নিউ ইয়র্কে বুধবার রাত ৯ টার পর, (ভারতীয় সময় সন্ধে ৬-৩০) রাষ্ট্র সংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ আকবরউদ্দিন একটি মেসেজ পেলেন। প্রেরক রাষ্ট্র সংঘে ইন্দোনেশিয়ার দূত তথা রাষ্ট্র সংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১২৬৭ স্যাংশন কমিটির প্রধান। সে মেসেজে লেখা ছিল জৈশ এ মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারকে তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে কোনও দেশেরই আপত্তি নেই।
আজহারকে তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে চিন ১০ বছর পর তাদের অবস্থান বদলাল। এক দশক ধরে বেজিং মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণা করার ব্যাপারে রাষ্ট্রসংঘে আপত্তি জানিয়ে এসেছে।
নয়া দিল্লির পক্ষে এ ঘটনা কূটনৈতিক স্তরে বড়সড় সাফল্য। গত ১৩ মার্চ মাসুদের ব্যাপারে টেকনিক্যাল আপত্তি তোলে বেজিং। এর পর চিনের সঙ্গে সংঘর্ষপূর্ণ আলাপ-আলোচনার পথে যায় ভারত। দিল্লির দিকে চাকা ঘুরতে থাকে, ধীর কিন্তু নিশ্চিত উপায়ে। তাদের পক্ষে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত বড় শক্তি, আর সহায়তায় ছিল ফ্রান্স ও ব্রিটেন।
আরও পড়ুন, মাসুদ আজহার এবার আন্তর্জাতিক জঙ্গি
বরফ প্রথম গলে ২১ ফেব্রুয়ারি। পুলওয়ামার জঙ্গি হামলার ঘটনার নিন্দা করে বিবৃতি দেয় রাষ্ট্র সংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এই প্রথম কাশ্মীরে জঙ্গিহানার নিন্দাসূচক বিবৃতি জারি করল নিরাপত্তা পরিষদ, তাও আবার এমন এক ঘটনায় যেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন জড়িত।
এর উপর ওই বিবৃতিতে জৈশের নামোল্লেখও করা ছিল। এর ফলে জৈশ প্রধানকে তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে আলোচনার সুযোগও পায় ভারত। আমেরিকার চাপে চিনও এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হওয়ায় নয়া দিল্লি আশার আলো দেখতে পায়।
জৈশ প্রধানের নাম তালিকাভুক্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর আকবরউদ্দিন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি যে বিবৃতি জারি করে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয়। এতে বোঝা গিয়েছিল নিরাপত্তা পরিষদে এ ব্যাপারে সহমত হওয়া সম্ভব।"
৬ দিন পর, নিরাপত্তা পরিষদের তিন সদস্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স নিরাপত্তা পরিষদে আজহারকে তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে প্রস্তাব পেশ করে। এটা এ ধরনের দ্বিতীয় প্রয়াস। ২০১৭ সালেও এ ধরনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। নিরাপত্তা পরিষদের ভিতর ও বাইরে থেকে যেভাবে সমর্থন পাওয়া গিয়েছিল তাতে আশাবদী হয়ে ওঠে নয়া দিল্লি।
আকবরউদ্দিন বলেন, "সমস্ত দেশগুলি কূটনৈতিক ভাবে সুবিধা অসুবিধার বিচার করতে থাকে। এবারে আন্তর্জাতিক স্তরে বোঝাপড়া ছিল ব্যাপক স্তরে- আফ্রিকা থেকে ইউরোপ, আমেরিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া, জাপান থেকে কানাডা মার্চে আমাদের উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছিল।"
আরও পড়ুন, আইসিসের নয়া ভিডিও: কী বার্তা দিতে চায় আল বাগদাদি
কিন্তু চিন যখন টেকনিক্যাল আপত্তি তুলে ৬ মাসের জন্য বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখল, দিল্লি তখন অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে বেজিংয়ের নিন্দা করেনি। সূত্র বলছে, বেশ কয়েকটি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জানা গিয়েছিল, একটু চাপ দিলেই বেজিং এ ব্যাপারে মাথা নোয়াতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থির করে, ৬ মাস অপেক্ষা না করে মার্চের শেষে চিনের ওপর এ ব্যাপারে চাপ দেওয়া হবে।
সূত্রটি বলছে, "আমেরিকা ব্য়াপারটা ছাড়েনি। ওরা মনে করেছিল সুযোগ তৈরি রয়েছে এবং তা ছাড়া উচিত হবে না। ফলে আজহারকে তালিকাভুক্ত করার জন্য নতুন পদক্ষেপ করে আমেরিকা, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের তারা জানিয়ে দেয় ফ্রান্স ও ব্রিটেনের সঙ্গে মিলে নিরাপত্তা পরিষদে এ ব্যাপারে আলোচনার জন্য প্রস্তাব পেশ করতে চায়, যে আলোচনার শেষে গণভোট হবে।"
যেহেতু চিন নিরাপত্তা পরিষদের ১২৬৭ স্যাংশন কমিটিতে চারবার মাসুদ আজহারের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে, আমেরিকা মনে করেছিল, এর জেরে চিনকে যদি প্রকাশ্যে মাসুদ আজহারকে সমর্থন করতে হয়, তাহলে তারা অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়বে।
সূত্র বলছে, "কৌশলগত লক্ষ্য ছিল একজন ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করা। লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট। এবং চিন জনসমক্ষে একজন জঙ্গিকে যদি সুরক্ষা দিত তাহলে তার অর্থ হত গণভর্ৎসনার মুখে পড়া। এবং তা সরাসরি সম্প্রচারিত হত।"
সূত্রদের মতে সর্বসমক্ষে আলোচনা পরিহার করাই তাদের পক্ষে যে মঙ্গল, তা জানত চিন। কারণ না হলে তাদের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হত।
ভারতও বেজিংয়ের কাছে বার্তা পাঠায়, এবং বিদেশ সচিব বিজয় গোখেলের ওয়াশংটন, বেজিং ও মস্কোয় কূটনৈতিক সফর কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার ইঙ্গিতবাহী।
সূত্র বলছে, চিন সবদিক বিচার বিবেচনা করে এবং তাদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হওয়ার বিষয়টি ভেবে পক্ষ অবলম্বন করে।
সূত্ররা বলছে, চিনের এই অবস্থান কৌশলগত। গত কয়েক বছরে চিনের বিরুদ্ধে নেতিবাচক জনমত তৈরি হয়েছে। বেজিংও হিসেব করে দেখেছে যদি নয়া সরকার এ ব্যাপারে কোনও ছাড় দেয় তাহলে একটি প্রতিকূল পরিস্থিতি তরি হবে। সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপের মাধ্যমে সে পরিস্থিতি এড়াল তারা।
এদিকে নিউ ইয়র্কে আকবরউদ্দিনের বিশ্বাস, এ ঘটনা গত কয়েক বছরের ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টার সাফল্য।
Read the Full Story in English