ফের ফেলুদা: পর্দায় প্রদোষ সি. মিটারের হিসেব নিকেশ

ফেলুদাতে হাত দিয়েছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। তাঁর ফেলুদা কে হবেন, তা অবশ্য এখনও ঠিক হয়নি। পর্দার ফেলুদার আবির্ভাব অবশ্য এই প্রথম নয়। বড় পর্দা ও ছোট পর্দায় তিনি আবির্ভূত হয়েছেন বেশ কয়েকবার।

ফেলুদাতে হাত দিয়েছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। তাঁর ফেলুদা কে হবেন, তা অবশ্য এখনও ঠিক হয়নি। পর্দার ফেলুদার আবির্ভাব অবশ্য এই প্রথম নয়। বড় পর্দা ও ছোট পর্দায় তিনি আবির্ভূত হয়েছেন বেশ কয়েকবার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বাংলায় আরেকবার ফেলুদা কাহিনি পর্দায় আসতে চলেছে। এবারের রূপকার বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। তবে তাঁর ফেলুদা বড় পর্দায় আসছেন না। তিনি ফেলুদা সিরিজ করছেন ওয়েবের জন্য। আড্ডা টাইমসে চলবে এই নতুন ফেলু কাহিনি।

Advertisment

কে ফেলুদা

ফেলুদা, যাঁকে বলা যায় 'বঙ্গজীবনের অঙ্গ'। এই গোয়েন্দা চরিত্র সত্যজিৎ রায় নির্মিত, সর্বার্থেই। তিনি ফেলুদা কাহিনী লিখেছেন, তিনিই ফেলুদার কাহিনিচিত্রের প্রথম রূপকার। ফেলুদার ছবিও এঁকেছেন তিনি। দীর্ঘদেহী এই গোয়েন্দা চরিত্রে তিনি নিজেও কিছুটা মিশে আছেন বলে মনে করেন বাঙালি পাঠক।

ফেলুদা ওরফে প্রদোষচন্দ্র মিত্রের বাড়ি দক্ষিণ কলকাতার রজনী সেন রোডে। ভিজিটিং কার্ডে পরিচয় লেখা থাকে, 'প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর'। পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিনি রহস্য সমাধান করে থাকেন, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনই ক্লাসিকাল গোয়েন্দার মত তাঁর ইষ্ট। তাঁর পছন্দের সিগারেট প্লেন চারমিনার, তাঁর কোনও কোনও সময়ের সঙ্গী একটি কোল্ট  সেভেন রিভলভার।

Advertisment

আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: বাংলা পক্ষ কি সত্যিই তৃণমূলের বি টিম?

এ হেন রহস্যভেদীর অভিযানের সঙ্গী বলতে কিশোরবয়সী তুতো ভাই তোপসে এবং বয়োজ্যেষ্ঠ বন্ধু লালমোহন গাঙ্গুলি, যিনি পেশাদার রহস্য উপন্যাস লেখক। এ ছাড়া মাঝেমাঝে ফেলুদা সাহায্য নিয়ে থাকেন দূর সম্পর্কের সবজান্তা আত্মীয় সিধুজ্যাঠার।

ফেলুদার সিনেমা

ফেলুদা-নির্ভর প্রথম চলচ্চিত্র ছিল 'সোনার কেল্লা'। এ ছবি মুক্তি পায় ৪৫ বছর আগে, ১৯৭৪ সালে। 'সোনার কেল্লা' ছাড়া সত্যজিৎ নিজে আর মাত্র একটি ফেলুদা-নির্ভর ছবি তৈরি করেছিলেন, 'জয় বাবা ফেলুনাথ'। এ ছবি মুক্তি পায় প্রথম ছবির পাঁচ বছর পরে, ১৯৭৯ সালে। সত্যজিত পরিচালিত দুটি ছবিতেই ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, তোপসের ভূমিকায় সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়, এবং জটায়ুর ভুমিকায় সন্তোষ দত্ত।

সত্যজিতের পর ফেলুদা নিয়ে ছবি করেন তাঁর পুত্র সন্দীপ রায়। সন্দীপ মোট সাতটি ফেলুদা ছবি বানিয়েছেন। সেগুলি হলো, 'বোম্বাইয়ের বোম্বেটে' (২০০৩), 'কৈলাসে কেলেঙ্কারি' (২০০৭), 'টিনটোরেটোর যীশু' (২০০৮), 'গোরস্থানে সাবধান' (২০১০), 'রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য' (২০১১) এবং 'বাদশাহী আংটি' (২০১৪)।

এর মধ্যে 'বাদশাহী আংটি' ছাড়া সব ছবিতেই ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। তোপসের ভূমিকা ভাগাভাগি হয়েছে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং সাহেব ভট্টাচার্যের মধ্যে। সন্দীপের জটায়ু হয়েছেন বিভু চক্রবর্তী। সন্দীপ রায়ের শেষ ফেলুদা ছবি 'বাদশাহী আংটি'-তে ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন আবীর চট্টোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন, ইডেনে দিনরাতের টেস্ট: সন্ধের মুখে বেশি সুইং করবে গোলাপি বল

ফেলুদার চরিত্র সংকট

সত্যজিৎ নির্মিত ফেলুদা সিনেমায় ফেলুদা চরিত্রে অভিনয় করার সুবাদে কাল্ট হয়ে গিয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সত্যজিতের মৃত্যুর পর সন্দীপ যখন ফেলুদা শুরু করেন, গোড়ার দিকে মানানসই ছিলেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। ততদিনে তিনি ইন্ডাস্ট্রির যথেষ্ট পরিচিত মুখ। এবং অভিনয়গুণে তিনি মন জয়ও করেছিলেন। কিন্তু একটা সময়ের পর সংবেদনশীল অভিনেতার মতই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, বয়সের কারণে তাঁকে আর ফেলুদা চরিত্রে মানায় না, ফলে পরিচালকরা তাঁর কথা যেন আর না ভাবেন।

এর পরেই বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে যথাযথ ফেলুদা পাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়। সৌমিত্র ও সব্যসাচী চক্রবর্তীর জুতোয় পা গলানোর হিম্মৎও একটা বড় প্রশ্ন ছিল। সে অবস্থাতেই পরিচালক-অভিনেতা সন্দীপ রায় ও আবীর চট্টোপাধ্যায়ের উভয়পাক্ষিক আগ্রহে তৈরি হয় 'বাদশাহী আংটি'। সে ছবি জনপ্রিয়ও হয়েছিল।

ছোট পর্দায় ফেলুদা

টেলিভিশনে প্রথমবার ফেলুদার উদয় হয়েছিল হিন্দি ভাষায়। নেহাৎ বাঙালি এই গোয়েন্দাপ্রবরকে হিন্দিভাষী চরিত্রে উপস্থাপনের মাধ্যমে সারা ভারতের কাছে পরিচিত করিয়েছিলেন সত্যজিৎ স্বয়ং, ও তাঁর পুত্র। যৌথ পরিচালনায় ১৯৮৬ সালে 'কিসসা কাঠমান্ডু কা' (যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে) দেখানো হয়েছিল জাতীয় টেলিভিশন নেটওয়ার্কে।

টেলিভিশনে ফেলুদা সিরিজ পরিচালনা করেছিলেন সন্দীপ। 'ফেলুদা ৩০' ও 'সত্যজিতের প্রিয় গপ্পো' দেখানো হয়েছিল ডিডি বাংলা চ্যানেলে। 'ফেলুদা ৩০' শীর্ষক সিরিজে ছিল 'বাক্স রহস্য', 'গোঁসাইপুর সরগরম', 'শেয়াল দেবতা রহস্য', 'বোসপুকুরে খুনখারাপি' এবং 'যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে'। 'সত্যজিতের গপ্পো' শীর্ষক সিরিজে দেখানো হয় 'জাহাঙ্গিরের স্বর্ণমুদ্রা', 'ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা', 'গোলাপী মুক্তা রহস্য' এবং 'অম্বরীশ সেন অন্তর্ধান রহস্য'।

আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: ফেসবুকে নতুন কোম্পানি লোগো কেন?

২০০০ সালে ইটিভি বাংলা চ্যানেলে প্রদর্শিত হয় 'ডাক্তার মুন্সীর ডায়েরি'।

১৯৯২ সালে বাংলা ভাষায় টেলিভিশনে ফেলুদাকে নিয়ে আসেন নাট্য পরিচালক বিভাস চক্রবর্তী। তাঁর পরিচালনায় দেখানো হয়েছিল দুটি কাহিনি, 'ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা' এবং 'গোলোকধাম রহস্য'।

২০১৭ সালে বাংলাদেশের এক টিভি চ্যানেলেও ফেলুদাকে নিয়ে সিরিজ তৈরি হয়।

ওয়েবে ফেলুদা

যে আড্ডা টাইমসে সৃজিত মুখোপাধ্যায় ফেলুদা নিয়ে আসছেন, সেই ওটিটি-র কাছে অবশ্য এটা পুরনো ভেঞ্চার। এর আগে ২০১৭ সালে ফেলুদার ভূমিকায় পরমব্রত এবং তোপসের ভূমিকায় ঋদ্ধি সেনের অভিনয়ে 'শেয়াল দেবতা রহস্য' ও 'ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা' প্রদর্শিত হয়েছে। তবে এই সিরিজ তৈরির কপিরাইট প্রথমে ছিল বাংলাদেশের একটি সংস্থা ক্যান্ডি প্রোডাকশনস লিমিটেডের কাছে। আড্ডাটাইমস তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং সেখানকার প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিলের কাছ থেকে বাংলাদেশ ছাড়া সর্বত্র সম্প্রচারের কপিরাইটস কিনে নেয়।

তথ্যচিত্র

ফেলুদা কি বাঙালির শার্লক হোমস? ফেলুদা কি বাঙালির শার্লক হোমস নন? যে ফেলুদাকে নিয়ে বাঙালির চিন্তা ও গর্বের অন্ত নেই, তাঁকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও নির্মিত হয়েছে। ফেলুদার ৫০ বছর উপলক্ষে সে তথ্যচিত্র মুক্তি পেয়েছে এ বছরেরই জুন মাসে। সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়ের তৈরি এই তথ্যচিত্র ভারতে নির্মিত একমাত্র তথ্যচিত্র যা কল্পিত চরিত্র নির্ভর। কিন্তু ফেলুদা কল্পিত হলেও বাঙালির দূরবর্তী তো কেউ নন।

satyajit ray Feluda srijit mukherjee