scorecardresearch

Explained: অবাক কাণ্ড! এত নামডাক, তারপরও সোনালি অস্কার ট্রফির দাম মাত্র ১ ডলার?

প্রথমবারের পুরস্কার জিতেছিল এক কুকুর?

Oscar

অস্কার, এই পুরস্কারের জন্য গোটা দুনিয়া মুখিয়ে থাকে। বিশ্বের সিনেমা জগৎ, সংগীত জগতের সব তারাদের কাছেই অস্কার পাওয়া যেন অমরাপুরীতে দেবরাজের দেওয়া স্বীকৃতি। কিন্তু, এটা কেন? এই গোল্ডেন অস্কার ট্রফির ইতিহাসটা ঠিক কী? কেন এটির মূল্য শুধুমাত্র এক ডলার মাত্র? এখানে যে পুরস্কারটা দেওয়া হয় লম্বা ১৩১/২ ইঞ্চি। সোনার ট্রফি।

আজ সকালেই, আমরা দেখেছি ২৪টি বিভাগে বিজয়ীরা তাঁদের এই অকাদেমি পুরস্কার বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। এবার ভারতের ভাগ্যেও শিকে ছিঁড়েছে। কার্তিকি গঞ্জালভেস গনসালভেস এবং গুনিত মঙ্গারের ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার’ সেরা ডকুমেন্টারি শর্ট ফিল্ম বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে। আর, এসএস রাজামৌলির ‘আরআরআর’ থেকে ‘নাটু নাটু’ সেরা মৌলিক গানের বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে। ভারত এখন তাঁদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। এইরকম একটা পরিস্থিতিতে আমরা বরং দেখে নিই, কীভাবে অস্কারের মূর্তিটি তৈরি হয়েছে। এই মূর্তির নকশা ঠিক কী বোঝাচ্ছে। আর, এর নামটাই বা অস্কার হল কী করে?

মূর্তির নকশা কে করেছেন?
আকাদেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠার পরপরই, সংস্থাটি লস অ্যাঞ্জেলেসের বিল্টমোর হোটেলে একটি নৈশভোজের সময় তার লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করেছিল। সেই লক্ষ্যের অন্যতম ছিল, একটি বার্ষিক পুরস্কার দেওয়া। আর, এই পুরস্কার দেওয়া হবে বলেই সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এমজিএমের আর্ট ডিরেক্টর সেড্রিক গিবন্স ভীষণভাবেই চেয়েছিলেন পুরস্কারের মূর্তিটি হবে একজন নাইট যোদ্ধার। যাঁর শরীরে নাইটদের মত পোশাক থাকবে। হাতে থাকবে খোলা তলোয়ার। আমেরিকান ভাস্কর জর্জ মেটল্যান্ড স্ট্যানলি আবার একটা ত্রিমাত্রিক নকশা দেন। যেখানে রিলের পাঁচটি স্পোককে আকাদেমির পাঁচটি মূল শাখার প্রতীক হিসেবে ধরেছিলেন স্ট্যানলি। এই পাঁচ শাখা হল- অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, প্রযুক্তিবিদ এবং লেখক।

আবার, আকাদেমি কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না-করলেও বিখ্যাত মেক্সিকান অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা এমিলিও ‘এল ইন্দিও’ ফার্নান্দেজ দাবি করেছেন, তিনি হলিউডে থাকাকালীন তাঁকে আকাদেমির পুরস্কারের মূর্তির মডেল করা হয়েছিল।

সে যাই হোক, ১৩১/২ ইঞ্চি লম্বা এবং ৮১/২ পাউন্ড ওজনের পুরস্কারের প্রথম মূর্তিগুলো শক্ত ব্রোঞ্জের ওপর সোনার প্রলেপ দেওয়া ছিল। পরবর্তীতে আকাদেমি সংকর ধাতু ব্রিটানিয়া দিয়ে মূর্তিগুলো বানিয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। ধাতুর ঘাটতি দেখা দেয়। সেই সময় আবার মূর্তিগুলো তিন বছরের জন্য প্লাস্টার দিয়ে তৈরি হয়েছিল। যুদ্ধ থামার পরবর্তী সময়ে, সেটাই ওপরে সোনার পাত দেওয়া মূর্তিতে পরিবর্তিত হয়।

একে অস্কার কেন বলে?
এই পুরস্কারের আসল নাম আকাদেমি অ্যাওয়ার্ড অফ মেরিট। তবে, অস্কার নামেই বেশি পরিচিত। বলা যেতে পারে অস্কারটা এই পুরস্কারের ডাকনাম। যা ১৯৩৯ সালে আকাদেমি আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কারের অন্যতম নাম হিসেবে মেনে নিয়েছিল।

কথিত আছে, প্রথমবার এই ট্রফি দেখে, আকাদেমির গ্রন্থাগারিক মার্গারেট হেরিক, যিনি পরে সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিচালক হয়েছিলেন। তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে ট্রফিটি দেখতে তাঁর কাকা অস্কারের মত। তারপর থেকেই নামটা ছড়িয়ে পড়েছিল। আর, এই অস্কার নামটা এতটাই ছড়িয়ে পড়েছিল যে, ১৯৩৪ সালের প্রথম দিকে সাংবাদিক সিডনি স্কোলস্কি হলিউডের ক্যাথারিন হেপবার্নের প্রথম সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতার কথা লিখতে গিয়ে তাঁর লেখায় ‘অস্কার’ শব্দটা ব্যবহারও করেছিলেন।

