/indian-express-bangla/media/media_files/pvxcJBDTFl9ZPLecMaFE.jpg)
Haryana-BJP: নয়াব সিং সাইনিকে সামনে রেখেই হরিয়ানায় নির্বাচনে নেমেছিল বিজেপি। (ছবি- টুইটার)
Haryana election results 2024: কংগ্রেস ছক্কা হাঁকাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। কিন্তু, বিধানসভা নির্বাচনের ফল উলটে গেল। হরিয়ানায় পরপর তিনবার ক্ষমতা দখলের পথে বিজেপি। প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, 'এই জয় বিকাশের জয়। হরিয়ানায় ১৩টি বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ১০বারই সরকার পাঁচ বছর পর বদলে গিয়েছে। কিন্তু, এবার হরিয়ানার লোকেরা যেন ঝোলা উপুড় করে ভোট দিয়েছেন। এখানকার জনগণ ফের বিজেপিকে হরিয়ানায় ক্ষমতাতে তো আনলেনই। সবচেয়ে বেশি ভোটেও জয়ী করলেন।' এই তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পথে হাঁটা বিজেপি ৪৬টিরও বেশি আসনে এগিয়ে রয়েছে। বিজেপির এই সাফল্যের পিছনে উঠে আসছে বেশ কয়েকটি কারণ।
১. অ-জাট ভোট একত্রীকরণ
হরিয়ানার জন্য বিজেপির কৌশল ২০১৪ থেকেই পরিষ্কার। আর তারই দৌলতে চার আসন থেকে এই জাঠরাজ্যে তাদের আসনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৭। বিজেপি এখানে গোড়া থেকে অ-জাঠ ভোটকে একত্রীকরণ করতে শুরু করেছিল। তারই অঙ্গ হিসেবে মনোহরলাল খট্টরের মত একজন পঞ্জাবি খত্রীকে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী করেছে। ওবিসি ভোট হরিয়ানার জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ। সেই জন্য, নয়াব সিং সাইনির মত একজন ওবিসিকে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে। তার আগে সাইনিকে হরিয়ানা বিজেপির প্রধান করা হয়েছিল। জাঠরা উচ্চবর্ণ। তারা হরিয়ানার জনসংখ্যার মাত্র ২৫ শতাংশ। ৭৫ শতাংশই অ-জাট ভোটার। তাদের একত্রিত করার চেষ্টা করেছে বিজেপি। তফসিলি জাতিভুক্ত (এসসি) ভোটারদের একত্রিত করতে গ্রামের মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর আশ্রয় নিয়েছে। দলিত পরিবারগুলোকে নিশানা করে 'লক্ষপতি ড্রোন দিদিস' প্রকল্প চালু করেছে। এসব চেষ্টা এসসিদের মন ছুঁয়েছে। অম্বালার একজন আইটিআই ছাত্রের কথায়, 'মোদীজি এসসিদের এগিয়ে নিয়ে যাবেন।'
২. প্রার্থী নির্বাচন
ভূপিন্দর হুডার মত কংগ্রেস নেতারা তাঁদের অনুগত প্রার্থী বাছলেও বিজেপি ৬০টি নতুন মুখ বেছে নিয়েছে। তারা 'অহংকারী' অভিযোগ ওঠায় মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে খাট্টারকেও সরিয়ে দিয়েছে। বদলে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে সকলের কাছের মানুষ নয়াব সিং সাইনিকে বসিয়েছে। উলটোদিকে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি উদয় ভান সেই ১৭ প্রার্থীকে বেছেছিলেন, যাঁরা আগের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। বিজেপি আবারও হুডাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে বলে কংগ্রেসকে তোপ দাগতে শুরু করেছিল। যা কংগ্রেসকে অ-জাট ভোটারদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অ-জাঠ ভোটারদের মধ্যে জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে যে চাকরি এবং সমস্ত সুযোগ জাঠভূমি রোহতকের বাসিন্দারা বেশি পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন- পদার্থবিদ্যায় নোবেল, দুই বিজ্ঞানী কেন পাচ্ছেন পুরস্কার?
৩. উন্নয়ন, ডিবিএস, শৃঙ্খলা
কংগ্রেস নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার আগেই বিজেপি প্রচারে নেমে পড়েছিল। জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে 'মোদী কি গ্যারান্টি' প্রচারে ভ্যানগুলো গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছে। এই সব প্রচার সরকারি প্রকল্পকে তুলে ধরেছে। গ্রামবাসীদেরকে পরিবার পরিচয়পত্রগুলোতে ভ্রম সংশোধনের সুযোগ দিয়েছে। ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (DBTs)-এর মাধ্যমে সরকারি সুবিধা যাতে সরাসরি সুবিধাভোগীদের অ্যাকাউন্টে ঢোকে তা নিশ্চিত করেছে। অম্বালা থেকে দিল্লি পর্যন্ত জিটি রোডের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। এই রোডের ধারের ছয়টি জেলা এবং ২৫টি আসন এলাকার উন্নতি ঘটিয়েছে। অপরাধের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করেছে। তাতেই ব্যালট বাক্সে প্রতিদান মিলল বলে, বিজেপি নেতারা মনে করছেন।
৪. বিরোধী ভোট ভাগ
লোকসভা নির্বাচনের বিপরীতে, কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আলাদাভাবে লড়াই করেছিল। বহুজন সমাজ পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোকদল এবং আজাদ সমাজ পার্টির সঙ্গে জোট বেঁধে জেজেপির লড়াইয়ে ভোট ময়দানে ভিড় বেড়েছিল। অনেক নির্দল প্রার্থীও মাঠে নেমেছেন। এটি বিজেপি-বিরোধী ভোটকে বিভক্ত করেছে, ফলে বেশ কয়েকটি আসনে কংগ্রেসের অপ্রত্যাশিত পরাজয় হয়েছে।
আরও পড়ুন অ-জাঠ ভোটে হরিয়ানায় কুপোকাত কংগ্রেস, বাজিমাত বিজেপির
৫. ভোটের প্রচার এবং মেশিনারি
বিজেপি প্রচারে কোনও খামতি রাখেনি। ১৫০টিরও বেশি সমাবেশ করেছে, অনেকগুলি প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ করেছেন। কংগ্রেস যেখানে মাত্র ৭০টি সমাবেশ করেছে। বিজেপির নির্বাচনী বার্তা কংগ্রেসের সঙ্গে তীব্রভাবে বিপরীত। রাহুল গান্ধী যখন কৃষকদের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন এবং তাঁদের আম্বানি এবং আদানির মতো শিল্পপতিদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছিলেন, তখন তাঁর সমাজতান্ত্রিক বক্তব্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং ঊর্ধ্বমুখী মোবাইল ভোটারদের সাথে অনুরণিত নাও হতে পারে।