কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন একটি বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রিগোষ্ঠী ৯৫০০ শত্রুসম্পত্তি নিষ্পত্তির বিষয়ে দেখভাল করবে। সরকারের অনুমান এর মোট মূল্য ১ লক্ষ কোটি টাকা।
উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকদের মাথায় রেখে দুটি কমিটি তৈরি করা হবে, যে কমিটি এই অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করবে।
শত্রু সম্পত্তি নিষ্পত্তি করতে অমিত শাহের তত্বাবধানে কমিটি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী হংসরাজ আগির ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি লোকসভায় জানিয়েছিলেন এ দেশে পাকিস্তানি নাগরিকরা মোট ৯২৮০ শত্রু সম্পত্তি ফেলে গিয়েছেন, ১২৬টি সম্পত্তি ফেলে গিয়েছেন চিনা নাগরিকরা। সরকার হিসেব করে দেখেছে এই সম্পত্তির মোট মূল্য আমুমানিক এক লক্ষ কোটি টাকা।
শত্রু সম্পত্তি কী?
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময়ে ভারত থেকে পাকিস্তানে মানুষের অভিবাসন ঘটেছিল। ১৯৬২ সালের ভারতের প্রতিরক্ষা আইনের আওতায় যে ভারতের প্রতিরক্ষা বিধি তৈরি হয়, সে অনুসারে ভারত সরকার সেই সম্পত্তি ও যেসব সংস্থা পাকিস্তানি জাতীয়তা গ্রহণ করেছিল, সেগুলি নিয়ে নেয়।
এই সম্পত্তিগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ন্যস্ত ছিল। একই ভাবে ১৯৬২ সালের চিন ভারত যুদ্ধের সময়ে যাঁরা চিন চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের সম্পত্তির ক্ষেত্রেও একই বিষয় স্থির হয়।
১৯৯৬ সালের ১০ জানুয়ারি তাসখন্দ ঘোষণায় একটি নতুন বিধি যু্ক্ত করা হয়, যাতে বলা হয় ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে যে সম্পত্তি ও সম্পদ দু দেশে রয়ে গেছে তা ফেরানোর ব্যাপারে আলোচনা করবে।
তবে পাকিস্তান সরকার ১৯৭১ সালেই সেসব সম্পত্তি বিক্রি করে দেয়।
ভারত এই সম্পত্তি নিয়ে কী করছিল?
১৯৬৮ সালে শত্রু সম্পত্তি আইন লাগু হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার এই সম্পত্তির রক্ষক হিসেবে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা এই সম্পত্তির অধিকারী।
কিছু অস্থাবর সম্পত্তিও শত্রু সম্পত্তির আওতায় চিহ্নিত হয়েছে।
২০১৭ সালে সংসদ শত্রু সম্পত্তি বিল ২০১৬ সংসদে পাশ হয়। এই বিলে ১৯৬৮ সালের শত্রু সম্পত্তি আইন ও সরকারি এলাকা (বেআইনি দখলদার উচ্ছেদ) আইন সংশোধন করা হয়।
এই সংশোধিত আইনে শত্রু ও শত্রু সংস্থা - এ দুটি বিষয়ের সংজ্ঞা ব্যাপকতর করা হয়, যাতে শত্রুর আইনি উত্তরাধিকারীদেরও এর অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তিনি ভারতের নাগরিক হোন বা অন্য কোনও এমন দেশের শত্রু হোন, যে দেশ শত্রু নয়, এবং শত্রু সংস্থাকেও চিহ্নিত করা যায়, এবং শত্রু কোম্পানির উত্তরাধিকারী সংস্থাকেও অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তা সে সংস্থার সদস্য বা অংশীদাররা যে দেশেরই হোন না কেন।
সংশোধিত আইনে বলা হয়, শত্রু বা শত্রু সংস্থা যদি মৃত্যু, বিলোপ, ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া বা জাতীয়তার পরিবর্তন হেতু শত্রু না থাকে, অথবা আইনি উত্তরাধিকারী যদি ভারতের নাগরিক হয়, বা এমন কোনও দেশের নাগরিক হয় যা শত্রু নয়, তাহলেও শত্রু সম্পত্তি রক্ষকের কাছেই গচ্ছিত থাকবে।
রক্ষক, কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে শত্রুসম্পত্তি আইনানুসারে বিক্রি করতে পারেন, এবং সরকার এ জন্য রক্ষককে নির্দেশ দিতে পারে।
এই সংশোধনীগুলি আনা হয়েছে কেন?
