Advertisment

ভারতীয় খেলাধুলোয় ধ্যান চাঁদের মূল্য

ধ্যান চাঁদ ভারতীয় হকির ঈশ্বরপ্রতিম, হকির সূর্য, আবেগের ধ্যানবিন্দু। ভারতীয় হকি তাঁর মতো একজনকে পেয়ে ধন্য হয়েছিল বললেও যথেষ্ট বলা হয় না মোটেই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ধ্যান চাঁদ ভারতীয় হকির ঈশ্বরপ্রতিম, হকির সূর্য, আবেগের ধ্যানবিন্দু।

খেলরত্ন পুরস্কার থেকে রাজীব গান্ধির নাম খসে যাচ্ছে। হকির কিংবদন্তি ধ্যান চাঁদের নামে হচ্ছে এই পুরস্কারটি। শুক্রবার এই ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর সঙ্গে রাজনীতির একটা সরল যোগাযোগ থাকলেও, ধ্যান চাঁদের অবদান অস্বীকারের সাধ্য নেই কারওর। ধ্যান চাঁদ ভারতীয় হকির ঈশ্বরপ্রতিম, হকির সূর্য, আবেগের ধ্যানবিন্দু। ভারতীয় হকি তাঁর মতো একজনকে পেয়ে ধন্য হয়েছিল বললেও যথেষ্ট বলা হয় না মোটেই। ধ্যান চাঁদকে নিয়ে চর্চার প্রয়োজন আছে এই সময়ে। নতুন প্রজন্ম যাতে কোনও ভাবে তাঁকে ভুলে না যায়, সেই জন্যই এর সবিশেষ দরকার।

Advertisment

কে ধ্যান চাঁদ?

ধ্যান চাঁদ হকির প্রথম মহানায়ক, সুপারস্টারও বলতে পারেন। তিনি এই খেলাটির ম্যাজিশিয়ান যেন। আমস্টারডাম (১৯২৮), লস অ্যাঞ্জেলস (১৯৩২) এবং বার্লিন (১৯৩৬), অলিম্পিক্স হকিতে ভারতের সোনা জয়ের মূল শক্তি ছিলেন ধ্যানই (ভারত পর পর ছ'বার সোনা পেয়েছিল অলিম্পিক্সে)। হকিস্টিক হাতে ধ্যানের ড্রিবলিং, আশ্চর্য কৌশল দেখে দর্শকের হাঁ বন্ধ হত না। টুর্নামেন্টগুলোয় ভারতের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার শক্তি ছিল না কোনও দেশেরই। বেশির ভাগ ম্যাচে বড় ব্যবধানে জয়ের হাসিটা ভারতীয় হকি দল হেসেছিল হাহা করে।

১৯২৮-এ আয়োজক নেদারল্যান্ডসকে ফাইনালে ৩-০-তে হারিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিয়া। আমেরিকাকে ধ্যান চাঁদরা অকল্পনীয় অতলস্পর্শী পরাজয়ের মুখ দেখান ১৯৩২-এর ফাইনালে। স্কোরবোর্ড-- ভারত ২৪--আমেরিকা--১। এখনও সেই খেলা রূপকথাই এক। ১৯৩৬-এর অলিম্পিক্সে জার্মানিকে ভারত নাকানিচোবানি খাইয়ে হারিয়ে দেয় ৮-১-এ।

ধ্যান চাঁদের ক্ষমতার গল্প

হকিস্টিকে বল নিয়ন্ত্রণের দুর্দান্ত ক্ষমতা ছিল ধ্যানের। বল তাঁর স্টিকের সঙ্গে এমন ভাবে লেগে থাকত যে ছাড়ানো যেত না শত চেষ্টাতেও। এখনকার মতো তখন অ্যাস্ট্রোটার্ফে খেলা হত না, মাঠগুলো এবড়োখেবড়ো ছিল! কিন্তু ধ্যানের হকিস্টিকের সঙ্গে বলের মিলন-ক্ষমতা তাতে কমত না। হকিস্টিকে কি চুম্বক আছে, এমনও সন্দেহ এর ফলে দানা বেঁধে উঠেছিল তখন, ইন্দ্রিয় ও জল্পনার বিবাদভঞ্জনে নাকি ধ্যানের হকিস্টিক ভেঙেও দেখা হয়েছিল! বার্লিন গেমসের সময়, ১৯৩৬-এ, জার্মান একনায়ক অ্যাডলফ হিটলার তাঁর খেলা দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়ে যান যে, তাঁকে জার্মান নাগরিকত্ব দিতে চান, এবং জার্মান সেনায় কর্নেলের পদটি চাঁদের পায়ের কাছে রেখে দিতে চান, যদিও ধ্যান চাঁদ পত্রপাঠ না বলে দেন।

কেন ধ্যান চাঁদ আবেগের নাম?

