স্বাধীনতা দিবস চলে গেল। স্বাধীনতার পাশাপাশি, ১৫ অগস্ট আর একটি অধ্যায়েও সূচনা ঘটিয়েছিল। স্বাধীনতার মতো না হলেও তার গুরুত্ব কম নয়। সেইটি হল-- পোস্টাল ইনডেক্স নাম্বার। বা পিনকোড। চালু হয়েছিল ১৫ অগস্টেই। সেটা ছিল ১৯৭২ সাল। ফলে সোমবার সেই শুরুর ৫০ বছর পেরল।
কেন পিন কোড চালু হল?
ডাক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার সময় দেশে ২৩,৩৪৪টি পোস্ট অফিস ছিল। কিন্তু দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পোস্টাল নেটওয়ার্ককেও তার সঙ্গে তাল মেলাতে হয়েছে। সেই তাল মেলাতে গিয়েই পিনকোডের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। এবং তা চালু করা হল তার পর। পিনকোডের মাধ্যমে চিঠি নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া অনেক সহজ, আগে যে কাজে দম ছুটত পোস্টম্যানদের। কারণ, একই নামে একাধিক জায়গা রয়েছে, একই নামে বহু মানুষ, নানা ভাষা, পিনকোড সেই জটিলতার অন্ধকারে যেন প্রদীপ জ্বালিয়ে দিল। চিঠিকে প্রকৃত স্বাধীনতা দিয়েছে পিনকোড। স্বাধীনতার দিনেই।
কী ভাবে পিনকোড কাজ করে?
পিনকোড আট সংখ্যার। প্রথম নম্বরটি পোস্টাল অঞ্চলকে বোঝায়। উত্তর, পূর্ব, পশ্চিম না দক্ষিণ, কোথাকার চিঠি? বুঝিয়ে দেয়। এবং সেখানে ৯ নম্বর থাকলে সেনার পোস্টাল সার্ভিস বোঝায়। দ্বিতীয় নম্বরটি হল উপ-অঞ্চল বা সাব রিজিয়ন, তৃতীয়টিতে জেলা। বাকি নম্বরগুলি ধাপে ধাপে নির্দিষ্ট পোস্ট অফিসকে বুঝিয়ে দেয়। এর ফলে চিঠি ভুল জায়গায় যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে তলানি এসে ঠেকে।
পিনকোড চালুর নায়ক কে ?
শ্রীরাম ভিকাজি ভেলাঙ্কর, যিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রকের অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি বা অতিরিক্ত সচিব। এবং ডাক ও তার বিভাগের বোর্ডের সিনিয়র সদস্যও। ভেলাঙ্কর সেই সঙ্গে নামি সংস্কৃত কবি। সংস্কৃতে সাহিত্য চর্চার জন্য ১৯৯৬ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পান। মুম্বইয়ে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর তিন বছর আগে তাঁর এই পুরস্কারপ্রাপ্তি। সংস্কৃতে তাঁর ১০৫টি বই। তাঁর লেখা ভিলোমা কাব্য নাটকটিকে মাস্টারপিস হিসেবে মনে করা হয়। এটি এক দিক থেকে পড়লে-- রামের বন্দনা। উল্টো দিক থেকে পড়লে-- কৃষ্ণের। ভেলাঙ্কর মুম্বইয়ে একটি সংস্কৃতি সংঘও তৈরি করেন। নাম—দেব বাণী মন্দিরম। যাদের কাজ দেশ এবং বিদেশে সংস্কৃতের প্রচার করা। ভেলাঙ্কর ওয়ার্ল্ড ফিলাটেলিক একজিবিশন ইনডিপেক্সের চেয়ারম্যানও ছিলেন। চাকরি থেকে তিনি অবসর নেন ১৯৭৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
আরও পড়ুন- গেরুয়া শিবিরে কম্পন, সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি থেকে ছাঁটাই গোবলয়ের দুই নেতা
পৃথিবীর ‘পোস্টালে’ নজর
আমেরিকায় জোন ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান বা জিপ (ZIP) কোড চালু হয়েছিল ১৯৬৩ সালের পয়লা জুলাই। ব্রিটেনে ১৯৬০ সালের মাঝামাঝি থেকে আলফানিউম্যারিক পোস্টাল কোড ব্যবহার করা হতে থাকে। জাপান পোস্টাল কোড অ্যাড্রেস সিস্টেম চালু করে ১৯৬৮ সালের জুলাইয়ে।
এই দেশগুলির কিছু পরে হলেও, এত বড় দেশে এই পদ্ধতি চালু করা সহজ ছিল না। ফলে ১৫ অগস্টকে পোস্টাল কোড চালুর দিন হিসেবেও মনে রাখতে হবে। ঠিকানায় পোস্টাল কোড না থাকলে তো চলে না এখনও। উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চড়ে বসতে পারে তা হলে। এখন ই-মেল এসে গেলেও, পোস্টাল কোডের গুরুত্ব কিন্তু অমলিন। কারণ হাজারো কাজে ঠিকানা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেখানে পোস্টাল কোডের অতি-প্রয়োজনীয়তা আমরা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারি।
ঠিকানা যাকে বলা যেতে পারে গন্তব্য পেয়ে যায় পোস্টাল কোডে। কিন্তু শ্রীরাম ভিকাজি ভেলাঙ্করকে ক’জন আর মনে রেখেছেন? সংস্কৃত সাহিত্যিক হিসেবেও তাঁকে স্মৃতিতে রাখে কি কেউ? গুগল সার্চ করলেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। হাজারো তথ্যের ভিড়ে ভেলাঙ্কর প্রায় খাঁ-খাঁ করছেন। আমরা তাঁর ঠিকানায় স্মৃতির চিঠি লিখতে একেবারেই ভুলে গেছি।
Read full story in English