Advertisment

কোভিড নিয়ন্ত্রণে কেরালার কাসারাগড় কীভাবে মডেল হয়ে উঠল?

কোয়ারান্টিনে থাকা সকলের উপর জিপিএসের মাধ্যমে নজরদারি করা হয়েছে। কনটেনমেন্ট ও ক্লাস্টার জোনে সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করা হয়, সে ধনী দরিদ্র যেই হোন না কেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কেরালা নজির সৃষ্টি করেছে, তাদের দ্বিগুণত্বের হার এখন ৭২.২ দিন

কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কেরালা নজির সৃষ্টি করেছে, তাদের দ্বিগুণত্বের হার এখন ৭২.২ দিন, যেখানে জাতীয় গড় ৭.৫ দিন। গত সপ্তাহে কেন্দ্র কেরালার কাসারাগড়- যেখানে ভারতের প্রথম কোভিড ১৯ সংক্রমণ ধরা পড়েছিল, সেখানে সংস্পর্শ চিহ্নিতকরণ ও কনটেনমেন্টের মডেল হিসেবে বর্ণনা করেছে।

Advertisment

এক নজরে কাসারাগড় মডেল দেখে নেওয়া যাক, দেখে নেওয়া যাক এ দেশের অন্যান্য মডেলগুলির দিকেও, যে রকম অন্যকিছু জায়গাও মডেল হিসেবে আগ্রহ তৈরি করেছে।

করোনাভাইরাস- কাসারাগড় কেন মডেল?

দেশের তৃতীয় কোভিড আক্রান্ত ঘটনা ধরা পড়ে কাসারাগড়ে, ৩ ফেব্রুয়ারি এক ছাত্রকে উহান থেকে বিমানে করে উড়িয়ে আনা হয়েছিল। জেলা প্রশাসন ওই ছাত্রের সংস্পর্শে আসা প্রায় ১৫০ জনকে চিহ্নিত করে।

অতি গুরুত্বপূর্ণ সপ্তাহ

কেরালা সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত কাসারাগড়ে সংক্রমিতের সংখ্যা ১৬৯ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ০- যা সে রাজ্যের জনসংখ্যার বিপুল অংশ বিদেশে বসবাসকারী হওয়ার সাপেক্ষে এক দারুণ ঘটনা। এই সংক্রমিতদের মধ্যে ১২৩ জন সেরে গিয়েছেন, মোট প্রাথমিক সংক্রমিতদের মধ্যে মাত্র ৪৬ জন এখনও সংক্রমিত।

মহামারী শুরুর দিনগুলিতে প্রায় সমস্ত সংক্রমিতই বিদেশে ভ্রমণের সময়ে (১৫.৩৮ শতাংশ)সংক্রমিত হন। দ্বিতীয় পর্যায় দেখা যায় ১৬ মার্চে মধ্য প্রাচ্য থেকে যখন বাসিন্দারা ফিরতে শুরু করেন।

এখানে কনটেনমেন্টের সুফল মিলল কীভাবে?

এ জেলা বড় শহর থেকে দূরে হওয়ায় আইসোলেশন সহজতর হয়েছে। রাজধানী তিরুবনন্তপুরম থেকেও এ শহর অনেকটা দূরে। তবে দূরত্বের কারণে চ্যালেঞ্জও বেড়েছে। যখনই বিদেশ থেকে কেউ এসেছেন বিমানে নেমে রেল বা সড়কপথে বাড়ি পৌঁছেছেন, যার ফলে রাস্তাতেও তাঁদের সংক্রমণ ছড়াবার সম্ভাবনা থেকেছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রকের আধিকারিকরা বলছেন কাসারাগড়ের ঘটনা আলাদা করে তুলে ধরা হলেও কেরালার সাফল্যের পিছনে রয়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তাদের ক্ষমতা।

১৮ রাজ্যে দ্বিগুণত্বের হার জাতীয় গড়ের চেয়ে কম

কাসারাগড় মডেল কী?

জেলা প্রশাসন একদিকে প্রচুর পরিমাণ টেস্টিং, প্রযুক্তি, সম্পূর্ণ মাত্রায় সংস্রব চিহ্নিতকরণ এবং সামাজিক দূরত্ববিধি কার্যকর করার উপর নজর দেওয়ার সুফল মিলতে শুরু করেছে। কাসারাগড়ে অন্য জেলার মতই রাজ্য সরকার এখানেও বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয় ঘটাবার জন্য স্পেশাল অফিসার নিয়োগ করেছেন।

গোটা জেলায় ১৪৪ ধারা কার্যকর করা হয়, নজরদারিতে কাজে লাগানো হয় সাতটি ড্রোন। কাসারাগড় উদ্যোগের মধ্যে একটি বিস্তারিত অ্যাকশন প্ল্যান নেওয়া হয় কোভিড ১৯ মোকাবিলায়, যাতে সংশ্লিষ্ট সকলে পরিস্থিতির প্রয়োজনে কাজে লাগতে পারেন।

কী ছিল এই অ্যাকশন প্ল্যান?

কোয়ারান্টিনে থাকা সকলের উপর জিপিএসের মাধ্যমে নজরদারি করা হয়েছে। কনটেনমেন্ট ও ক্লাস্টার জোনে সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করা হয়, সে ধনী দরিদ্র যেই হোন না কেন। ব্রেক দ্য চেন নামে সামাজিক দূরত্ব সম্পর্কিত প্রচার চালানো হয়। কোর টিম তৈরি করা হয় দ্রুত বিভিন্ন এলাকায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।

এই পরিকল্পনা কার্যকর করবার সঙ্গে সমাজ কল্যাণ কর্মসূচিতেও প্রভূত জোর দেওয়া হয়, যার মধ্যে ছিল দরিদ্র ও পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ, মজুতদারি ও কালোবাজারির উপর কঠোর নজরদারি এবং একদিন অন্তর ঘরহারা ও পরিযায়ীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা। কমিউনিটি কিচেন থেকে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করা হয়। ওয়ার্ড স্তরে বার্তা সকলের কাছে পৌঁছবার জন্য তৈরি হয় জন জাগ্রত সমিতি।

পুলড টেস্টিং কীভাবে হয়, কোন ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি কার্যকর?

এর মাত্রা কী ছিল?

মোট ১৭,১৭৩ জনকে কোয়ারান্টিন করা হয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ১০০-১৫০ জনের পরীক্ষা হয়েছে, নয়া ল্যাব তৈরি হয়েছে। কাসারাগড়ের মেডিক্যাল কলেজে ২০০ বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং চারদিনের মধ্যে নতুন আইসিইউ চালু করা হয়েছে।৭০৯ শয্যার কোভিড-১৯ কেয়ার সেন্টার তৈরি হয়েছে। আশাকর্মী ও হেলথ ইনস্পেক্টররা বাড়ি বাড়ি সার্ভে করেছেন।

অতি ঝুঁকি প্রবণ (৬০ ও তার বেশি বয়সী)দের সমস্ত প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পর্যায়ের চিহ্নিতকারীদের কোয়ারান্টিনে রাখা হয়েছে। যাঁদের বাড়িতে অতিরিক্ত শৌচাগার নেই, তাঁদের জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কনটেনমেন্টের অন্য সফল মডেলগুলি কীকী?

সম্প্রতি কোভিড ১৯ মোকাবিলায় কেন্দ্র বিভিন্ন জেলাশাসকদের পৃথক পরিকল্পনা করতে বলেছেন এবং একাধিক মডেলের কথা তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে রয়েছে আগ্রা, ভিলওয়াড়া, পাঠানমিত্তা প্রভৃতি।

আগ্রা মডেল:

আগ্রায় জেলা প্রশাসন কেন্দ্রভূমিগুলি চিহ্নিত করেছে, নিশ্চিত সংক্রমণের ঘটনাগুলির প্রভাব সম্পর্কিত রূপরেখা রচনা করেছে এবং জেলা প্রশাসনের তৈরি মাইক্রো প্ল্যান অনুসারে টাস্ক ফোর্স নিয়োগ করেছে।

সার্ভে ও কনটেনমেন্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে হটস্পট সামলানো গিয়েছে। মূল কেন্দ্রের ৩ কিলোমিটার ব্যাস ঘিরে হটস্পট চিহ্নিত হয়েছে এবং ৫ কিলোমিটার বাফার জোন নিয়ে কনটেনমেন্ট জোন চিহ্নিত হয়েছে।

লকডাউনে দোকান-বাজার: নিরাপদে থাকতে আপনাকে যা যা করতে হবে

 ভিলওয়াড়া মডেল:

ভিলওয়াড়া শহরকে ১৪৪ ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে আবশ্যক পরিষেবা চালু রাখা হয়, দ্বিতীয় পর্যায়ে শহর সম্পূর্ণ শাটডাউন করা হয়, জেলার সীমানাও সিল করে দেওয়া হয়। ট্রেন, বাস, গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পার্শ্ববর্তী জেলার জেলাশাসকদেরও সীমান্ত সিল করে দিতে বলে হয়। ভিলওয়াড়া থেকে নির্মম কনটেনমেন্টের বার্তা দেওয়া হয়েছে।

পাঠানামতিতা মডেল:

কেরালা সরকার এখানেও প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ ঘটিয়েছে। জেলায় যাঁরাই প্রবেশ করেছেন তাঁদের স্ক্রিনিং করে ডেটাবেস তৈরি করা হয়েছে, যাতে দ্রুত তাঁদের কাছে পৌঁছনো যায়। যাঁদের সংক্রমণ ধরা পড়েছে তাঁরা কোন রাস্তায় যাচ্ছেন তা জেনে নিয়ে প্রকাশ করে দেওয়া হয়। এর ফলে সেলফ রিপোর্টিং বাড়ে। যাঁরাই জানতে পারেন তাঁরা ওই একই রাস্তায় গিয়েছেন, তাঁরা নিজেরাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে টেস্ট করাতে আসেন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

kerala COVID-19
Advertisment