ভবিষ্যতে আসন্ন ১৬৯ টি ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের নামের একটি তালিকা সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর (India Meteorological Department বা IMD/আইএমডি)। প্রতিটি সাইক্লোনই বঙ্গোপসাগর অথবা আরব সাগরে আবির্ভূত হবে।
পৃথিবীর যে কোনও মহাসাগরীয় অঞ্চলে সাইক্লোনের নামকরণ করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ছ'টি আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্র (regional specialised meteorological centres বা RSMC), যার মধ্যেই পড়ে IMD, এবং পাঁচটি ট্রপিক্যাল সাইক্লোন সতর্কতা কেন্দ্র (Tropical Cyclone Warning Centres বা TCWC)।
বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগর সমেত ভারত মহাসাগরের উত্তরভাগে যেসব সাইক্লোন দেখা দেয়, সেগুলির নামকরণ করে আইএমডি। এর নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। এছাড়াও এই অঞ্চলের ১২টি দেশকে সাইক্লোন বা অন্যান্য ঝড়ের আগমনবার্তা এবং সে সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়ার দায়ভার ন্যস্ত হয়েছে আইএমডি-র উপর।
কীভাবে হয় সাইক্লোনের নামকরণ?
আজ থেকে দুই দশক আগে ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিকাল অর্গানাইজেশন (WMO) এবং এসক্যাপ (United Nations Economic and Social Commission for Asia and the Pacific বা ESCAP)-এর অধীনস্থ আটটি দেশ - ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, এবং থাইল্যান্ড - সিদ্ধান্ত নেয় যে এই অঞ্চলের সাইক্লোনের নামকরণ করবে তারা। প্রতিটি দেশ তাদের নামের তালিকা পাঠানোর পর তা চূড়ান্ত করে একটি WMO/ESCAP প্যানেল, যার পোশাকি নাম প্যানেল অন ট্রপিক্যাল সাইক্লোনস (PTC)। ২০১৮ সালে WMO/ESCAP দলে প্রবেশ করে আরও পাঁচটি দেশ - ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং ইয়েমেন।
গতমাসে ১৬৯টি নামের একটি তালিকা প্রকাশ করে আইএমডি - ১৩টি দেশ থেকে ১৩টি করে নাম। নতুন তালিকায় ঢোকানো হয় পূর্ববর্তী তালিকার একটিমাত্র নাম - আম্ফান - কারণ নতুন তালিকা প্রকাশের সময় পর্যন্ত অব্যবহৃত ছিল তা। দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগরের ওপর এবং দক্ষিণ আন্দামান সাগর সংলগ্ন এলাকায় ঘনীভূত হতে থাকা এই ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের জন্যই বর্তমানে সতর্কবার্তা জারি করেছে আইএমডি।
সাইক্লোনের নামকরণ জরুরি কেন? কী প্রক্রিয়া তার?
নম্বর বা পরিভাষা ব্যবহার করার বদলে সাইক্লোনের নাম রাখলে শুধু যে জনসাধারণ সহজে মনে রাখতে পারে তাই নয়, সাহায্য হয় বিজ্ঞানী, মিডিয়া, বিপর্যয় মোকাবিলা দল প্রভৃতিরও। নির্দিষ্ট নাম ব্যবহার করলে সাইক্লোনের বর্তমান অবস্থান এবং তীব্রতা নির্ধারণ, দ্রুত সতর্কীকরণ, এবং একই অঞ্চলে একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি দূরীকরণের কাজে সুবিধা হয়।
সাইক্লোনের নামকরণের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত নিয়মগুলি মেনে চলতে হয়:
* প্রস্তাবিত নামগুলি রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি, ধর্মীয় ভাবনা, বিশেষ সংস্কৃতি, অথবা লিঙ্গ নিরপেক্ষ হবে
* এমনভাবে নাম বাছতে হবে যাতে পৃথিবীর কোনও জনগোষ্ঠী বা সমষ্টির ভাবনায় আঘাত না লাগে
* নামের মধ্যে রুক্ষতা বা নির্মমতা প্রকাশ পেলে চলবে না
* নাম হবে সংক্ষিপ্ত, সহজে উচ্চারণ করা যায় এমন, এবং সকল সদস্য দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য
* নামের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য আট অক্ষরের বেশি হবে না
* প্রস্তাবিত নামের সঙ্গে উচ্চারণ নির্দেশিকা এবং ভয়েস ওভার দিতে হবে
* ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নামের পুনরাবৃত্তি হবে না। একবার ব্যবহার করলে আর ব্যবহার করা যাবে না
ভারত কোন কোন ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছে?
ভারত যে ১৩টি নাম পাঠিয়েছে, সেগুলি হলো: গতি, তেজ, মুরাসু, আগ, ব্যোম, ঝড়, প্রবাহ, নীর, প্রভঞ্জন, ঘূর্ণি, অম্বুদ, জলধি, এবং বেগ।
এর মধ্যে কিছু নামের সুপারিশ এসেছে আমজনতার কাছ থেকেও। PTC-র কাছে পাঠানোর আগে নামের তালিকা চূড়ান্ত করে আইএমডি-র একটি কমিটি।
উপরে দেওয়া রইল ১৬৯ টি নামের সম্পূর্ণ তালিকা। এর পরের প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে প্রথম সারির প্রথম কলামের প্রথম নাম - বাংলাদেশের দেওয়া 'নিসর্গ'। এর পরে আসবে ভারতের দেওয়া নাম 'গতি'। এভাবেই পরপর চলবে নামকরণের পালা। প্রতিটি কলামের শেষ পর্যন্ত পৌঁছে তার পরের কলামে যাওয়া হয়। অর্থাৎ প্রথম তালিকায় 'হফ'-এর পর দ্বিতীয় তালিকার 'ঊর্মি' থেকে ফের শুরু হবে নামকরণ।
উপরের তালিকায় দেখতে পাচ্ছেন ইতিমধ্যে ব্যবহৃত নাম। নতুন নামের পালা শুরু হবে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান শেষ হলে। প্রসঙ্গত, 'আম্ফান' শব্দটির আক্ষরিক অর্থ দৃঢ়তা, স্বাধীন চিত্ত, শক্তি, ইত্যাদি। এর কতটা মিলবে আসন্ন এই ঝড়ের সঙ্গে, তা শিগগিরই জানতে পারব আমরা। মনে রাখবেন, কিছুকাল আগের এক মারাত্মক ঝড়ের নাম ছিল 'বুলবুল'। আবহাওয়াবিদ বলে কি আর রসিক হতে নেই?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন