আর্থিক বিশেষজ্ঞ সংস্থা ব্লুমবার্গের সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২২ সালের মার্চের শেষের দিকে যুক্তরাজ্যকে টপকে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। ব্লুমবার্গ আইএমএফের তথ্যাদি এবং মুদ্রা বিনিময় হারের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। আর্থিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই বৃদ্ধি প্রত্যাশিতই ছিল।
ব্লুমবার্গ রিপোর্টে বলেছে, 'ভারতীয় অর্থনীতির আর্থিক সামঞ্জস্য রয়েছে। ত্রৈমাসিকের শেষ দিন পর্যন্ত ভারতীয় মুদ্রার সঙ্গে ডলারের বিনিময় হারও বিবেচনা করা হয়েছে। মার্চ মাস পর্যন্ত শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে 'নামমাত্র' নগদের লেনদেনকে বাদ রেখে হিসেব করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে ভারতীয় অর্থনীতির লেনদেনর পরিমাণ ছিল ৮৫,৪৭০ মার্কিন ডলার। এই সময় ব্রিটেনের আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮১,৬০০ মার্কিন ডলার।'
এই সব তথ্যের ভিত্তিতে ব্লুমবার্গের পূর্বাভাস, ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারত এবং ব্রিটেনের আর্থিক ক্ষেত্রে এক বিশাল ব্যবধান তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে একটি 'উন্নত' দেশে পরিণত করার সংকল্প নিয়েছেন। তিনি দেশের স্বাধীনতার শতবর্ষের মধ্যে ভারতকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর একটি করে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার মধ্যে যে দেশ ভারতের ওপর দুই শতাব্দী ধরে শাসন করেছে, তাদেরকে ভারতীয় অর্থনীতির ছাপিয়ে যাওয়া, নিঃসন্দেহে একটি বড় মাইলফলক।
জনসংখ্যা
এই দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে মৌলিক পার্থক্য হল- এক. ২০২২ সালের হিসেবে, ভারতের জনসংখ্যা ১৪১ কোটি। আর, ব্রিটেনের জনসংখ্যা ৬ কোটি ৮৫ লক্ষ। অন্য কথায়, ভারতের জনসংখ্যা ব্রিটেনের জনসংখ্যার ২০ গুণেরও বেশি।
মাথাপিছু আয়
যেহেতু দুটি দেশের জনসংখ্যার মধ্যে এই বিরাট পার্থক্য, তাই মাথাপিছু আয়ের মাত্রার তুলনাও চলে আসে। কারণ, একটি দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনকে সেই দেশের জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথাপিছু আয় পাওয়া যায়। আশ্চর্যজনকভাবে, একজন ভারতীয়র আয় একজন ব্রিটিশের আয়ের চেয়ে অনেক কম।
দারিদ্রসীমা
কম মাথাপিছু আয়ের অর্থই অত্যন্ত দারিদ্র। ভারত এবং ব্রিটেনে দারিদ্র কতটা, মাথাপিছু আয় থেকে সেটা বোঝা গিয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে যে ভারতে চরম দারিদ্র্যে ব্রিটেনের চেয়ে অনেক বেশি। তবে, বর্তমানে ভারতে দারিদ্র নিরসনে বিশাল অগ্রগতি ঘটেছে।
আরও পড়ুন- ব্যাগ টানতেই চোখ ছানাবড়া! ফের মিলল কাঁড়ি-কাঁড়ি টাকা, গ্রেফতার ১
মানব উন্নয়ন
উচ্চতর জিডিপি এবং দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধির মূল লক্ষ্য হল মানব উন্নয়ন। যার অর্থ স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন। এক্ষেত্রে আর্থিক বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, ব্রিটেনের সঙ্গে ভারতের উন্নয়নে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। সেই পার্থক্য এতটাই যে ১৯৮০ সালে ব্রিটেনের যে মানব উন্নয়ন ছিল, সেইখানে পৌঁছতেও ভারতের এখনও এক দশক লাগতে পারে।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা
একটি দেশ হিসাবে ধনী হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান। সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ (ইউএইচসি) সূচকটি প্রজনন, মা, নবজাতক এবং শিশু স্বাস্থ্য, সংক্রামক রোগ, অসংক্রামক রোগ এবং পরিষেবা-সহ প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলোর গড় প্রদানের ভিত্তিতে পরিমাপ করা হয়। যেখানে ০ পাওয়া হল সবচেয়ে খারাপ। আর ১০০ পাওয়ার অর্থ হল, সবচেয়ে ভালো। এই মাপকাঠিতে ভারত এবং ব্রিটেনের পরিস্থিতির পর্যালোচনা হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, ভারত অনেক উন্নতি করেছে। কিন্তু, ব্রিটেনের স্তরে পৌঁছতে এখনও ভারতকে অনেকটা পথ হাঁটতে হবে।
Read full story in English