হয়তো মুখখানা তাঁর হাসি হাসি, কিন্তু হাসির ভিতরে লুকিয়ে রয়েছে চাপ। ভীষণ টুইটারের চাপ। কারণ, এলন মাস্ককে টুইটার আবার আদালতে নিয়ে গিয়ে ফেলেছে। টুইটার ক্রয়ের ৪৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি থেকে সরে আসার কথা এলন জানানোর পরই এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মের কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা এলনকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে চলেছেন। সেই মতো ডেলাওয়্যার আদালতে এলন মাস্কের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছে তারা।
মামলার বিস্তারিত:-
পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী এলন মাস্ক জানিয়ে ছিলেন টুইটারের প্রতি শেয়ারে তিনি ৫৪.২০ ডলার দেবেন। কিন্তু সেই চুক্তি থেকে তিনি পিছু হটেছেন। তাঁর দাবি, এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সংস্থা মাস্ককে ফেক ও স্প্যাম অ্যাকাউন্ট নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে পারেনি, ফলে ক্রয়ের কাজটি করা সম্ভব নয়। অনেক দিন ধরে চেয়ে চেয়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন তাঁরা, তার পর চুক্তি থেকে পিছু না হটে কোনও উপায় ছিল না। যুক্তি শ্রীমাস্কের।
টুইটারের আবার যুক্তি আলাদা। তারা বলছে, বাজারের পরিস্থিতি বেগতিক দেখে টাটা করেছেন ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা টেসলার সিইও মাস্ক। এখন টুইটার কেনাটা তাঁর পক্ষে লাভজন হবে না বলে মনে করেই ভোল বদলেছেন। টুইটার এও বলেছে, টেসলার শেয়ার গত নভেম্বর থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার হ্রাস পেয়ে গিয়েছে। এই শেয়ারের অর্থই তিনি টুইটারে বিনিয়োগ করার কথা ভেবেছিলেন আগে, কিন্তু সেখানে ধাক্কা খেয়ে তাঁর পা কাঁপছে।
আরও পড়ুন- পলিয়েস্টারে তৈরি জাতীয় পতাকায় ঢাকা পড়ে যাচ্ছে খাদির উদ্যোগ, কী ভাবে?
অনেকেই বলছেন, টুইটারের এই যুক্তি একেবারে ষোলআনাই ঠিক। এখানে বলে নিতে হবে, প্রাথমিক এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী যে চুক্তি ভঙ্গ করবে, তাকে টার্মিনেশন ফি হিসেবে এক বিলিয়ন ডলার দিতে হবে। এক বিলিয়ন বলতে ১০০ কোটি। মোটেই কম কিছু নয়। কিন্তু কোথায় ৪৪ বিলিয়নের স্বপ্ন, আর কোথায় এক বিলিয়ন। চাঁদের সঙ্গে কোনও দিন চন্দ্রের প্রতিফলনের তুলনা চলে নাকি! ফলে মরিয়া টুইটার। চুক্তিটা করতেই হবে এলনকে, এই আবেদন আদালতে জোরদার মেজাজেই জানিয়েছে তারা।
কবে বিচার শুরু হবে?
টুইটার চাইছে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হোক, এটাই তো তাদের পক্ষে স্বাভাবিক। তারা ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে চার দিনের বিচারকার্যের প্রস্তাব করেছে।
ডেলাওয়্যারের কোর্ট অফ চেন্সারি কী?
কোর্ট অফ চ্যান্সারির প্রতিষ্ঠা ১৭৯২ সালে। গ্রেট ব্রিটেনের হাইকোর্ট অফ চ্যান্সারির মতোই এটি। ২৫০ বছরের পুরনো কোর্ট অফ চ্যান্সারি দেওয়ানি মামলার বিচার করে। এর মধ্যে রয়েছে সম্পত্তির সীমানা এবং জমি কেনাবেচা, এস্টেট, ট্রাস্ট, উইল সংক্রান্ত মামলা। ব্যবসা নিয়ে নানা ঝামেলাও আদালতে ওঠে মাঝে মধ্যেই। এক সংস্থা অন্য সংস্থাকে কিনে নেওয়া নিয়ে উদ্ভূত জটিলতা, শেয়ারহোল্ডারদের নানা অভিযোগ এই আদালতে এসে ঝাঁপ কাটে।
মাস্ক কি এর আগে কাঠগড়ায় উঠেছেন?
কোর্ট অফ চ্যান্সারিতে মাস্ক মোটেই কোনও অপরিচিত কেউ নন। এর আগে, এই বছরেরই শুরুতে সোলারসিটি নামে একটি সংস্থায় মাস্কের ভূমকা প্রসঙ্গে আদালতে মামলা হয়। মাস্ক সংস্থাটিকে কিনেছিলেন ২০১৬ সালে। ধুঁকতে থাকা এই সোলার প্যানেল সংস্থায় মাস্কই সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার এবং বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। যদিও মামলায় মাস্ক জিতে গিয়েছেন। টুইটার মামলায় বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, এই সংস্থাটি কেনার ব্যাপারে আদালত মাস্ককে জোর করতে পারে কিনা, এটি কিন্তু সংশয়াচ্ছন্ন।
বহু সময়তেই আদালত বলে থাকে, ক্রেতা তুমি নিয়মভঙ্গ করেছ, কিন্তু এর সমাধান হিসেবে টার্মিনেশন ফি-ই ধার্য করা যায়, চুক্তি করার জন্য বাধ্য কতটা করা যায় তাকে, সেই প্রশ্ন থাকছে। তবে, আদালত যে বাধ্য করতে পারে না, তা নয়। সেই উদাহরণও রয়েছে। ২০০১ সালে পোল্ট্রি জায়ান্ট টাইসন ফুডসকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
মিটপ্যাকেট সংস্থা আইবিপি-কে ক্রয়ের জন্য যে চুক্তি করেছিল টাইসন তা সম্পূর্ণ করতে বলেছিল আদালত। চুক্তির আর্থিক মূল্য ছিল ৩.২ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়াও সাম্প্রতিক উদাহরণও রয়েছে এমন। এবং সে সব পুঁজি করেই আশায় বুক বেঁধে রয়েছে টুইটার। মাস্কের মতো ধনী ব্যক্তিকে এই চুক্তি করতে বাধ্য করা মানে বাঘকে বন্দি করা, ফলে সেইটি মোটেই সহজ কিছু হবে না।
Read full story in English