বর্ধিত লকডাউন ও গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রীর প্যাকেজে উড়ান শিল্পের জন্য কোনও রিলিফের উচ্চারণ না থাকার কারণে একাধিক বিমান সংস্থার ব্যবসা গোটানোর আশঙ্কার কথা বলা হয়েছিল। এ কারণেই বিমান পরিবহণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে তিনদিনের মধ্যে সরকারের মত বদল ঘটেছে বলে সরকারি আধিকারিকরা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন।
রবিবার, ১৭ মে সরকার ঘোষণা করেছিল, ৩১ মে পর্যন্ত অন্তর্দেশীয় বিমান পরিবহণ নিষিদ্ধ থাকবে। মাত্র তিন দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশিকায় সংশোধন এনে বৃহস্পতিবার জানানো হয়, ২৫ মে থেকে যাত্রীবাহী বিমান পরিবহণ শুরু হবে।
এর ফলে বিমান সংস্থা ও তার সঙ্গে যুক্ত একাধিক ক্ষেত্র হাঁফ ছাড়লেও দু'মাসের জন্য সম্পূর্ণ বসে থাকার কারণে তাদের আয়ের যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে তাদের চাহিদা এতে মিটবে না।
সরকারের এক বরিষ্ঠ আধিকারিক জানিয়েছেন, যে মূল যুক্তি বিমান সংস্থাগুলি হাজির করছে, তা হলো, “যেহেতু কোনও স্থগিত পরিষেবা পরবর্তীকালে আর ভোগ করা যায় না, সে কারণেই বিমান সংস্থা, হোটেল, রেস্তোরাঁর মত সংস্থাগুলিকে উৎপাদনকারী সংস্থার চেয়ে আগে সহায়তা করা উচিত, বিশেষ করে যেখানে ভারতের লকডাউন পৃথিবীর দীর্ঘতম লকডাউন।”
আরও পড়ুন: কোভিড ১৯: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা ও ওয়ার্লড হেলথ অ্যাসেম্বলির প্রস্তাব
এ ছাড়া অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের আধিকারিকরা বিমান সংস্থাগুলিকে বড়সড় প্যাকেজের ঘোষণা করা হবে বলে জানালেও, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের ঘোষণায় অসামরিক বিমান পরিবহণের জন্য নতুন কোনও কথা ছিল না।
রবিবারের মধ্যেই বিমান সংস্থাগুলি বিমান পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা চাইছিল। এক বরিষ্ঠ সরকারি আধিকারিকের কথায়, সি পর্যায়ের বিমান সংস্থার আধিকারিকরা মন্ত্রকের কাছে জানতে চাইছিলেন আর কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা, বিমান চালানো ফের শুরু করার অনুমতি দেওয়ার আশা করা যেতে পারে কিনা।
কিন্তু রবিবার সন্ধেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের জারি করা গাইডলাইন জানানো হয়, ৩১ মে পর্যন্ত উড়ান নিষিদ্ধ, এবং কবে ফের তা চালু হবে সে নিয়ে কোনও আশার বাণীও ছিল না। সোমবার, ১৮ মে, বিমানসংস্থার কর্তাব্যক্তিরা অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে বলেন, তাঁদের পক্ষে গণছাঁটাই ও ক্রমবর্ধমান ঋণের হাত থেকে পালানো ছাড়া কোনও গতি থাকছে না, এবং তাঁরা ক্রমশ দেউলিয়া হওয়ার পথে এগোচ্ছেন।
তাঁরা বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রেল যখন রেড জোন থেকে গ্রিন জোন পর্যন্ত সর্বত্র স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারছে, তখন তাঁদের স্যানিটাইজেশনের অনেক বেশি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন বিমান চলাচল করতে পারবে না, এবং মূলত বিমান যখন চলাচল করবে রেড জোন থেকে রেড জোনে, যথা দিল্লি থেকে মুম্বই বা মুম্বই থেকে চেন্নাইয়ে।
আরও পড়ুন: অফিস খুলে গেল, কী কী বিধি মানতে হবে?
