Advertisment

Explained: সেলিব্রিটির নার্সিসিজমে আত্মহত্যার উসকানি, সাবধান না হলেই বিপদ

সাধারণের উপরও পড়েছে কালো ছায়া

author-image
Nilarnab Chakraborty
New Update
Actress Pallavi Dey Death: Father alleges murder of her daughter

একের পর এক মৃত্যুর খবর, বেলাগাম জীবনই কি কাল?



নিজেকে কতটা ভালবাসেন আপনি? কী যে বলেন, সে ভালবাসার সীমা-পরিসীমা নেই। সীমার মাঝে অসীম।…

Advertisment

সেই প্রবল ভালবাসা থেকেই নিজের প্রতি প্রচণ্ড অতৃপ্তি আসতে পারে, এসে যায়। নিজেকে যে ভাবে দেখতে চাইছেন, চার পাশটা যা হলে, নিজেকে নিজের মতো করে প্রকাশ করতে পারবেন বলে মনে করছেন তা থেকে চতুর্দিক বহু দূরে। তাই অপনাকে অপনি অপছন্দ করতে শুরু করছেন। হয়তো অজান্তেই। সেই অপছন্দের আগুনে আস্তে আস্তে নিজেকে দগ্ধ করছেন। পরিণতিটা আত্মহনন হতে পারে, হয়ও তো। এই তো কয়েক দিন আগে টিভি সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পল্লবী দে-র ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল। এই ঘটনায় তোলপাড় চলছে। কাটাছেঁড়াও প্রচণ্ড।

২০২০-র জুনে, হিন্দি ছবির তারকা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যা নিয়েও আবেগের সুনামি দেখা গিয়েছিল। আত্মঘাতী সেলিব্রিটির তালিকাটা সারা পৃথিবীতেই বিরাট, তাতে ফিল্মস্টার কবি দার্শনিক কে নেই। আসলে আত্মপ্রেম সকলেরই থাকে, কিন্তু রঙিন আলো, খ্যাতির হাওয়া সেলিব্রিটিদের আত্মপ্রেম বাড়িয়ে তোলে। আত্মপ্রেমে পাগলপারা পরিস্থিতিকে নার্সিসিজম বলা হয়ে থাকে। নার্সিসিজম এই শব্দটির জন্ম বহু পুরনো রোমান কবি ওভিদের লেখায়। মেটামরফোসিস গ্রন্থে একটি পুরাণকাহিনির নবজন্ম দিয়েছিলেন ওভিদ। কী সে কাহিনি?

রোমান দেবরাজ জুপিটার নানা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ত। জুনো, জুপিটারের স্ত্রী, এ ব্যাপারে স্বামীকে চোখে চোখে রাখতে চাইত। জুপিটার অন্য নারী সঙ্গ করছে এমন জানতে পারলে অকুস্থলে পৌঁছতে চেষ্টা করত, যাতে জুপিটারকে হাতে-নাতে ধরে ফেলা যায়। কিন্তু ইকো নামে এক পরি করত কি জুনোকে নানা কথায় ভুলিয়ে দিত, আর সেই ফাঁকে জুপিটার সেখান থেকে ভোঁ-ভাঁ হয়ে যেত। এতেই জুনো রেগে-মেগে ইকো-কে অভিশাপ দিল যে, সে নিজের কথা বলতে পারবে না, কেউ যা বলবে, তার প্রতিধ্বনিই সে করবে। ইকো করবে। এর পর ইকো প্রেমে পড়ল নার্সিসাস নামে এক অপরূপদর্শন তরুণের। নার্সিসাস আবার নিজের রূপে পাগল।

আরও পড়ুন ঝুলি থেকে বেরোল বিড়াল! পল্লবী-সঙ্গী সাগ্নিকের জন্য আত্মহত্যা করেছিল আরও এক তরুণী

এবার কী হল? প্রতিধ্বনি প্রবণ ইকো, যা বলছে নার্সিসাস, তারই প্রতিধ্বনি করছে ইকো। হাতিঘোড়া কিছু না বুঝে ইকোকে প্রত্যাখ্যান করল নার্সিসাস, পাগলই হয়তো ভাবল তাকে। এবার প্রতিশোধের দেবী নেমেসিস চিড়বিড়িয়ে নার্সিসাসকে অভিশাপ দিল। বলল, প্রতিবিম্বই প্রাণ নেবে নার্সিসাসের। তার পর, তৃষ্ণার্ত নার্সিসাস জল খেতে গেলে জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে মোহিত হল। মুখ সরাতে পারল না। মোহে তার শরীর গলে গেল জলে। শেষ হয়ে গেল সে। ফুল হয়ে জন্মাল, যার নাম নার্সিসাস। নিজের প্রতি মোহগ্রস্ত কাউকে নার্সিসাস বলা হয়ে থাকে এই গল্পের রসদেই। নার্সিসাস তো আত্মহত্যাই করল, তাই না, তেমনই সেলিব্রিটিদের কেউ কেউ করে থাকেন।

আর আম আদমি? কুঁজোরও চিৎ হয়ে শোয়ার শখ থাকে। ভিতরে ভিতরে গুঞ্জন করে-- চিৎ হও গো, চিৎ হও…। সোশ্যাল মাধ্যমও সেই দরজাটা খুলে দিয়েছে। সাধারণের সেলিব্রিটি হওয়ার শখ আরও চেপে বসেছে। কানা চোখে দিয়ে কাজল, নিজের রূপে নিজে পাগল হওয়ার বাসনা এখন উড়ন্ত, দুরন্ত, দুর্দান্ত। আঙুল ফুলে কলাগাছ। সুশান্ত সিং রাজপুত আত্মহত্যার আগে নাকি বার বার নিজেকে সার্চ করেছিলেন গুগলে। সাধারণ জনও নিজেকে যখন-তখন খুঁজছেন গুগলের ভিতর, দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৪ হাজার বার ফেসবুক খুলে দেখছেন নিজ-পিক-এ লাইক কত হল, কমেন্ট কত হল, গুগল সার্চে কি তাঁকে দেখাচ্ছে নাকি, আহা এই তো আমি, কী আনন্দ। মাঝ রাতে উঠেও চলছে সার্চপর্ব। আর লাইক যদি কম পড়ে, তা হলে দুঃখ, রিনরিন বেদনা, ঢংঢং ডিপ্রেসশন, সারা রাত এপাশ ওপাশ। স্বপ্নের পতন, ধপাস।

আরও পড়ুন Explained: বৈবাহিক ধর্ষণের আইন কী? দিল্লি হাইকোর্টের রায়ে শোরগোল কেন?

মনোবিদ নীলাঞ্জন বসুর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, নিজের গুরুত্ব কতটা সেইটা দেখার জন্য বার বার নিজের প্রোফাইল সার্চ করা হয়ে থাকে। একাকীত্ব থেকে এই সমস্যা বাড়তে পারে। ইন্টারনেটের নেশা, সোশ্যাল মিডিয়ার সম্মোহন এর জন্য দায়ী। এ থেকে মুক্তি পেতে গেলে ভার্চুয়াল জগৎ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে মাঝেমধ্যে, ধীরে ধীরে। বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করতে হবে। এখন ফেসবুকে ছবি দেওয়ার জন্য কেউ বেড়াতে যান। কিন্তু উল্টোটাই স্বাভাবিক, তাই না, সেটাই করতে হবে।

মনোবিদ রাজর্ষি নিয়োগীর বক্তব্য়ও প্রায় সমান। বলছেন, নিজের উপর নজর রাখুন। অন্য কোনও মানসিক সমস্যা এই ধরনের কাজ, নিজের প্রোফাইল বার বার দেখতে থাকা বাড়িয়ে দিতে পারে। সোশ্যাল সাইটে নয়, সামাজিক হোন। মনে রাখতে হবে, ভার্চুয়াল জগতে এক আশ্চর্য বিভ্রম তৈরি করা হয়ে থাকে। যা আপনার নার্সিসিজমের কানাগলিতে ঢুকিয়ে দেবে। ফিরে ফিরে যাবেন নিজের কাছে, নিজেকে বারবার আয়নায় দেখার মতো।

এক্সপেক্টেশনের চূড়ান্ত বিন্দুতে আপনাকে নিয়ে যেতে থাকবে যা। হারিয়ে ফেলতে পারেন রক্তমাংসের সম্পর্কগুলির পরিচর্যার ক্ষমতা। তার পর যখন উপর থেকে পড়বেন, তখন তো সব শেষ।

Pallavi Dey Bengali Actress
Advertisment