রকেটে ব্যবহৃত সব জ্বালানীর মধ্যে হাইড্রোজেনই সবচেয়ে বেশি বল (থ্রাস্ট) প্রয়োগ করতে পারে। পৃথিবীর মাটি ছেড়ে যাওয়ার জন্য এই থ্রাস্ট খুব দরকার। কিন্তু হাইড্রোজেন বায়বীয় অবস্থায় ব্যবহার করাও বেশ কঠিন। অতএব তরল হাইড্রোজেন ব্যবহার করা হল।
রকেটে ব্যবহৃত সব জ্বালানীর মধ্যে হাইড্রোজেনই সবচেয়ে বেশি বল (থ্রাস্ট) প্রয়োগ করতে পারে। পৃথিবীর মাটি ছেড়ে যাওয়ার জন্য এই থ্রাস্ট খুব দরকার। কিন্তু হাইড্রোজেন বায়বীয় অবস্থায় ব্যবহার করাও বেশ কঠিন। অতএব তরল হাইড্রোজেন ব্যবহার করা হল।
বিগত কয়েকদিন সমগ্র জাতি দীর্ঘ অপেক্ষায় ছিল। চাঁদে পাড়ি দেবে চন্দ্রযান-২। পৃথিবীর মাটি ছাড়ার ঘণ্টা খানেক আগেই বাতিল হয়ে গেল অভিযান। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বাতিল অভিযান, জানিয়েছে ইসরো।
Advertisment
চন্দ্রযান অভিযানের পেছনে রয়েছে দির্ঘ তিন দশকের গবেষণা, অধ্যাবশায়। গত শতাব্দীর নয়ের দশকে ক্রায়োজেনিক প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছিল ভারত। ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত মাত্র দু'বার ক্রায়োজেনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে ভারত। প্রথমবার ২০১৭ সালের ৫জুন, জিস্যাট-১৯ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটে, দ্বিতীয়বার ২০১৮ সালের নভেম্বরে জিস্যাট-২৯ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটে।
তবে মহাশূন্যের রহস্য ওপর ওপর জেনেই খুশি থাকেনি ভারত। রহস্যের গভীরে পৌঁছে গিয়েছে বছরের পর বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে। জিএসএলভি এমকে-৩-এর গল্পটাও পাড় করেছে তিন দশকের ইতিহাস। ক্রায়োজেনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে কম ঝক্কি পোয়াতে হয়নি ইসরোকে। এবার প্রশ্ন হল, ক্রায়োজেনিক প্রযুক্তি কী? খুব কম তাপমাত্রায় পদার্থের আচরণকে কাজে লাগানোর প্রযুক্তিকেই বলে ক্রায়োজেনিক প্রযুক্তি। জিএসএলভি এমকে-৩ রকেটের জন্য এই প্রযুক্তিই চাই। কিন্তু নয়ের দশকে মার্কিন মুলুকের কাছে হাত পাতলে ফিরিয়ে দিল তারা। এখন উপায়? দেশেই তৈরি হল সেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
রকেটে ব্যবহৃত সব জ্বালানীর মধ্যে হাইড্রোজেনই সবচেয়ে বেশি বল (থ্রাস্ট) প্রয়োগ করতে পারে। পৃথিবীর মাটি ছেড়ে যাওয়ার জন্য এই থ্রাস্ট খুব দরকার। কিন্তু হাইড্রোজেন বায়বীয় অবস্থায় ব্যবহার করাও বেশ কঠিন। অতএব তরল হাইড্রোজেন ব্যবহার করা হল। হাইড্রোজেন ( - ২৫০) ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতায় তরল হয়। আর জ্বালানী পোড়াতে শুধু হাইড্রোজেন হলেও চলে না, অক্সিজেনও দরকার। অক্সিজেনের গলনাঙ্ক (-৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। এবার এত কম তাপমাত্রায় রকেটের মধ্যে থাকা অন্যান্য পদার্থের অবস্থারও বেশ খানিকটা পরিবর্তন হয়। সব মিলিয়ে ব্যাপারটা বেশ জটিল।
সোমবার রাতে শ্রীহরিকোটার সামনে জড়ো হওয়া দর্শক
১৯৮০ থেকেই প্রথম বিশ্বের দেশগুলোতে অর্থাৎ সভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এমন কী জাপানের কাছেও ক্রায়োজেনিক প্রযুক্তি ছিল। বাকি দেশগুলোর সঙ্গে কথা বলে সোভিয়েত রাশিয়ার থেকে দু'টি ইঞ্জিন আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। চুক্তি হয়, ইঞ্জিন তো আসবেই, প্রযুক্তিটাও আসবে ভারতে, যাতে ভবিষ্যতে ভারতেই তৈরি করা যায় সব ইঞ্জিন। কিন্তু এখানে এসে বাঁধ সাধল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম (এমটিসিআর) এর নিয়ম দেখিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিল ভারত-রাশিয়ার মধ্যে ইঞ্জিন বিকিকিনি অবৈধ। শেষমেশ ১৯৯৩ সালে চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হল দু'দেশ।
সাত খানা ইঞ্জিন রাশিয়া থেকে এ দেশে এল ঠিকই, কিন্তু প্রযুক্তিটা এল না। এতেও দমল না ইসরো। ক্রায়োজেনিক প্রযুক্তি তৈরির কাজ চলল বছরের পর বছর। ২০১০-এ এল সাফল্য। দু'টি সেকন্ড জেনারেশন রকেট জিএসএলভি উৎক্ষেপণ করল ভারত। একটি রাশিয়া থেকে আনা ইঞ্জিন, অন্যটি স্বদেশি।
আরও বড় সাফল্য এল ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। পরীক্ষামূলক উড়ানে থার্ড জেনারেশন (এমকে-৩) জিএসএলভি উৎক্ষেপণ হল স্বদেশি ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনে।
তারপর ২০১৭, ২০১৮ সালে পর পর দুবার সাফল্য এল। সবচেয়ে বড়ো পরীক্ষা ছিল অবশ্য চন্দ্রযান-২। তবে শেষ মুহূর্তে বাতিল হওয়ায় ফের অপেক্ষা করতে হবে দেশবাসীকে।