ইতিমধ্যেএকটি হ্রস্বমূল্যের বিমান সংস্থা তাদের কর্মচারীদের মেল করে জানিয়ে দেয়, দ্রুত বিমান চলাচল শুরু না হলে তারা সংস্থা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে।
ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (IATA)-র এক রিপোর্ট অনুসারে, ভারতের উড়ান ক্ষেত্রে প্রায় ৩০ লক্ষ চাকরি ঝুঁকির মুখে, বিশেষ করে যে পরিস্থিতিতে গত ২৫ মার্চ থেকে সারাদেশে লকডাউন চলছে তার প্রেক্ষিতে।
১৮ মে বৈঠকে উপস্থিত একজন বিমান সংস্থার কর্তাব্যক্তির কথায়, “আমরা তৎক্ষণাৎ সরকারের সঙ্গে বৈঠক চেয়েছিলাম এবং আমাদের পরদিন ১৮ মে সোমবার ডেকে পাঠানো হয়। আমরা ভেবেছিলাম সরকার আমাদের সঙ্গে কীভাবে এই ক্ষেত্রকে বেলআউট প্যাকেজের মাধ্যমে বাঁচিয়ে তোলা যায় সে নিয়ে পরামর্শ করবে কিন্তু সরকার ভাড়ার নিয়মাবলী সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইছিল।”
এর পরেই বিমান মন্ত্রকের তরফ থেকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়। ১৯ মে পুরী টুইট করে সমস্ত রাজ্যগুলিকে অসামরিক বিমান পরিবহণের অনুমতি দেওয়ার আবেদন জানান। একদিন পর, ২০ মে তিনি ২৫ মে থেকে বিমান চলাচল শুরুর কথা ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: লকডাউন ৪.০ – কী কী ছাড় মিলল
বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে রবিবার ও বুধবারের মধ্য কোন পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বিমান চলাচল শুরু সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, সে প্রশ্নের উত্তরে অসমারিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী বলেন, “দশদিন আগে আমি বলেছিলাম আমাদের বিমানবন্দর ও বিমান সংস্থা কাজ শুরুর জন্য প্রস্তুত। দু-তিনদিন আগেও আমি বলেছিলাম, বাকি বিষয়ের সিদ্ধান্ত শুধু এই মন্ত্রকের একার নয়, বাকি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও আমরা কথা বলছি।
"লকডাউন ৩১ মে অবধি লাগু। আমার প্রস্তাব ছিল, আমরা ১০ দিন বা এক সপ্তাহ আগেও প্রস্তুত, কিন্তু সকলের মনে হয়েছিল রেল বড়সড় কাজ করছে। সেটা হতে থাকুক, আমরা তার থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করি, তার পর আমরা নামব।
"গতকাল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২৫ মে সম্ভবত সঠিক, কারোরই এতে অসুবিধে নেই। আমি বলছি না সকলে ১০০ ভাগ একমত। আমি কাল সন্ধেয় কয়কেজন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। মোটের উপর সকলেই সমর্থন জানিয়েছেন।”
বিমানসংস্থাগুলি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও সরকারের শর্ত আরোপে তারা নাখুশ। এক বিমানসংস্থার কর্তাব্যক্তির কথায়, "আমরা কাজ শুরু করছি কঠোর পরিস্থিতির মধ্যে। ভাড়ার উর্ধ্বসীমা এবং বিমানসংস্থাগুলিকে নির্দিষ্ট রুটে চলাচল করতে বলা এসময়ে অপ্রত্যাশিত। এ ছাড়া ব্যাগেজ চেকিংয়ের পর তার কনফার্মেশনের এসএমএস যাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে পাঠানোর জন্য আমাদের আইটি ক্ষেত্রকেও উন্নত করতে হবে।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন