Advertisment

উপসর্গবিহীনরা কতদূর কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়াতে পারেন?

উপসর্গবিহীন সংক্রমণের ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এ হল এমন কারও মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানো, যাঁর মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়নি। মার্কিন সংস্থা সিডিসি জানাচ্ছে উপসর্গপূর্ব ও উপসর্গহীন দু ধরনের সংক্রমণই সম্ভব।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Asymptomatic Covid 19

মুম্বইয়ের এক পুর ক্লিনিকে চলছে পরীক্ষা (ছবি- গণেশ শ্রীশেখর)

উপসর্গবিহীন যেসব ব্যক্তির কোভিড ১৯ পজিটিভ এসেছে,  তাঁদের সম্পর্কে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) সম্প্রতি দুটি পৃথক দিনে দুটি আলাদা সংখ্যা দেওয়ায় তাঁদের রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা সম্পর্কে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

Advertisment

ICMR কী বলেছে?

২০ এপ্রিল সংস্থার মহামারী ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর আর আর চন্দ্রশেখর বলেন, “আমি বিশ্লেষণ করেছি ৮০ শতাংশ মানুষ উপসর্গবিহীনভাবে সংক্রমিত হবেন। তাঁরা উপসর্গবিহীন থাকবেন, কিন্তু যদি তাঁদের পরীক্ষা করা হয়, তাহলে তাঁদের পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে... আমাদের বুঝতে হবে কোনও ব্যক্তির উপসর্গ থাকলে তবেই RT-PCR টেস্টে তা ধরা পড়ে। মানুষের উপসর্গ দেখা দিতে সময় লাগে। তার অর্থ আমি যদি উপসর্গবিহীন কাউকে টেস্ট করি, তাহলে তাঁর পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসার সম্ভাবনা খুব কম।” তিনি বলেন, এটা পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা। এ কারণেই তিনি পরীক্ষা নিয়ে ভারতের যে কৌশল, উপসর্গ দেখা দিলে তবেই পরীক্ষা করা, (যদি না কেউ হটস্পটে থাকেন বা সংক্রমিতদের সংস্পর্শে এসে থাকেন) সে কৌশল পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।

গ্রিন জোন নয়, লকডাউন তুলতে প্রয়োজন গ্রিন কর্মিগোষ্ঠী গড়ে তোলা

এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় পরদিন তিনি বলেন, “ভারতের যাঁরা পজিটিভ হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৬৯ শতাংশ উপসর্গবিহীন। তিনি বলেন, আমি কাল ৮০ শতাংশ নিয়ে যা বলেছিলাম, সেটা শুধু একটা গবেষণার উপর ভিত্তি করে।”

তথ্যপ্রমাণ কী?

সারা পৃথিবীতেই এখন স্বীকৃত যে বহু উপসর্গহীন মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন এবং সম্ভবত তাঁরা জানেনও না যে তাঁরা ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন, যতক্ষণ না তাঁদের সেরোলজিকাল টেস্ট হচ্ছে।

গত সপ্তাহে চিনে এক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে ৪৪ শতাংশ ক্ষেত্রে ভাইরাস ছড়িয়েছে উপসর্গবিহীনদের কাছ থেকে। তাঁদের অনুমান উপসর্গ দেখা দেওয়ার দু-তিন দিন আগে থেকেই ভাইরাল শেডিং শুরু হয়ে যায়।

“উপসর্গ দেখা দেওয়ার সময় থেকে গলার সোয়াবে ভাইরাল লোডের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে বলে আমরা দেখেছি, এবং সংক্রমণ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছবার আগে বা সে সময়ে উপসর্গ দেখা দেয়।” গুয়াংঝু মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষকরা এ কথা বলেছেন। এই গবেষণাপত্র নেচার মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছে।

উপসর্গ পূর্ববর্তী পর্যায় কী?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড ১৯ সংক্রমণের তিনটি পর্যায় ভাগ করেছে, উপসর্গবিহীন, উপসর্গ পূর্ববর্তী, এবং উপসর্গযুক্ত। উপসর্গযুক্ত সংক্রমণ হল যখন উভয়েরই উপসর্গ দেখা দিচ্ছে।

