ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস। এটি এখন চিন্তার কারণ। কেরলের ত্রিশূরে ৪৭ বছরের এক জনের মৃত্যু হয়েছে এই ভাইরাসে। কেরলের স্বাস্থ্য দফতর এর ফলে এই ভাইরাসটি নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে। ২০১৯ সালে মালাপ্পুরমে একটি ৬ বছরের শিশুর মৃত্যু হয়েছিল এটির সংক্রমণে। ২০০৬ সালে প্রথম সে রাজ্যে এই ভাইরাসটির সংক্রমণের খবর হয়। এর পর ২০১১ সালে এর্নাকুলামেও এর কামড়ের খবর মেলে।
ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস কী?
ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মূলত কিউলেক্স ভাইরাস এর বাহক। এটি একটি আরএনএ ভাইরাস (single-stranded)। ইয়োলো ফিভার, জাপানি এনকেফেলাইটিসের ভাইরাসের মতো, ফ্ল্যেভিভাইরাস গোত্রের। মশার মাধ্যমে এই ভাইরাস শুধু মানুষের মধ্যে ছড়ায় না, পাখি ও প্রাণীদের মধ্যেও হয় এর সংক্রমণ।
পাখিদের রক্ত এই ভাইরাসের ধাতৃভূমি প্রাথমিক ভাবে। মশারা পাখিদের রক্ত শুষলে তাদের হয়, তার পর, মশার স্যালাইভাতে এই ভাইরাস ঢুকে পড়ে, এবার মশা যখন মানুষকে কামড়ায় তখন তার হয়। এ ছাড়া আক্রান্ত মায়ের গর্ভে থাকা সন্তানের এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়। তবে এখনও জানা যায়নি যে, এর সংক্রমণ এক জনের সংস্পর্শ থেকে অন্য জনের হয় কি না!
ইউএস সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসি বলেছে, এই অসুখ পাখি সহ সংক্রমিত কোনও প্রাণির মাংস খেলে হয় না। তবে পুরোপুরি রান্না করা মাংস খবারের কথা বলে সিডিসি, সাবধানের মার নেই তাই না! এই ভাইরাসের বেড়ে ওঠার কাল-- ২ থেকে ৬ কিংবা ১৪ দিন। তবে যারা ইমিউনোকম্প্রোমাইজড, মানে যাঁদের রোগপ্রতিরোধশক্তি একেবারে কম, তাদের ক্ষেত্রে এই ইনকিউবেশন পিরিওড চলতে পারে বেশ কয়েক সপ্তাহ। আর মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ নিয়ে WHO কী বলেছে? তাদের স্পষ্ট কথা, এখনও পর্যন্ত সাধারণ স্পর্শ থেকে এই ভাইরাস ছড়ানোর কোনও খবর মেলেনি।
আরও পড়ুন Explained: গায়ক থেকে রাজনীতিবিদ, গ্যাংস্টারের গুলির বলি, কে এই সিধু মুসেওয়ালা?
উপসর্গ
এই অসুখ ৮০ জনের ক্ষেত্রে উপসর্গহীন। বাকিদের অনেকেরই জ্বর হয়, যাকে ওয়েস্ট নাইল জ্বর বা ওয়েস্ট নাইল ডিজিস বলে। এ ছাড়াও মাথাযন্ত্রণা, ক্লান্তি ভাব, গায়ে-ব্যথা, বমি বমি ভাব, চর্মরোগ, গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে। প্রবল পরিস্থিতি হয়ে এই অসুখ স্নায়ুর উপর হামলা চালায়। ওয়েস্ট নাইল এনকেফেলাইটিস, মেনিনজাইটিস অথবা ওয়েস্ট নাইল পোলিওমাইলাইটিস হতে পারে, অথবা ফ্ল্যাসিড প্যারালাইসিস হতে পারে।
আরও পড়ুন Explained: আরিয়ানের মুক্তিতে লাইফলাইন নবাবের, ওয়াংখেড়ে কি এবার বোল্ড আউট?
কবে এই ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ?
প্রথম মহিলাদের মধ্যে এর সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল উগান্ডায়, ১৯৩৭ সালে। ১৯৫৩ সালে নীলনদের বদ্বীপ অঞ্চলে এর সংক্রমণ দেখা যায় পাখিদের মধ্যে, কাক, ঘুঘু এবং পায়রাদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। ১৯৯৭ সালের আগে মনে করা হত এই ভাইরাস পাখিদের মৃত্যুর কারণ হয় না, কিন্তু ৯৭-এ ইজরায়েলে মৃত্য হয়েছিল নানা প্রজাতির পাখির, যাদের এই এনকেফেলাইটিস এবং প্যারালাইসিসের উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। WHO-এর তথ্য় অনুযায়ী, ৫০টি দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণের খবর মিলেছে এ পর্যন্ত।
ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস বা ডবলিউএনভি-র অ্যান্টিবডি প্রথম ধরা পড়ে মুম্বইয়ে, ১৯৫২ সালে। এবং দেশের দক্ষিণ, মধ্য এবং পশ্চিম অংশ থেকে এই ভাইরাসে সংক্রমণের খবর মিলেছে।