Advertisment

হরিয়ানায় এনআরসি: বাস্তব প্রেক্ষিতগুলি কী কী?

আধিকারিকদের মতে, হরিয়ানার নুহ এবং ফরিদাবাদ জেলায় প্রায় ১৫০০ রোহিঙ্গার বাস। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Covid-19 in India, Corona india, Haryana, ML Khattar, ANI

হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর

হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর ঘোষণা করেছেন আসামের মত সে রাজ্যেও এনআরসি লাগু হবে। এর বিভিন্ন প্রেক্ষিতগুলি কী কী?

Advertisment

এই সময়ে ঘোষণা করা হল কেন?

মুখ্যমন্ত্রী রবিবার হরিয়ানা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এইচ এস ভাল্লার সঙ্গে রবিবার দেখা করেন। বিজেপির যে মহা জনসম্পর্ক অভিযান চলছে, তার আওতায় তিনি বেশ কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ভাল্লা জানিয়েছেন, তিনিই মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যে এনআরসি লাগু করার পরামর্শ দেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ভাল্লা বলেন, "আমি যথন হরিয়ানা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ছিলাম, অনেক রকম অসামাজিক ঘটনার কথা আমার কানে এসেছে, যেগুলি সম্ভবত বহিরাগতদের দ্বারা সংঘটিত। সে কারণে আমি এ ধরনের অসামাজিক লোকজনকে চিহ্নিত করার প্রস্তাব দিয়েছি।" বিচারপতি ভাল্লার সঙ্গে সাক্ষাতের পর মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে এন আর সি লাগু করার কথা ঘোষণা করেন। তবে বিরোধীরা বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে এই ঘোষণার পিছনে রাজনৈতিক চাল দেখতে পাচ্ছে।

আরও পড়ুন, ‘আদালতেই প্রমাণ দিতে হলে এত খরচ করে এনআরসির কী প্রয়োজন?’, প্রশ্ন বিজেপি সাংসদের

হরিয়ানায় কি এখনই এনআরসি লাগু হবে?

না। এখনই এনআরসি লাগু করার ব্যাপারে সরকার কোনও ইঙ্গিত দেয়নি। বিচারপতি ভাল্লা বলেছেন তিনি আসামে গিয়ে এনআরসি-র বিভিন্ন প্রেক্ষিত খতিয়ে দেখবেন। খতিয়ে দেখার পর বিচারপতি ভাল্লা সরকারের কাছে একটি রিপোর্ট জমা দেবেন। তার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। বিধানসভা ভোটের জন্য আদর্শ আচরণবিধি লাগু হবে খুব শীঘ্রই, ফলে এ পর্যায়ে এনআরসি লাগু করার কোনও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠদের দাবি, আগামী বছরগুলিতে এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ করা হতে পারে।

পুলিশ আধিকারিকরা কী বলছেন?

আধিকারিকদের মতে, হরিয়ানার নুহ এবং ফরিদাবাদ জেলায় প্রায় ১৫০০ রোহিঙ্গার বাস। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখছে। পুলিশের এক সিনিয়র আধিকারিক বলেছেন, "আমরা সকলকেই স্বাগত জানাই তবে কিছু অবাঞ্ছিত লোকজন নিরাপত্তার পক্ষে ঝুঁকিবহুল হয়ে দাঁড়ায়। এ কথাও মাথায় রাখতে হবে হরিয়ানা দেশের রাজধানীর অত্যন্ত নিকটে অবস্থিত।"

সমালোচকরা কী বলছেন?

হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুড়া এ প্রস্তাবের বিষয়ে কোনও আপত্তি তোলেননি, তবে স্বরাজ ইন্ডিয়ার হরিয়ানা ইউনিটের সভাপতি রাজীব গোডারা বলেছেন "এই প্রচেষ্টা কর্মহীনতা, কৃষিক্ষেত্রে সংকট, দলিত ও মহিলাদের উপর অত্যাচার এবং রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রের খারাপ অবস্থা থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টামাত্র।" পেশায় আইনজীবী গোডারা বলেছেন, "ভোটের আগে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য আবেগের রাজনীতি করতে চাইছে।"

আরও পড়ুন, প্রয়োজনে উত্তরপ্রদেশেও লাগু হবে এনআরসি: যোগী আদিত্যনাথ

পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট সদস্য ডক্টর অজয় রঙ্গাও বলেছেন সরকারের উচিত শুরুতে শিক্ষা ও চাকরির মত ক্ষেত্রগুলিতে নজর দেওয়া। রঙ্গা বলেন, "আসামের পরিস্থিতি আলাদা, সেখানে বিদেশ থেকে অভিবাসন ঘটেছে, কিন্তু হরিয়ানায় তেমন কিছু ঘটেনি। এ ছাডা়ও রাজ্যে বর্তমানে সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধের কোনও ঝুঁকিও নেই। পরিচিতির জন্য নাগরিকদের আধার কার্ড এবং রেশন কার্ড রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এনআরসি-র মত কোনও ব্যবস্থা লাগু করতে গেলে প্রচুর পরিমাণ অর্থেরও প্রয়োজন। ফলে মনে হচ্ছে না হরিয়ানার পক্ষে এ বিষয়টি খুব ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত হবে।"

এর পর কী?

দি হরিয়ানা সরকার শেষ পর্যন্ত এনআরসি লাগু করার সিদ্ধান্ত রাজ্যে নেয়ই তাহলে নাগরিকরা আধার কার্ডের মত আরেকটি কার্ড পাবেন। এক আধিকারিকের কথায়, রাজ্যে পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই সরকার শুরু করে দিয়েছে। সে প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে এনআরসি প্রক্রিয়ার আর অল্পই বাকি থাকবে।

এখনও পর্যন্ত সরকার জানায়নি কোন বিভাগের তরফ থেকে এনআরসি কার্ড রাজ্যবাসীকে দেওয়া হবে। সাধারণত, এ ধরনের প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকে স্বরাষ্ট্র বিভাগ, কিন্তু বাসস্থানের সার্টিফিকেটদিয়ে থাকে রাজস্ব বিভাগ। তবে আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ফ্যামিলি কার্ড এবং কৃষক কার্ডের পর আবার নতুন একটা আইডেন্টিটি কার্ড সেখানে চালু হয় কিনা, তাই দেখার।

Read the Full Story in English

haryana nrc
Advertisment