে এই ওষুধ বিক্রি হয়।

ইটোলিজুমাব

সোরিয়াসিস, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রারাইটিস, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস ও অটোইমিউন ডিসঅর্ডারে এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ভারতে ২০১৩ সালে বায়োকন এই ওষুধ নিয়ে আসে।

মুম্বই ও দিল্লিতে তীব্র অসুস্থ কোভিড রোগীদের মধ্যে এই ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রাথমিক ফল পাওয়া যাবে জুলাই মাসে। নায়ার হাসপাতালের ডিন ডক্টর জোশী জানিয়েছেন, ট্রায়ালের ফল পেতে সময় লাগবে।

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন

এই ম্যালেরিয়ার ওষুধ কোভিডের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর সে নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের সলিডারিটি ট্রায়ালে ল্যানসেটের একটি গবেষণার ফল প্রকাশিত হওয়ার পর হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন বাদ দিয়ে দিয়েছিল, গবেষণাপত্রের লেখকরা মত বদলানোর পর আবার তা ট্রায়ালের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ভারত এই ওষুধের বৃহত্তম প্রস্তুতকারক। যেসব কোভিড রোগীদের মধ্যে মাথা যন্ত্রণা, জ্বর, গায়ে ব্যথা, এবং এমনকী যাঁরা তীব্র অসুস্থ তাঁদের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকরা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করছেন। আইসিএমআরের গাইডলাইনে ৯ দিন অল্প ডোজে এই ওষুধ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। দ্রুত আরোগ্যে এই ওষুধ সহায়তা করছে, কিন্তু সেটা প্রাথমিক অনুমান, বলছেন এক চিকিৎসক। অন্যরা এই ওষুধ প্রয়োগে রোগীর মধ্যে এলোপাথাড়ি হৃদস্পন্দনের সমস্যার ব্যাপারে সাবধান করছেন। মুম্বইয়ের ভাটিয়া হাসপাতালের চিকিৎসক গুঞ্জন চঞ্চলানি বললেন, "মেডিক্যাল লিটারেচরে এ নিয়ে এত নেতিবাচক রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার সামান্য কয়েকজন রোগীর মধ্যে সীমিত রেখেছি। এখন আমরা এই ওষুধ বন্ধ করার পরিকল্পনা করছি।"

ডক্সিসাইক্লিন + ইভারমেকটিন

 মূত্রনালী, চোখ, বা শ্বাসনালীতে সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ডক্সিসাইক্লিন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। ইভারমেকটিন ব্যবহার করা হয় স্কেবিজ, চুলের উকুন ও ফাইলেরিয়াসিসের চিকিৎসায়। এই দুটি ওষুধের কম্বিনেশন তীব্র উপসর্গ যুক্ত কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন, মাস্ক ব্যবহার নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মত বদল- গোটা পৃথিবীতে কী নিয়ম

মার্চের মাঝামাঝি বাংলাদেশের এক মেডিক্যাল কলেজেক গবেষণায় দেখা যায় এই কম্বিনেশন প্রয়োগে ৬০ জন কোভিড রোগী সেরে গিয়েছেন। মোনাশ বায়োমেডিসিন ডিসকভারি ইনস্টিট্যুটের একটি গবেষণাতেও দেখা গিয়েছে ইভারমেকটিন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ভাইরাস দূর করতে সাহায্য করে।

মুম্বইয়ে তীব্র অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসায় গঠিত টাস্ক ফোর্সের সদস্য ডক্টর নিতিন কার্নিক বলেন, “কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে এই কম্বিনেশন নিয়ে তথ্য খুব কম। এটা এখনও এক্সপেরিমেন্ট পর্যায়ে রয়েছে।”

 রিটোনাভির + লোপিনাভির

এই অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ সাধারণত এইচআইভি রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হয়। এখন সলিডারটি ট্রায়ালে এই ওষুধটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে এই ওষুধ ব্যবহারে কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি কম, অন্যরা বলছেন তেমন কোনও উন্নতি দেখা যায়নি।

ভারতে এই দুটি ওষুধ সরবরাহ করে এক ডজনেরও বেশি প্রস্তুতকারী সংস্থা। চিকিৎসকরা কখনও কখনও তীব্র অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ প্রয়োগ করেন। বেশ কিছু চিকিৎসক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন তারা রোগীর সুস্থতায় তেমন কোনও প্রভাব দেখতে পাননি।

প্লাজমা থেরাপি

যাঁদের শরীরে অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল নেমে গিয়েছে, তেমন তীব্র অসুস্থদের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা করা হয়। যেসব কোভিড-১৯ রোগী সুস্থ হয়ে গিয়েছেন তাঁরা প্লাজমা দান করেন, যা অন্য অসুস্থদের শরীরে ইনজেক্ট করা হয় যাতে তাঁদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কাদের প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হবে সে নিয়ে আইসিএমআর একটি প্রটোকল নির্ধারণ করেছে। যাঁদের সাইটোকিন স্টর্মের ঝুঁকি রয়েছে ও প্রবল নিউমোনিয়ার সঙ্গে ব্যাপক শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাঁদের প্লাজমা থেরাপিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

COVID-19
Advertisment