উষ্ণতা নিয়ে চিন্তার কোনও শেষ নেই। কিন্তু আমি আপনি একা একা চিন্তা করলে চলবে না। গোটা সমাজ এ নিয়ে কী ভাবছে, তার উপর নির্ভর করছে সব কিছু। যৌথ চিন্তাটা জরুরি। না-হলে, সব শেষ হয়ে যাবে। আমাদের পৃথিবী রসাতলে যাবে। নেচার পত্রিকার গবেষণা থেকেও তাই বেরিয়ে এসেছে। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া ডেভিসের প্রেসবিবৃতিতে এই বিষয়টিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বক্তব্যটি মোটামুটি আক্ষরিক অর্থে এই রকম: একবিংশ শতাব্দীর শেষে পৌঁছে পৃথিবী কতটা বেশি উষ্ণ হবে, ১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস নাকি ৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তা নির্ভর করছে সমাজের ওপর। মানুষের কী ভাবনা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে, এ নিয়ে তাদের সক্রিয়তা কতটা, রাজনৈতিক দলগুলির ভাবনাচিন্তা কী, তার ওপরই নির্ভর করছে উষ্ণতা বৃদ্ধি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
২০১৫ সালের পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিকে বেঁধে রাখার লক্ষ্য স্থির করা হয় প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে। শিল্পায়ন-যুগের আগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধিতে বেঁধে রাখার চেষ্টা করতে হবে- বলা হয়েছে সেই চুক্তিতে। ১৯৫টি দেশ তাতে সই করে।
উষ্ণায়নে কতটা সক্রিয় বিশ্ব?
উষ্ণায়ন রোখা যাচ্ছে না। তার প্রভাবে নানা কিছু দেখতে পাচ্ছি আমরা। একটি অবশ্যই অকাল বৃষ্টি, বা অতিরিক্ত বর্ষা। রয়েছে একের পর প্রাণীর ভ্যানিস হয়ে যাওয়া। মাত্রাতিরিক্ত দাবানল কিংবা তাপপ্রবাহ। ১৯৫০-২০০০ সাল, শিল্পয়নের যে সময়ের তুলনায় উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়, তার তুলনায় অনেকটা সেলসিয়াস উষ্ণতা বেড়ে গিয়েছে পৃথিবীর। মোটামুটি যা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাতেই ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। বিভিন্ন দেশ, অনেকেই অনেক কথা বলছে। কিন্তু, উষ্ণায়ন রোধের এই প্রক্রিয়ায় সৎ প্রচেষ্টা কমই। মানে, ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চলতে গেলে বিভিন্ন যে কার্যক্রম রয়েছে, তাকে প্রকৃত ভাবে মানা হচ্ছে না বলাই যায়।
২০২১ সালে নেচার পত্রিকায় আর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। সেই অনুযায়ী, যদি ১.৫ ডিগ্রির নীচে উষ্ণতাকে বেঁধে রাখতে হয়, বিশ্বের তেল এবং গ্যাস উৎপাদন ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি বছর তিন শতাংশ করে কমাতে হবে। নেট জিরো টার্গেটের বড় বড় ঘোষণাও শোনা গিয়েছে ইতিমধ্যে। যার অর্থ হল, কার্বন যা প্রকৃতিতে ছাড়া হচ্ছে, তাই সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রকৃতিতে কার্বন নির্গমনের প্রভাব পড়ছে না।
আরও পড়ুন- চরম বিপাকে, গ্রেফতার হতে পারেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল
ঘোষণা তো হয়েছে, কাজে কতটা হচ্ছে? যে পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে এর জন্য, তার শুরু কতটা হয়েছে? জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন, ২০৭০ সালের মধ্যে নেট জিরোয় পৌঁছবে ভারত। এই পথে এগিয়ে যেতে গেলে বড় বড় পদক্ষেপ নিতে হবে। কোভিডে ধ্বস্ত অর্থনীতি এখন, কাটিয়ে উঠতে কত সময় লাগবে, কেউ জানে না। ফলে সংস্কারের পদক্ষেপগুলি আদৌ কবে নেওয়া সম্ভব হবে, তা ধোঁয়ার আবর্তে ঢাকা।
বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছিল অক্সফাম। তারা বলেছে, যদি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উষ্ণতা বৃদ্ধিকে আটকে রাখতে হয়, তা হলে কার্বন নির্গমন ২০১০-এর তুলনায় ২০৩০-এর মধ্যে সম্মিলিত ভাবে ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে, যা প্রায় অসম্ভব।
Read story in English