যে হারে মৃত্যু বাড়ছে দেশের প্রতিটি রাজ্যে, সেই প্রেক্ষাপটে করোনার গোষ্ঠী সংক্রমণ নিয়েই এখন সকলে চিন্তিত। আর হবে নাই বা কেন? যে কোনও অতিমারীর ক্ষেত্রে ভয়ের জায়গাটাই এই গোষ্ঠী সংক্রমণ। আর আশঙ্কাকে সত্যি করে করোনা থাবা থেকে নিস্তার পাচ্ছে না কোনও রাজ্যেই। একদিনে করোনায় আক্রান্ত সংখ্যা এবং মৃত্যু দেখিয়ে দিচ্ছে 'কমিউনিটি ট্রান্সমিশন'কে অস্বীকার করার উপায় নেই কোনও রাজ্যের।
নিজ নিজ রাজ্যের কথা চিন্তা করেই দেশের তিনটি রাজ্য ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে যে সেখানে গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে। গত সপ্তাহেই কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন আভাস দিয়েছিলেন যে উপকূলবর্তী এলাকায় গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এদিকে, তেলেঙ্গানার তরফেও একই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত কয়েক সপ্তাহে হু হু করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে দক্ষিণের এই রাজ্যে।
আরও পড়ুন, দেহে তৈরি হচ্ছে করোনার অ্যান্টিবডি! ভ্যাকসিনের কার্যকারীতা নষ্ট হতে পারে, ইঙ্গিত বিজ্ঞানীদের
পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেই বোঝা যাবে যে করোনা থাবায় সবচেয়ে ক্ষতবিক্ষত রাজ্য হল মহারাষ্ট্র। কোভিড সংক্রমণের প্রথম থেকেই রেকর্ড গড়ে চলেছে মহারাষ্ট্র। এখন উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৬৬ হাজার ৩৬৮। মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৩৮৯ জনের। তবে এখনও গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে কি না এ বিষয়ে মুখ ফুটে কিছুই জানায়নি শিবসেনা। মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সচিব যদিও কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছে। একটি সংবাদপত্রকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তিনি কমিউনিটি সংক্রমণের কথা স্বীকার না করলেও অস্বীকার করেননি। বরং স্বাস্থ্যসচিবের কথায়, গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে কি না সে বিষয়ে রাজ্য বলার কেউ নয়। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ যা বলার বলবে।
যদিও বিজ্ঞানী-গবেষক মহলের মত দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। তাঁদের মত মানুষের কাছ থেকে বিষয়ে লুকিয়ে আদপে ক্ষতিই ডেকে আনছে দেশের সরকার। ওয়াকিবহাল মহলের মতে মানুষের মনে স্বচ্ছতা তৈরি না হওয়ার কারণে বিষয়টি নিয়েও কেউ ভাবছে না, সুরক্ষাও নিচ্ছে না। তাই অনায়াসেই গোষ্ঠীতে নিজের দাপট কায়েম করতে পারছে করোনা।
কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা গোষ্ঠী সংক্রমণ আসলে কী?
গোষ্ঠী সংক্রমণ বলতে বোঝানো হয় যখন কোনও রোগ বা বলা ভালো অতিমারী একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে এবং তা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কোনও রোগের গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হলে তা নির্মূল করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। কারণ কোন জনের থেকে কার দেহে ছড়িয়ে পড়ছে তা বোঝা দুষ্কর। বৈজ্ঞানিক ভাষায় একে ‘চেইন রি-অ্যাকশন’ ও বলা হয়।
যদিও পশ্চিমবঙ্গের কোথাও কোথাও গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ”বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা করা হচ্ছে যে গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে। সেই ব্যাপারতী বিবেচনা করে সপ্তাহে দু’দিন লকডাউন জারি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে”। উল্লেখ্য, দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে বলে সম্প্রতি দাবি করেছে আইএমএ।