কংগ্রেসের বেশ কিছু নেতা যাঁরা পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতিভূ, তাঁরা এবার ভোটে হেরেছেন। এর মধ্যে আমেথিতে রাহুল গান্ধীর পরাজয় বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও বেশ কিছু আঞ্চলিক দলের এমন প্রার্থীদেরও একই পরিণতি হয়েছে। কিন্তু তা বলে এ কথা মনে করার কোনও কারণ নেই যে ভারতীয় রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের বিনাশ হয়েছে। বরং উল্টোটাই। তথ্য বলছে এ ধারার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ ক্ষেত্রে পরিবারতন্ত্র বলতে আমরা বলতে চাইছি এমন প্রার্থী বা সাংসদের কথা, যাঁদের কোনও আত্মীয় বর্তমানে বা অতীতে নির্বাচনে জিতেছেন, সে যে কোনও পর্যায়েই হোক না কেন। এর মধ্যে ধরা হয়েছে এমন প্রার্থীদেরও যাঁদের কোনো আত্মীয় কোনও দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন বা ছিলেন।
আরও পড়ুন, খুনে অভিযুক্ত সাংসদ ১১, কোটিপতি বিজেপি এমপি ১১৬ জন
২০১৯ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে ৩০ শতাংশ সাংসদ রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছেন, যা একটি রেকর্ড।
বড় রাজ্যগুলির মধ্যে পরিবারতন্ত্রের অনুপাত জাতীয় অনুপাতের চেয়ে বেশির দিকে। যথা রাজস্থান (৩২ শতাংশ), ওড়িশা (৩৩ শতাংশ), তেলেঙ্গানা (৩৫ শতাংশ), অন্ধ্র প্রদেশ (৩৬ শতাংশ), তামিল নাড়ু (৩৭ শতাংশ), কর্নাটক (৩৯ শতাংশ), মহারাষ্ট্র (৪২ শতাংশ), বিহার (৪৩ শতাংশ) এবং পাঞ্জাব (৬২ শতাংশ)।
এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে সব দলের মধ্যেই। কেউ ভাবতে পারেন রাজ্য ভিত্তিক দলগুলি মূলত পরিবারভিত্তিকও বটে। কিন্তু ঘটনা তা নয়। এ ব্যাপারে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে জাতীয় দলগুলি। সব রাজ্যের ক্ষেত্রেই বিষয়টা একই। বিহারে জাতীয় দলগুলির ৫৮ শতাংশ প্রার্থী পরিবারতন্ত্রের প্রতিনিধি, যেখানে রাজ্য ভিত্তিক দলে এই অনুপাত মাত্র ১৪ শতাংশ। হরিয়ানার সংখ্যাটা যথাক্রমে ৫০ শতাংশ ও ৫ শতাংশ। কর্নাটকে ৩৫ শতাংশ ও ১৩ শতাংশ, মহারাষ্ট্রে ৩৫ শতাংশ ও ১৯ শতাংশ, ওড়িশায় ৩৩ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ, তেলেঙ্গানায় ৩২ শতাংশ ও ২২ শতাংশ, এবং উত্তর প্রদেশে ২৮ শতাংশ ও ১৮ শতাংশ। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে রাজ্যভিত্তিক দলের পরিবারতন্ত্রের অনুপাত জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি। যথা জেডিএস (৬৬ শতাংশ), শিরোমণি অকালি দল(৬০ শতাংশ), তেলুগু দেশম (৫২ শতাংশ), আরজেডি (৩৮ শতাংশ), বিজেডি (৩৮ শতাংশ), সপা (৩০ শতাংশ)। এর মধ্যে অধিকাংশ দলই কোনও কোনও কোনও পরিবারের নেতৃত্বাধীন, উদাহরণ সপা।
পরিবারতন্ত্রের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী দুটি দল হল সিপিআই এবং সিপিআই(এম), যেখানে ৫ শতাংশের কম প্রার্থী রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছেন। তারা আজ প্রায় তলানিতে। তবে এর কারণ যে পরিবারতন্ত্রের অভাব নয়, সে কথা বলাই বাহুল্য।
জাতীয় দলগুলির মধ্যে কংগ্রেস সবচেয়ে বেশি পরিবারতান্ত্রিক, ৩১ শতাংশ প্রার্থী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। কিন্তু বিজেপিও এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই। এ দলের ২২ শতাংশ প্রার্থী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। এই তথ্যটির দুটি দিক রয়েছে। প্রথমত বিজেপি সমস্ত দলগুলির বিরোধিতা করেছে পরিবারতন্ত্রকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য। দ্বিতীয়ত, ২৮২ জন বিদায়ী সাংসদকে তারা টিকিট দেয়নি, যাতে নতুন মুখ সংসদে আসে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিজেপির সাংসদদের মধ্যে একটা বড় অংশ রাজনৈতিক পরিবারের প্রতিনিধি হয়ে উঠল কী করে!
এর মূল কারণ হল সব দলই চায় জেতা আসনে এমন প্রার্থী দাঁড় করাতে যাদের জেতার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। স্থানীয়ভাবে পরিবারতন্ত্রের সঙ্গে থাকলে সুবিধের পরিমাণ এ ব্যাপারে অসুবিধে চেয়ে বেশি হয়।
দ্বিতীয়ত, মহিলা প্রার্থীরা পুরুষ প্রার্থীদের থেকে বেশি পরিবারতান্ত্রিক। রাজনৈতিক দলগুলি চায় রাজনৈতিক পরিবার থেকেই মহিলা প্রার্থী বেছে নিতে তার কারণ তারা এখনও মনে করে মহিলাদের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোর মধ্যে ঝুঁকি রয়েছে। এ কারণে, সপা, টিডিপি, ডিএমকে এবং টিআরএস-এর সব মহিলা প্রার্থীরাই রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্ত। ছোট দলগুলির ক্ষেত্রে এই ঝোঁক দেখা যায় সরাসরি দলীয় নেতৃত্বের দিকে। যেমন আরজেডি-র তিন মহিলা প্রার্থী ছিলেন জেলে থাকা তিন দলীয় গুণ্ডার স্ত্রী।
এই প্রবণতা কংগ্রেস এবং বিজেপিতেও কম নেই। কংগ্রেসের ৫৪ শতাংশ এবং বিজেপর ৫৩ শতাংশ মহিলা প্রার্থী পরিবারতন্ত্রের প্রতিনিধি। এমনকি তৃণমূল কংগ্রেস, যারা রেকর্ড সংখ্য়ক মহিলা প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছে এবং একই সঙ্গে যারা কম পরিবারতান্ত্রিক দল, তারাও এ ব্যাপারে কম যায়নি। তাদের মহিলা প্রার্থীদের ২৭ শতাংশ রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসা।
তথ্য থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট। এবারে নির্বাচনে পরিবারতন্ত্রের প্রভাব বেড়েছে, সে প্রভাব বেড়েছে বিজয়ী দলের মধ্যেও। ফলে যাঁরা বলছেন বিজেপিতে ভোট দেওয়া মানে পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া, তাঁরা তেমন বিবৃতি দেওয়ার আগে সাবধানী হওয়াই ভাল।
Read the Full Story in English