কোভিড ১৯-এর প্রতিষেধক- মানুষের উপর পরীক্ষা শুরু

হু বলেছে, মহামারী বিজ্ঞান ও ভাইরোলজি থেকে প্রমাণ মিলেছে যে কোভিড ১৯ প্রথমে উপসর্গযুক্ত ব্যক্তির ড্রপলেটের মাধ্যমে নিকটবর্তীদের মধ্যে সংক্রমিত হয়, হয় সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে নয়ত দূষিত কোনও বস্তু বা সারফেসের মাধ্যমে।

ভাইরাসের ইনকিউবেশন পর্যায় ৫-১৪ দিনের মধ্যে হয়। উপসর্গপূর্ব সংক্রমণ হল একজন ব্যক্তির উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই যদি সংক্রমণ ছড়ান এবং পরে তাঁর উপসর্গ দেখা দেয়।

উপসর্গবিহীন সংক্রমণের ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এ হল এমন কারও মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানো, যাঁর মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়নি।

মার্কিন সংস্থা সিডিসি জানাচ্ছে উপসর্গপূর্ব ও উপসর্গহীন দু ধরনের সংক্রমণই সম্ভব।

 উপসর্গবিহীন সংক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাবার উপায় কী?

এইমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া বলছেন হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই। অন্তত যতদিন না ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে। “এ কারণেই হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মত সার্বজনীন সুরক্ষা জরুরি, কিন্তু সংস্কারের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। আপনাদের বুঝতে হবে আমাদের মত তরুণতর রাষ্ট্রে সামান্য জ্বর ও গায়ে ব্যথা হবে এবং জানাই যাবে না যে তা কোভিডের কারণে।”

মনুষ্যবর্জ্য থেকে কি কোভিড ১৯ সংক্রমণ হতে পারে?

সংক্রমিত হবার কতদিন পর পর্যন্ত একজন সংক্রমণ ছড়াতে পারেন?

সাধারণভাবে এর উত্তর ১৪ দিন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। তবে, যেহেতু এটি নতুন রোগ, এ সম্পর্কিত জ্ঞানও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেরালা সম্প্রতি একজন ৫৪ বছরের মহিলার বিদেশ থেকে ফিরে আসার এক মাস পর সংক্রমণ ধরা পড়েছে এবং তিনি সেই থেকে নিজের বাড়িতে কোয়ারান্টিনে রয়েছেন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে স্বাস্থ্য আধিকারিকরা জানিয়েছেন এখনও পর্যন্ত অন্তত ১০ জনেরও বেশি মানুষের হদিশ মিলেছে, যাঁদের সংক্রমণ ধরা পড়েছে ২৮ জিন কোয়ারান্টিনে থাকার পর।

তেলেঙ্গানা বৃহস্পতিবার বাড়িতে কোয়ারান্টিনে থাকার সময়কাল ১৪ দিন থেকে বাড়িয়ে ২৮ দিন করেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলেছে শুরু থেকেই রোগীকে ফলো আপ করতে, অন্তত গোষ্ঠী নজরদারির মধ্যে দিয়ে, এবং সে সময়কাল ১৪ দিন নয়, ২৮ দিন।

এটা আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার সঙ্গেও সাযুজ্যপূর্ণ। গত মাসে ল্যান্সেট ইনপেকশাস ডিজিজের এক গবেষণায় ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকরা বলেছেন, চিনে উপসর্গ দেখা দেওয়া থেকে মৃত্যু পর্যন্ত গড় সময়কাল ১৭.৮ দিন এবং  হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার গড় সময় ২৪.৭ দিন। তাঁরা আরও দেখিয়েছেন সেখানে যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাঁরা সকলে চিকিৎসার প্রয়োজনে ভর্তি হননি, ভবিষ্যৎ সংক্রমণ রোধের কারণে ভর্তি হয়েছেন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

 

coronavirus COVID-19
Advertisment