পাকিস্তান বা চিনে যাঁরা চলে গিয়েছেন, তাঁদের শত্রু সম্পত্তির উত্তরাধিকারের দাবি বা বদলির দাবি আটকাতে এই পদক্ষেপ।
বিলে লেখা হয়েছিল, "সম্প্রতি বিভিন্ন আদালতের দেওয়া বিভিন্ন রকম রায়ের ফলে ১৯৬৮ সালের শত্রু সম্পত্তি আইনের আওতায় ভারত সরকার ও রক্ষকদের ক্ষমতার উপর প্রভাব পড়ছে। আদালতের নানারকম রায়ের কথা মাথায় রেথে রক্ষকদের আইন অনুসারে কাজ ব্যাহত হচ্ছে।"
আদালতের রায়ে কী বলা হয়েছিল?
একটি বড়সড় রায় দেওয়া হয়েছিল পূর্বতন মহমদাবাদের রাজার সম্পত্তি মামলায়। তিনি হজরতগঞ্জ, সীতাপুর ও নৈনিতালের বিশাল সম্পত্তির অধিকারী ছিলেন। দেশভাগের পর রাজা ইরাক চলে যান এবং বেশ কয়েকবছর পর লন্ডনে বসবাস করতে শুরু করেন। তাঁর স্ত্রী ও পুত্র মহম্মদ আমির মহম্মদ খান দেশে থেকে গিয়েছিলেন এবং দেশের নাগরিক হিসেবে স্থানীয় রাজনীতিতেও যোগ দেন।
১৯৬৮ সালের শত্রু সম্পত্তি আইন লাগু করে ভারত সরকার, রাজার সম্পত্তি শত্রুসম্পত্তি বলে চিহ্নিত হয়।
রাজার মৃত্যুর পর, তাঁর পুত্র ওই সম্পত্তি দাবি করেন। ৩০ বছর মামলা চলার পর শীর্ষ আদালতে বিচারপতি অশোক ভূষণ ও আলতামাস কবীরের বেঞ্চ ২০০৫ সালের ২১ অক্টোবর পুত্রের পক্ষে রায় দেয়।
এর পর শুরু হয় আদালতে অজস্র আবেদন। যাঁরা পাকিস্তান চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের খাঁটি ও জাল আত্মীয়রা উপহারের ডিড পেশ করে শত্রু সম্পত্তির দাবি করতে থাকেন।
২০১০ সালের ২ জুলাই ইউপিএ সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে এবং রক্ষকের কাছ থেকে সম্পত্তি হস্তান্তরের ব্যাপারে আদালতকে নিষেধ করে। এর ফলে ২০০৫ সালের রায় বাতিল হয়ে যায়, রাজার সম্পত্তি ফেরত দিতে হয়।
২০১০ সালের ২২ জুলাই লোকসভায় একটি বিল পেশ হয় এবং তারপর ২০১০ সালের ১৫ নভেম্বর সংশোধিত বিল পেশ হয়। বিল যায় স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে। পঞ্চদশ লোকসভায় সে বিল পাশ হয়নি।
২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতের রাষ্ট্রপতি শত্রু সম্পত্তি অর্ডিন্যান্স পাশ করেন, যা ২০১৭ সালে বিল আইনে পরিণত হবার পর তার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।