Advertisment

বিশ্লেষণ: সিয়াচেন হিমবাহে বেড়াতে গেলে কতটা যেতে পারবেন?

বস্তুত, ২০০৭ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সেনা অ্যাডভেঞ্চার সেল-এর পরিচালনায় করানো হতো 'সিয়াচেন ট্রেক', যার ফলে মুষ্টিমেয় কিছু সিভিলিয়ানকে বেস ক্যাম্প এবং কুমারের মধ্যে আসা-যাওয়া করতে দেওয়া হতো।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
siachen glacier tourists

সিয়াচেন হিমবাহ। ফাইল ছবি

গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ঘোষণা করেন, পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে সিয়াচেন হিমবাহ, অর্থাৎ গ্লেসিয়ার। বেস ক্যাম্প থেকে কুমার লজিস্টিকস বেস পর্যন্ত যেতে পারবেন পর্যটকরা। এক নজরে দেখে নিন, কী কী অনুমোদিত হয়েছ, এবং তার ফলে কী বদল আসতে চলেছে:

Advertisment

সিয়াচেন হিমবাহ খুলে গেলে পর্যটকরা কী পাচ্ছেন?

বর্তমানে আপনি ট্যুরিস্ট হিসেবে স্রেফ নুবরা ভ্যালি, অর্থাৎ সিয়াচেন গ্লেসিয়ারের প্রবেশদ্বার, পর্যন্তই যেতে পারেন, যা কিনা বেস ক্যাম্প এবং সিয়াচেন ব্যাটেল স্কুল থেকে বেশ খানিকটা দূরে। নতুন নিয়মে ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে আরও বেশ কিছুটা ভেতরে যেতে দেওয়া হতে পারে পর্যটকদের। বস্তুত, ২০০৭ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সেনা অ্যাডভেঞ্চার সেল-এর পরিচালনায় করানো হতো 'সিয়াচেন ট্রেক', যার ফলে মুষ্টিমেয় কিছু সিভিলিয়ানকে বেস ক্যাম্প এবং কুমারের মধ্যে আসা-যাওয়া করতে দেওয়া হতো।

বর্তমানে পর্যটকরা যেতে পারেন ওয়ারশি পর্যন্ত, যা সিয়াচেন বেস ক্যাম্পের পথে পড়ে, এবং টুরটুক থেকে এগিয়ে ত্যাকশি গ্রাম অবধি। ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধ হওয়া পর্যন্ত এই দুটি গ্রাম ছিল পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের অংশ, এবং ২০১০ পর্যন্ত সেখানে যেতে দেওয়া হতো না কোনও অসামরিক নাগরিক, অর্থাৎ সিভিলিয়ানকে। ততদিন পর্যন্ত স্রেফ নুবরা ভ্যালিতে পানামিক অবধি যেতে পারতেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: জমে পাথর জুস, ডিম, শাকসবজি, দেখুন সিয়াচেনে কীভাবে থাকেন ভারতীয় সেনারা

কী পরিস্থিতিতে হতো 'সিয়াচেন ট্রেক'?

মোট ৩০ দিনের ট্রেক হতো, এবং চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ বা কন্ডিশনিংয়ের পরেই হিমবাহের উচ্চতায় পা রাখতে দেওয়া হতো অংশগ্রহণকারীদের। বেস ক্যাম্পের উচ্চতা প্রায় ১১ হাজার ফুট, এবং কুমার পোস্টের উচ্চতা আন্দাজ ১৬ হাজার ফুট। অগাস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে করানো হতো ট্রেক, এবং কড়া মেডিক্যাল অনুশীলনের মধ্যে থাকতে হতো ট্রেকারদের। লাদাখের রাজধানী লেহ এবং সেখান থেকে কিছুটা এগিয়ে করা হতো আবহাওয়ার অভ্যস্তকরণ (acclimatisation) শিবির। ৪৫ বছরের কম বয়সী যে কোনও সিভিলিয়ানের জন্য খোলা ছিল এই ট্রেক, আসতেন ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমি, ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি, এবং অন্যান্য সামরিক স্কুলের ক্যাডেটরাও। বেস ক্যাম্প থেকে কুমারের ৬০ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করা হতো নয় দিনে।

হিমবাহে ট্যুরিস্ট ঢুকতে দেওয়ায় কী অসুবিধে হতে পারে?

প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো পরিবেশ রক্ষা। সিয়াচেন হিমবাহ আদতে একটি যুদ্ধক্ষেত্র, এবং একটি হিসাব অনুযায়ী, সেখানে সেনাবাহিনীর উপস্থিতির কারণে ইতিমধ্যেই দৈনিক প্রায় ১,০০০ কিলো বর্জ্য পদার্থের সৃষ্টি হয়। পর্যটকরা এই বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ বাড়াবেন, ফলে বাড়াতে হবে সাফাই ব্যবস্থা। বেস ক্যাম্পের কাছ দিয়ে বাড়বে যান চলাচল, কিন্তু যেখানে বেস ক্যাম্পই হিমবাহের মুখের খুব কাছে, সেখানে যান চলাচল বেড়ে যাওয়ার অর্থ তাপমাত্রার বৃদ্ধি, এবং হিমবাহের আরও দ্রুত পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। এছাড়াও নিয়মিত পর্যটন মানে সেনাবাহিনীর ওপর আরও চাপ। এলাকায় অসামরিক পরিকাঠামো নেই বললেই চলে, কাজেই কোনোরকম জরুরি পদক্ষেপ অথবা চিকিৎসা পরিষেবার প্রয়োজন পড়লে ভরসা বলতে হয় বায়ুসেনা, নাহয় সেনাবাহিনী।

এলাকায় চিকিৎসার কী ব্যবস্থা?

অসামরিক নাগরিকদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে নুবরা ভ্যালিতে, যা সিয়াচেন হিমবাহ থেকে বেশ দূরে। লেহ থেকে ১২০ কিমি'র দূরত্বে দিসকিট বলে একটি জায়গায় রয়েছে ৫০টি বেড-বিশিষ্ট সাব-ডিস্ট্রিক্ট হাসপাতাল, যেখানে আপনি পাবেন সেন্ট্রাল হিটিং, এক্স-রে, আলট্রাসাউন্ড, ল্যাবরেটরি, মায় ডেন্টাল ইউনিট পর্যন্ত। উন্নততর পরিষেবা মিলবে হুন্দরের মিলিটারি হাসপাতালে, অথবা লেহ-র এসএমএইচ মেমোরিয়াল হাসপাতালে, যেখানে রয়েছে ১৫০টি বেড।

এখন ঠিক কতটা শান্ত সিয়াচেন গ্লেসিয়ার?

২০০৩ সালে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা না হওয়া অবধি সিয়াচেন হিমবাহ ছিল বিশ্বের সর্বোচ্চ যুদ্ধক্ষেত্র। গুলির লড়াই ছিল প্রায় রোজকার ঘটনা, এবং ভারত-পাক সেনাবাহিনীর রেইড এবং পাল্টা রেইডের লেখাজোখা ছিল না। আজ আর শোনা যায় না গুলি চলার আওয়াজ, কিন্তু ২৩ হাজার ফুট উচ্চতায় সালতোরো রিজে পর্যন্ত অবস্থিত রয়েছে সেনাবাহিনীর পোস্ট, যেখান থেকে নজরদারি চলছে বিরামহীন।

Indian army
Advertisment