যে সময়টা নভেল করোনাভাইরাস ভারতে হানা দিয়েছিল তখন চৈত্র মাসের গরম। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যের দাবদাহ পেরিয়ে আষাঢ়ের ঝড়েও অক্ষুণ্ণ রয়েছে সারস কোভ-২ ভাইরাসের কার্যক্রম। বরং দাপট বেড়েছে বৈ কমেনি। প্রাথমিকভাবে গবেষকদের মনে হয়েছিল প্রচন্ড গরমে তাপমাত্রার বাড়বাড়ন্তে বাকি সব ভাইরাসের মত এই কোভিড-১৯ ভাইরাসটিরও ক্রমশ শক্তিক্ষয় হবে। কিন্তু সে সব আশায় জল ঢেলে এখনও ইউরোপ, আমেরিকা-সহ ভারতে সংক্রমণ ফের বৃদ্ধি করল করোনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানান হয়েছে যে শীতকালে করোনার দাপট কমবে বা ভাইরাসের ক্ষমতা কমে আসবে এমন কোনও প্রমাণ কাছে নেই।
তবে শীতকালে এই করোনাভাইরাসের উপর কোনও প্রভাব পড়বে কি না তা নিয়ে ইতিমধ্যেই গবেষণা শুরু করে দিয়েছে বিশ্বের বিজ্ঞানমহল। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন এখনও পর্যন্ত ভাইরাস সম্পর্কিত যে প্রমাণাদি পাওয়া গিয়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে ঠান্ডায় আরও বৃদ্ধি পায় ভাইরাসের দাপট। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গরমের শেষ আর শীতের শুরু এই আবহাওয়া বদলের সময়ই বেশি করে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং অন্যান্য ভাইরাল ফিভার হতে শুরু করে। ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে শীতকালেই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি করে পরিলক্ষিত হয়, অন্তত প্রমাণ এমনটাই জানাচ্ছে। বর্ষাকালেও ভাইরাসের একই ধরনের গ্রোথ দেখতে পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে সেপ্টেম্বরে ভারতে করোনা সংক্রমণে দৈনিক ৯০ হাজারের গন্ডি পেরোনই এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
আরও পড়ুন, লরির চাকা থেকে করোনা ছড়াচ্ছে! মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ঘিরে শোরগোল
কিন্তু সমস্যা হল এখনও পর্যন্ত সঠিক কোনও ট্রেন্ড পরিলক্ষিত হয়নি এই সারস-কোভ-২ ভাইরাসের। ভারতে বলে নয়, বিশ্বের কোথাও না। আর ঠিক এই কারণেই ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত হিমসিম খেতে হচ্ছে করোনাআক্রান্ত বিশ্বকে। বিভিন্ন মেডিকেল রিপোর্ট থেকে পাওয়া তথ্য জানাচ্ছে শীতকালের ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হয়েই অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। এদিকে বিষফোঁড়া হয়ে রয়েছে এই ভাইরাস। ইন্ডিয়ান কলেজ অফ ফিজিসিয়ানদের ডিন ডা: শশাঙ্ক জোশি বলেন, "সম্প্রতি এটা জানান হয়েছে যে বিশ্বের শীতকালীন ভৌগলিক অঞ্চলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বেশি হবে। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন এলাকাগুলিতে কিন্তু এই সংক্রমণের সঙ্গে তাপমাত্রার কোনও সম্পর্ক এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি।"
কেন শীতকালে ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হয়?
পশ্চিমের দেশগুলিতে শীতের তীব্রতা এতটাই বেশি হয় সেখানে সাধারণত সকলের গৃহবন্দী হয়ে পড়ে। ফলে ভাইরাসের প্রকোপ বাড়লেও সেখানে কিন্তু তা মহামারীর পর্যায়ে পৌঁছয় না। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে তা নয়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির প্রাক্তন সচিব ডা: এম এস চাড্ডা বলেন, "শীতকালে সকলেই যে বাড়ির মধ্যে থাকে তা নয়। শীত উপভোগ করার জন্য সকলেই বাইরে ঘুরতে পছন্দ করেন ভারতের মত গ্রীষ্মপ্রধান দেশে। ফলে ভাইরাস চলাচলে সুবিধা হয়। তাই সংক্রমণ বাড়ে।" অন্যদিকে এইচওয়ান এনওয়ান ভাইরাস যার সাধারণ নাম- সোয়াইন ফ্লু, এর বিস্তার আবার বর্ষাকালেই সবচেয়ে বেশি হয়।
ভারতীয়দের চিন্তার কি বিশেষ কোনও কারণ আছে?
শীতকালে ভারতে করোনার নয়া পর্যায় শুরু হতে পারে এমনটাই জানাচ্ছেন ডা: শশাঙ্ক জোশি। ক্লিনিকাল বিজ্ঞানী ও ভ্যাকসিন গবেষক ড: গগনদীপ কং-এর মতে, গত কয়েকমাসে পর্যায়ক্রমে সীমিত লকডাউন রয়েছে, যা শীতকালে সংক্রমণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তিনি বলেন, “তবে মাস্ক পরিধান এবং সামাজিক দূরত্ববিধির নিয়ম মানলে সংক্রমণ কিছুটা প্রতিরোধ সম্ভব। তাই আমাদের অপেক্ষা করা ও দেখার দরকার।"
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন