সিটবেল্ট শক্ত করে বেঁধে রাখুন। ব্যাঙ্কঝণে সুদের হার নতুন করে বাড়াতে চলেছে। কারণ, আরবিআইয়ের মনিটারি পলিসি কমিটি বা এমপিসি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্বিমাসিক এই বৈঠকে রেপো রেট বাড়ানো হয়েছে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বা দশমিক ৫০ শতাংশ, এখন রেপো পৌঁছেছে ৪.৯০-তে। অবশ্য যে ভাবে লাগামছাড়া মুদ্রাস্ফীতি, তাতে এটা স্বাভাবিক বলেই বলেই মনে করছেন অর্থশাস্ত্রীরা। এবং অদূর ভবিষ্যতে এই সুদের হার আরও বড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা।
এই বৃদ্ধির অর্থ কী?
মে মাসে রেপো বাড়ানো হয় ৪০ বেসিস পয়েন্ট। তার পর এই বৃদ্ধি। এতে করে ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া নানা ঋণের উপর সুদের হার বাড়বে। মানে, আপনাকে ঋণে যে ইএমআই দিতে হয়, তা আগের চেয়ে বেশি দিতে হবে। অর্থাৎ বাড়ি, গাড়ি, ব্যক্তিগত ঋণের অর্থ-ভার বাড়ছে। ভোগ এবং চাহিদা এই দুইয়ের উপরই রেপো রেটের গভীর প্রভাব রয়েছে। তাই মুদ্রাস্ফীতিতে লাগাম দেওয়ার অস্ত্র এই সুদ বৃদ্ধি।
কিন্তু কেন ব্যাঙ্কঋণে সুদ বাড়াবে?
রেপো রেট মানে হল, ব্যাঙ্কগুলিকে আরবিআই যে অর্থ স্বল্পমেয়াদি ঋণ হিসেবে দেয়, তার উপর সুদের হার। অর্থাৎ কিনা, এখন আরবিআইকে বেশি অর্থ দেবে ব্যাঙ্কগুলি সুদ বাবদ। ফলে ব্যাঙ্কের হাতে অর্থ কমবে। আবার আগের বার সিআরআর বা ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বা নগদ জমার অনুপাত বাড়ানো হয়। যার মানে হল, ব্যাঙ্কগুলির কাছে গচ্ছিত নগদ আমানতের যে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাখতে হয় আরবিআই-তে, সেই পরিমাণটা বাড়ানো।
রেপো রেট, এবং ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বৃদ্ধির ফলে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির হাতে যে ফান্ড রয়েছে, তা কমবে। তারা ঋণ দেওয়ার জন্য আগের চেয়ে প্রথমত কম অর্থ হাতে পাবে, দ্বিতীয়ত যখন আরবিআই ঋণের উপর সুদ বেশি নিচ্ছে, ব্যাঙ্কগুলিকেও তো ঋণের উপর সুদ বাড়াতে হবে। না হলে চলবে কী ভাবে! যদিও, আরবিআই রিভার্স রেপো রেট বাড়ায়নি। রিভার্স রেপো মানে, ব্যাঙ্কগুলি আরবিআইকে যে অর্থ ঋণ হিসেবে দেয়, তার উপর আরবিআই যে সুদ ব্যাঙ্কগুলিকে দেয় সেইটি।
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক রেপো রেট বাড়িয়েছে তার কারণটা আগেই বলেছি মূলত মুদ্রাস্ফীতি। ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে মুদ্রাস্ফীতির হার, সহ্যের ঊর্ধ্বসীমায় পৌঁছেছে। তাতে লাগাম দিতে আরও রেপো বাড়াতে হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। জুনে ৪০ বেসিস পয়েন্ট, অগস্টে ৩৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হতে পারে এটি। মহামারির যে ধাক্কা লেগেছিল অর্থনীতিতে, তার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য অ্যাকোমোডেটিভ পলিসি বা মানিয়ে নেওয়ার নীতি নিয়েছে আরবিআই।
আরও পড়ুন- পৃথ্বীরাজের পথে কি ইতিহাস বইয়ের বদল হবে এবার? পাঠ্য বই বদলের পদ্ধতিটা কী?
ফলে একটা বড় সময় রেপো বাড়ানো হয়নি। নিজেদের সেই নীতি থেকে আরবিআই না সরলেও, সুদের হার না বাড়ালে এখন আর চলছে না। মুদ্রাস্ফীতির সাগরে খাবি খেতে হবে না হলে যে! এদিকে, মুদ্রাস্ফীতিতে লাগাম দিতে ইতিমধ্যে দু' বার সুদের হার বাড়িয়েছে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ। ফলে ভারসাম্য রক্ষার তাগিদেও এই বৃদ্ধিটা জরুরি ছিল বলেই মনে করা হচ্ছে।
Read full story in English