আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবসে সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রকাশ করলেন ২০১৮ সালের বাঘশুমারির হিসাব। সেই হিসেব বলছে বিগত চার বছরে ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে দেশের বাঘের সংখ্যা। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের তুলনায় দেশের বাঘের সংখ্যা ২২২৬ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯৬৭।
চার বছর অন্তর অন্তর দেশে বাঘশুমারি হয়। এ'বছরই সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বাঘের সংখ্যা। ২০০৬ সাল থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে বাঘশুমারি চালু হয়েছে। প্রতি চার বছর অন্তরই দেশে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে একটু একটু করে। ২০০৬ সালে দেশে বাঘের সংখ্যা ছিল ১৪১১, ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭০৬। ২০১৪ সালে সংখ্যা বেড়ে হল ২২২৬।
তবে এই সংখ্যা গুলি নিখুঁত নাও হতে পারে। যেমন ২০১৮ সালের বাঘশুমারির (২৯৬৭) ফলাফল প্রকাশ হয়েছে ২৬০৩ এবং ৩৩৪৬ এই দুই সংখ্যার গড় করে।
বাঘশুমারির প্রয়োজন কী?
খাদ্য শৃঙ্খলের একেবারে ওপরে বসে রয়েছে বাঘ। জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করতে ব্যাঘ্র সংরক্ষণ খুব প্রয়োজন। এবার সংরক্ষণ আদৌ ভালো হচ্ছে, না খারাপ, তা-ই ধরা পড়ে বাঘশুমারিতে। বিশেষ করে ভারতের মত উদীয়মান অর্থনীতির দেশে অনেক সময় উন্নয়নের ওপর জোর দিতে গিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ অবহেলিত হয়।
সারা পৃথিবীর ৮০ শতাংশ বাঘ রয়েছে এ দেশেই। গ্লোবাল টাইগার ফোরাম থেকে সময় বেঁধে দিয়ে বলা হয়েছে আগামী ২০২২ এর মধ্যে দেশে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে হবে।
আরও পড়ুন, বর্ষাকাল মাঝপথে, তবু জলাধারে সঞ্চয়ে ব্যাপক ঘাটতি নিয়ে আশঙ্কা
দেশের কোথায় বাঘের সংখ্যা সবচেয়ে বেড়েছে?
মধ্যপ্রদেশে বাঘের সংখ্যা সবচেয়ে বেড়েছে। ২০১৪ সালে সে রাজ্যে বাঘের সংখ্যা ছিল ২১৮। একলাফে ৭১ শতাংশ বেড়ে ২০১৮ সালের বাঘশুমারি অনুযায়ী বাঘের সঙ্খ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২৬। মহারাষ্ট্রে ১৯০ থেকে বেড়ে বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১২। কর্ণাটকে ৪০৬ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২৪। উত্তরাখণ্ডে প্রায় ১০০-এর ওপর বেড়েছে বাঘের সংখ্যা।
তবে বাঘ তো আর রাজ্যের সীমানা মেনে বিচরণ করে না। তাই সংরক্ষণবিদরা বলেন রাজ্যভিত্তিক বাঘশুমারি না করে অঞ্চলভিত্তিক করা উচিত।
ছত্তিসগড়ে বাঘের সংখ্যা অস্বাভাবিক রকম কমেছে। ২০১৪ সালের বাঘশুমারি মাফিক সে রাজ্যের বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪। ২০১৮ সালের গণনায় একলাফে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৯।
চার ধাপে বাঘশুনানি করা হয়েছিল। প্রথম দু'ধাপে বন দফতর ১৫ বর্গ কিলোমিটার করে অঞ্চল ভাগ করে দিয়েছিল। বাঘের পায়ের ছাপ দেখেও কিছুটা আঁচ করা হয়েছে বাঘের সংখ্যা।
তৃতীয় দফায় জিআইএস অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে রিমোট সেন্সিং করে ২ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে ট্র্যাক করা হয়েছে।
মোট ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৪০০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে সমীক্ষা চালানো হয়েছে। ৫ লক্ষ ২২ হাজার ৯৯৬ কিলোমিটার জঙ্গলে পায়ে হেঁটে দেখা হয়েছে। ১ লক্ষ ২১ হাজার ৩৩৭ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চলে ২৬৮৩৮ টি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন, জানেন কি দেশের এই পার্কে ধোনি ও হিমার নামে রয়েছে বাঘ-ভাল্লুক?
বাঘের সংখ্যা বাড়ছে কেন?
নিঃসন্দেহে দেশের বন দফতর অরণ্য সংরক্ষণের ওপর জোর দিয়েছে বিগত কয়েক বছর। দেশে অভয়ারণ্যের সংখ্যা ২৮ থেকে বেড়ে ৫০ হয়েছে শেষ ১৪ বছরে। ঘন জঙ্গল ছাড়াও সংলগ্ন অঞ্চল সংরক্ষিত হওয়ায় বাঘের বিচরণ ভূমি বেড়েছে।
বাঘ শিকারিরদের ওপর কড়া নজরদারি বাড়ার ফলেও অনেকটা বেড়েছে বাঘের সংখ্যা। এই প্রসঙ্গে ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার নীতিন দেশাই জানালেন, ২০১৩ সালের পর থেকে সংগঠিত বাঘ শিকারের কনু ঘটনা ঘটেনি।
পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে বাঘেদের প্রজনন খুব তাড়াতাড়ি হয় বলেই জানালেন ওয়াইল্ডলাইফ ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর ভিবি মাথুর। জঙ্গলের কোর অঞ্চলের বাইরে একটু দূরে দূরে যে গ্রাম গড়ে উঠেছিল, সেখান থেকে সেসব সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সরকারি তত্ত্বাবধানে। ফলে নির্বিঘ্নে বাঘেদের বিচরণ ভূমি বেড়েছে।