স্বাধীনতার আগে ধ্যান চাঁদের এই জাদুকরী খেলা। যখন ব্রিটিশের সাদা চামড়ার সামনে ভারতীয়দের মাথা নোয়ানো। পদে পদে ভারতকে ছোট দেখাত ব্রিটিশের দল। সেই সময় চাঁদের এই কামাল ভারতীয়দের মেরুদণ্ডের জোর অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। ধ্যান হয়ে উঠেছিলেন উঠে দাঁড়াবার নাম। ভারতীয়দের অবলম্বর, জাতীয় গর্ব।

স্বাধীনোত্তর সময়ে, এবং স্বাধীনতার পরেও বেশ কিছুটা সময়, আন্তর্জাতিক ও অলিম্পিক স্তরে হকিই ছিল একমাত্র খেলা, যাতে ভারত তুখোড় মাস্টারি দেখিয়ে গিয়েছে লাগাতার। ভারতের পদকের ভাঁড়ার হকি ছাড়া শূন্যই ছিল দীর্ঘ সময়। ১৯২৮ সালের আমস্টারডাম থেকে হকিতে আটটির মধ্যে সাতটি গোল্ড মেডেল পায় ভারত। ১৯৫২ সালে হেলসিঙ্কিতে কুস্তিতে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন কে ডি যাদব এবং লিয়েন্ডার পেজ অলিম্পিক্স পদক পেলেন তার অনেক পর, ১৯৯৬-এ।

আরও পড়ুন হকির সাফল্যে গর্বিত মোদী, খেলরত্ন পুরস্কার এবার থেকে ধ্যান চাঁদের নামে ঘোষণা

হকিতে দুরন্ত আরও কয়েক জন ছিলেন তখন। যেমন কে ডি সিং 'বাবু', রূপ সিং, বলবীর সিং প্রমুখ। কিন্তু ফোকাসে ছিলেন ধ্যান চাঁদ, চাঁদের আলোই বাঁধ ভেঙেছিল। মৃত্যুর পর ধ্যানকে ভারতরক্ত দেওয়া নিয়ে চর্চা শুরু হয়। ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান এক কথায় যাঁকে দেওয়া উচিত, কেন তা নিয়ে কাটাকুটি খেলা চলবে, সেই প্রশ্নটা অনেক পুরনো আজ। ২০১৩ সালে সচিন তেণ্ডুলকরের অবসরের সময়, কোন ক্রীড়াবিদ ভারতরত্ন পাওয়ার যোগ্য তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। যদিও ধ্যান চাঁদ সম্পর্কে এই সেই তর্কটা চলছেই।

ধ্যান চাঁদ কী স্বীকৃতি পেয়েছেন এখনও পর্যন্ত?

২৯ অগস্ট, তাঁর জন্মদিনটিকে জাতীয় ক্রীড়া দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়, রাষ্ট্রপতি এই দিনে অর্জুন পুরস্কার এবং অন্যান্য সম্মান দেন। ক্রীড়ায় আজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে একটি পুরস্কার দেওয়া হয় ধ্যান চাঁদের নামে। রাজধানীর ন্যাশনাল স্টেডিয়াম ধ্যানের নামে নতুন নামও হয়েছে ১৯৫১ সালে-- ধ্যান চাঁদ ন্যাশনাল স্টেডিয়াম।

পুরস্কারের নয়া নাম কেন গুরুত্বপূর্ণ

আটটি গোল্ড মেডেল। ধ্যান চাঁদের জাদু আজকের খেলোয়াড়দের জানা দরকার। হকিতে ভারত ক্রমশই পিছিয়ে পড়তে শুরু করে একটা সময় থেকে। নতুন সারফেসে, চড়চড় করে বেড়ে চলা ফিটনেসের জমানায় ভারত নিষ্প্রভ হতে থাকে। ইউরোপীয় ও অস্ট্রেলীয়রা এগিয়ে যেতে থাকে দুরন্ত গতিতে। বয়কট-দীর্ণ মস্কো গেমসের পর থেকে প্রথম চারেও পৌঁছতে পারেনি টিম ইন্ডিয়া হকি। ফলে সোনার অতীতের পুনরুজ্জীবন লড়িয়ে দেওয়ার শক্তি দিতে পারে নতুনদের, আধ মরাদের ঘা মেরে বাঁচাতে পারে। তাই রাজনীতির সমীকরণ পেরিয়ে ধ্যান চাঁদ খেলরত্নের রত্নগর্ভ কাহিনিটার দিকেই নজর দিতে হবে।

Dhyanchhand
Advertisment