দাম বাড়ছে দুদ্দাড় করে। খাদ্যপণ্যের দামও তাতে সামিল হয়েছে। ২০২০ সালের শেষ থেকে যে আন্তর্জাতিক মুদ্রাস্ফীতির মহাযাত্রা শুরু হয়েছে, তার ধরতাইটা দিয়েছিল ভোজ্য তেল। মুদ্রাস্ফীতির শেষটাও ভোজ্যতেলের হাত ধরেই হবে নাকি? তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চালাতেই পারেন। কারণ ভোজ্য তেলের দাম কমছে। বেশ ভাল মাত্রায়। সাম্প্রতিক হিসেবেই তা স্পষ্ট একেবারে ছবির মতো।
রাষ্ট্রপুঞ্জের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশনের ফুড প্রাইজ ইনডেক্স মার্চে সর্বকালীন রেকর্ড করেছে। ১৫৯.৭ পয়েন্টে পৌঁছেছে। এটা হয়েছে, বুঝতেই পারছেন অনেকটাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায়। রুটির ঝুড়িতে আগুন লাগলে যে খাবারের দাম বাড়বে, সেটা বলাই বাহুল্য।
তার পর জুনে কী হল? দাম কমল। একটু হয়েছে তো কী, তবুও… ফুড প্রাইজ ইনডেক্স নেমে পৌঁছেছে ১৫৪. ২ পয়েন্টে। ছবিটা স্পষ্ট ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রেও। ভেজিটেবল অয়েলের দাম ২৫১.৮ থেকে ২১১.৮ পয়েন্টে পৌঁছেছে। কমেছে ১৫.৯ শতাংশ। মানে, মার্চ থেকে জুনের কথা বলছি। ২০২০-র এপ্রিল থেকে ২০২২-এর মার্চ পর্যন্ত চড়চড়িয়ে ভেজিটেবল অয়েলের দাম বেড়ে গিয়েছে। ৮১.২ থেকে হয়েছে ২৫১.৮ পয়েন্ট। তার পর দাম হ্রাসমানতায় গিয়েছে।
এই সুযোগে একটু পাম তেলের দামের চর্চা করা যাক। অপরিশোধিত পাম অয়েল, যাকে ক্রুড পাম অয়েল বলা হয়, মানে সিপিও, বার্সা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জে প্রতি টন ৭,২৬৮ রিঙ্গিটে (মালয়েশিয়ার মুদ্রা) বিক্রি হয়েছে মার্চের ৯ তারিখ। এই শুক্রবার, সেইটা কমে কোথায় এসেছে শুনুন, ভাল লাগবে আবার চিন্তাও হবে। প্রতি টনে দাম হয়েছে ৪, ১৫৭ রিঙ্গিট। এর অর্থ হল, দাম কমেছে ৪২.৮ শতাংশ।
আর ভারতে? চার মাস আগে ভারতে ক্রুড পাম অয়েলের দাম ছিল টন পিছু ২ হাজার ডলার। রিফাইনড ব্লেন্ডেড ডিয়োডোরাইসড বা আরবিডি পামোলিনের দাম ছিল ১,৯৬০ ডলার, ক্রুড ডিগামড সয়াবিন অয়েলের দাম ছিল ১,৯২৫ ডলার, ক্রুড সানফ্লাওয়ার অয়েলের দাম ২,১০০ ডলার। এই দাম কমে হয়েছে সিপিও ১১৮৫ ডলার, আরবিডি পামোলিন ১১৬০ ডলার, সয়াবিন তেল ১৪৬০ ডলার এবং সানফ্লাওয়ার অয়েল ১৭০০ ডলার প্রতি টনে।
আরও পড়ুন Explained: বিমানসেবিকাদের পর টেকনিশিয়ানরা কর্মবিরতিতে, কেন প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ইন্ডিগো কর্মীরা?
ভারতে এক বছরে ২৩ মিলিয়ন টন ভোজ্য তেল প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ১৩.৫ থেকে ১৪.৫ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল আমদানি করা হয়। দেশে তৈরি হয় ৮.৫ থেকে ৯.৫ মেট্রিক টন। আমদানি করা ভোজ্য তেলের মধ্যে রয়েছে ৮ থেকে ৯ মেট্রিক টন সয়াবিন তেল, ২ থেকে ২.৫ মেট্রিক টন সানফ্লাওয়ার অয়েল এছাড়াও অন্যান্য তেলও রয়েছে।
ক্রুড পাম অয়েল এবং সানফ্লাওয়ার অয়েলের উপর আমদানি শুল্ক রয়েছে এ দেশে ৫.৫ শতাংশ। আরবিডি পামোলিনের উপর এই শুল্ক রয়েছে ১৩.৭৫ শতাংশ। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার ২ মেট্রিক টন পর্যন্ত ক্রুড সয়াবিন এবং সানফ্লাওয়ার অয়েল আনার ক্ষেত্রে কোনও আমদানি শুল্ক নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এর উপরে আমদানিতে ওই ৫.৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। দেশে সয়াবিনের দাম এক মাসে ৬৯ হাজার থেকে কমে হয়েছে ৬২ হাজার। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম পড়তে থাকলে তার প্রভাব বাজারে পড়ে, হচ্ছে সেটাই। এটা কৃষকদের দিচ্ছে বিপদ সংকেত। বিশেষ করে এই খারিফ মরশুমে।
আরও পড়ুন Explained: কীভাবে উত্থান ঘটল রাজাপক্ষ পরিবারের, কীভাবেই বা ঘটল পতন
এটা একটা হিসেব থেকে স্পষ্ট হয়ে যাবে, সেটা হল-- আমাদের কৃষি মন্ত্রকের হিসেব বলছে জুলাইয়ের ৮ তারিখ পর্যন্ত ৭৭.৮০ লক্ষ হেক্টর জমিতে খারিফ তৈলবীজ চাষ হয়েছে, যা গত বছর এই সময়ে হয়েছিল ৯৭.৫৬ হেক্টর জমিতে।