Advertisment

Explained: অপরিশোধিত তেলের দামে পতন এবং ভারতে তার প্রভাব

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে, ভারতেও কি কমতে পারে পেট্রোল-ডিজেলের দাম?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Kolkata Petrol and Diesel price hike 1 November 2021

ফের বাড়তে পারে জ্বালানি তেলের দাম।

ভারতে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়লেই হামেশা যুক্তি দেওয়া হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে ভারতেও দাম বাড়াতে হয়েছে অপরিশোধিত পেট্রোল-ডিজেলের। মঙ্গলবারই কিন্তু, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম দু'সপ্তাহ বাদে ১০০ ডলারের নীচে নেমেছে। তার আগে গত ১৪ বছরে সর্বোচ্চ বেড়েছিল তেলের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম হয়েছিল ব্যারেলপ্রতি ১৩৯ ডলার।

Advertisment

তারপর ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ১০০ ডলারের নীচে নামায় অনেকে বেশ খুশি হয়েছিলেন। তবে, সেই খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। বুধবারই অপরিশোধিত তেলের দাম পৌঁছে গেল ব্যারেলপ্রতি ১০২.৭ ডলারে। বছরের শুরুতে যার দাম ছিল ৭৮.১১ ডলার। সেই হিসেবে বুধবারের দাম ধরলে বছরের শুরু থেকে প্রায় ৩২ শতাংশ বেড়েছে।

তেলের দামে পতনের কারণ
এর প্রধান কারণ চিন। সম্প্রতি চিনে ফের করোনা হানা দিয়েছে। কলকারখানা থেকে দোকানপাট প্রায় সবই স্তব্ধ।
বন্ধ, সমুদ্র বন্দরের কাজকর্মও। ফলে অপরিশোধিত তেল চিন আর আমদানি করতে পারছে না। বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত তেলের ক্রেতা এই চিন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছিল।

তারমধ্যেই ইরানের সঙ্গে চিন একটি পরমাণু চুক্তি করেছে। আর, সেটা করেছে অপরিশোধিত তেলের জন্য। এর ফলে ইরানে অপরিশোধিত তেলের উত্পাদন বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বিশ্বে অপরিশোধিত তেলের জোগানও বেড়েছে। নিয়ন্ত্রণে এসেছে তেলের দামও।

এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইরানের মধ্যে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি পুনরায় কার্যকরী করার কথা চলছে। এতেও আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের জোগান নিয়ে উদ্বেগ দূর হয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী, ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করবে। বিনিময়ে ইরানের বিরুদ্ধে আরোপ করা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হবে। এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলে ইরানেরও বেশ কিছু সুবিধা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে তারা বিনা বাধায় তেল বিক্রি করতে পারবে।

যদিও গোটা আলোচনা প্রক্রিয়া থমকে আছে। কারণ, রাশিয়া গ্যারান্টি চাইছে। মস্কোর বক্তব্য, আগে ইউরোপের দেশগুলো আর আমেরিকাকে গ্যারান্টি দিতে হবে। তাদের নিশ্চিত করতে হবে, রাশিয়ার ওপর আরোপ হওয়া নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ইরান-রাশিয়া বাণিজ্যে পড়বে না। মঙ্গলবার অবশ্য রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা লিখিত গ্যারান্টি পেয়ে গিয়েছেন। এরপর নিষেধাজ্ঞা উঠলে, ইরান তার দৈনিক অপরিশোধিত তেল উত্পাদন ১৫ লক্ষ ব্যারেল পর্যন্ত বাড়াতে পারে।

আরও পড়ুন- রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কড়া আমেরিকা, সেনেটে যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত পুতিন

ভারতে এর কী প্রভাব পড়বে
দৈনিক যা অপরিশোধিত তেলের দরকার, তার ৮৫ শতাংশই ভারত আমদানি করে। অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়লে, পেট্রোল পাম্পগুলোতেও পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়ে যায়। তবে, চাপের মুখে তেল সংস্থাগুলো ৪ নভেম্বর থেকে আর তেলের দাম বাড়ায়নি। অথচ, এর মধ্যেই কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দামে খাপ খাওয়াতে শীঘ্রই ভারতেও পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়ানো হবে।

কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী রাশিয়ার থেকে তেল আমদানি করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। রাশিয়াও জানিয়েছে, ইউক্রেন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত যেভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, তারাও ভারতকে তেল সরবরাহ করতে ইচ্ছুক। কোনওভাবে সেটা সম্ভব হলে তবেই ভারতে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমতে পারে। না-হলে চিনে করোনা পরিস্থিতি একটু নিয়ন্ত্রণে এলেই ভারতে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কিন্তু বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Read story in English

India Crude Oil
Advertisment