কীভাবে এবং কোথায় এই পুরস্কার তৈরি হয়?
১৯৮২ সালে ইলিনয়ের বাটাভিয়ায় সিডব্লিউ শুমওয়ে অ্যান্ড সন্স ফাউন্ড্রি এই পুরস্কারের মূর্তির ছাঁচ তৈরি এবং পালিশের কাজটা করেছিল। পরে শিকাগোর আরএস ওয়েনস অ্যান্ড কোম্পানিকে এই মূর্তির যাবতীয় দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৬ থেকে মূর্তিগুলো নিউ ইয়র্কের রক ট্যাভার্নের ১০৫,০০০ বর্গফুটের কারখানায় তৈরি হচ্ছে। কারখানাটি পলিচ ট্যালিক্স ফাইন আর্ট ফাউন্ড্রির। থ্রিডি প্রিন্টার ব্যবহার করে ডিজিটাল অস্কার তৈরির মাধ্যমে মূর্তিটি এখন উৎপাদিত হয়। একাট মূর্তি তৈরি করতে পুরো তিন মাস সময় লাগে।

এর নকশাটা গলা মোমের মধ্যে ফেলা হয়। মোম ঠান্ডা হয়ে গেলে সেই মোমের মূর্তিকে সেরামিকের আস্তরণ দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। ১,৬০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় মূর্তিগুলো কয়েক সপ্তাহর জন্য রেখে দেওয়া হয়। তারপর মূর্তিগুলোকে তরল ব্রোঞ্জে ঢালাই করা হয়। তা ঠান্ডা করা হয়। বালি দিয়ে পালিশ করা হয়। তারপর ব্রুকলিনে পাঠানো হয় ইপনার প্রযুক্তির সাহায্যে ২৪ ক্যারেট সোনায় ইলেক্ট্রোপ্লেট করার জন্য। যদিও পুরস্কারগুলো শুধুমাত্র ২৪টি বিভাগে দেওয়া হয়। কিন্তু, প্রতিবছর ৫০টি করে মূর্তি তৈরি করা হয়। কারণ, কোনও বিভাগে টাই হতে পারে। একাধিক বিজয়ী থাকতে পারে, সেকথা মাথায় রেখেই বেশি সংখ্যায় মূর্তি বানানো হয়।

যদিও প্রতিটি ট্রফি তৈরি করতে ৪০০ ডলারেরও বেশি খরচা হয়। কিন্তু, আকাদেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের আইন বলছে যে বিজয়ীরা বা অন্য কেউ এই পুরস্কার বাজারে বিক্রি করতে পারবেন না। কেউ তা বিক্রি করতে গেলে প্রথমে আকাদেমিকেই মাত্র এক ডলার মূল্যে তা অফার করতে হবে। আকাদেমি না-নিলে, তখন অন্য প্রশ্ন।

আরও পড়ুন- ঘনিষ্ঠকে চিনের প্রধানমন্ত্রী বানালেন শি জিনপিং, কে এই লি কিয়াং?

একটি কুকুর কি প্রথম সেরা অভিনেতার অস্কার জিতেছিল?
‘রিন টিন টিন: দ্য লাইফ অ্যান্ড দ্য লিজেন্ড’-এর লেখক সুসান অরলিন এক দীর্ঘদিনের বিশ্বাসকে তুলে ধরেছেন। তা হল যে ‘রিন টিন টিন’, একটি পুরুষ জার্মান শেফার্ড। এই পুরুষ জার্মান শেফার্ডটিকে – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে একজন আমেরিকান সৈনিক উদ্ধার করেছিলেন। সেই জার্মান শেফার্ডটি হলিউডে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। ১৯২৯ সালে আকাদেমির উদ্বোধনী পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এই জার্মান শেফার্ডই নাকি সেরা অভিনেতার বিবেচনায় প্রথম রাউন্ডে সর্বাধিক ভোট পেয়েছিল।

কিন্তু, এক কুকুরকে প্রথম সেরা অভিনেতার পুরস্কার দিতে চায়নি আকাদেমি। তারা তাই আরেকটি ভোটের আয়োজন করেছিল। সেটা শুধু মানুষের জন্য। যাতে জার্মান অভিনেতা এমিল জ্যানিংস পুরস্কার জিতেছিলেন। এই জার্মান অভিনেতা আবার পরবর্তীতে নাৎসিদের জন্য প্রচারমূলক চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন।

এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি অস্কার পেয়েছেন ওয়াল্ট ডিজনি। তিনি জীবদ্দশায় ২৬টি পুরস্কার পেয়েছেন। অস্কারের ইতিহাসে সর্বাধিক পুরস্কৃত মহিলা হলেন আমেরিকান কস্টিউম ডিজাইনার এডিথ হেড। তিনি সেরা পোশাক ডিজাইন বিভাগে আটটি আকাদেমি পুরস্কার জিতেছেন।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Explained news download Indian Express Bengali App.

Web Title: History behind the golden oscars trophy