Advertisment

বিশ্লেষণ: কীভাবে নির্ধারিত হয় ফিফা বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ

আজ অনুষ্ঠেয় ১৬ টি এশিয়ান জোন বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং ম্যাচের মধ্যে একটি হলো ভারত বনাম বাংলাদেশ। সমগ্র পরিস্থিতির নিরিখে ম্যাচ হিসেবে এটি কিঞ্চিৎ কম গুরুত্বপূর্ণও বটে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
india vs bangladesh fifa world cup

অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস

FIFA World Cup 2022 Qualifiers: কাতারে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হতে এখনও তিন বছর বাকি, কিন্তু বেশ কিছু দেশের যাত্রা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisment

মঙ্গলবার কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ২০২২ বিশ্বকাপ এবং ২০২৩ এশিয়া কাপের যৌথ কোয়ালিফাইং ম্যাচ খেলা হয় দুই পড়শি রাষ্ট্র ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে। এই যাত্রায় এটি ভারতের তৃতীয় ম্যাচ - মধ্যপ্রাচ্যের হেভিওয়েট দল ওমানের কাছে ৫ সেপ্টেম্বর গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ১-২ এর ব্যবধানে হেরে যায় সুনীল ছেত্রীর দল। এর পর ১১ সেপ্টেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় কাতারেরই বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে ভারত।

মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ১৬ টি এশিয়ান জোন বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং ম্যাচের মধ্যে একটি ছিল ভারত বনাম বাংলাদেশ। তবে সমগ্র পরিস্থিতির নিরিখে ম্যাচ হিসেবে এটি কিঞ্চিৎ কম গুরুত্বপূর্ণও বটে।

এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মধ্যে সতত পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্কের প্রেক্ষিতে এদের মধ্যে যে কোনও খেলাই উত্তেজনার সঞ্চার করে। মঙ্গলবার ইতিহাসে স্রেফ দ্বিতীয়বার এমনটা ঘটে যে উত্তর কোরিয়ার আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে সেদেশে প্রবেশ করে দক্ষিণ কোরিয়ার দল। প্রথমবার উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়াং-এ দুই দেশ মুখোমুখি হয় ১৯৯০ সালে। গতকালের এই বিরল ডার্বির কোনও লাইভ সম্প্রচার হয় নি। বিবিসি জানায়, দক্ষিণ থেকে কোনও সমর্থককে উত্তরে ঢুকতে দেওয়া হয় নি। এবং কোনও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকেও এই ম্যাচ কভার করার অনুমতি দেওয়া হয় নি।

আরও একটি কৌতূহলপ্রদ প্রতিযোগিতা হলো সৌদি আরবের সঙ্গে প্যালেস্টাইনের, ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের আল-রাম শহরে। সংবাদ সংস্থা এএফপি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ম্যাচের ক্ষেত্রে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক নিয়ে সৌদি নীতিতে বদল দেখা যাচ্ছে। এর আগে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে প্যালেস্টাইনের জাতীয় দলের মাঠে খেলতে অস্বীকার করেছে আরবের কোনও ফুটবল ক্লাব বা দল, যেহেতু সেখানে যেতে হলে ইজরায়েলের ছাড়পত্রের প্রয়োজন, যার জন্য আবেদন করার অর্থ, দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার ইঙ্গিত।

চার বছর আগে জর্ডানে অনুষ্ঠিত হয় প্যালেস্টাইন-সৌদি আরব ম্যাচ, কারণ ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে যেতে অস্বীকার করে আরব দল। কিন্তু মঙ্গলবারের ম্যাচগুলির ক্ষেত্রে সমস্যা এই যে দক্ষিণ কোরিয়া অথবা সৌদি আরব যথাক্রমে উত্তর কোরিয়া বা প্যালেস্টাইন খেলতে যেতে না চাইলে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা নিয়মানুযায়ী তিন পয়েন্ট করে পেয়ে যেত। এশিয়ার মতো প্রতিযোগিতামূলক গ্রুপে তা আত্মহত্যার সামিল।

কী নিয়মে কাজ করে ফিফা বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের প্রক্রিয়া?

তিন বছরের মেয়াদ, ২১১ টি দল

২০২২ সালের বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্ব শুরু হয় চলতি বছরের ৬ জুন থেকে, যখন প্রাথমিক রাউন্ডে মুখোমুখি হয় এশিয়ার দুর্বলতম দলগুলি। যোগ্যতা অর্জন বা কোয়ালিফাইং পর্ব শেষ হবে ২০২২ সালের মার্চ মাসে, যে সময়ের মধ্যে ফিফা'র ছ'টি কনফেডারেশনের ২১১ টি দল এতে অংশগ্রহণ করবে। উল্লেখ্য, বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে যে পরিমাণ দেশ অংশ নেয়, সেই সংখ্যা রাষ্ট্রসংঘের সদস্য সংখ্যার (১৯৩) চেয়ে বেশ খানিকটা বেশি।

ইউরোপীয় ক্ষেত্রে থেকে কোয়ালিফাই করা সবচেয়ে কঠিন বলে মনে করা হয়। ২০২১ মার্চ মাস থেকে ৫৫টি ইউরোপীয় দেশের মধ্যে শুরু হবে ১৩টি স্থানের জন্য লড়াই। ১০টি পুলে ভাগ করা হবে দলগুলিকে। প্রতিটি পুলের বিজয়ী দল বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে, বাকি তিনটি দল বেছে নেওয়া হবে প্লে-অফের মাধ্যমে।

বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলেই এই একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। আফ্রিকার কোটা হলো পাঁচটি দলের; দক্ষিণ আমেরিকা এবং এশিয়া থেকে চারটি দলকে সরাসরি বাছাই করা হবে, এবং আরও একটি দল আসবে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফের মাধ্যমে; মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশগুলির বরাদ্দ তিনটি সরাসরি বাছাই, এবং একটি প্লে-অফ; ওশেয়ানিয়ার ভাগ্যে রয়েছে স্রেফ একটি প্লে-অফের মাধ্যমে নির্বাচন, কোনও সরাসরি বাছাই নয়।

FIFA World Cup 2022 Qualifiers: ভারতের কি আদৌ সুযোগ আছে

মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই ধরে নেওয়া যায় যে ভারতের কোনও সুযোগ নেই। ১০৪ নম্বরে অধিষ্ঠিত ভারতের কোয়ালিফাইং পর্বে স্থান হয়েছে গ্রুপ ই-তে, যাতে রয়েছে আয়োজক দেশ কাতার, ওমান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ।

আরও বেশি সংখ্যক দেশকে প্রতিযোগিতায় সামিল করার উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন বিশ্বকাপ এবং এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইং ম্যাচগুলিকে সংযুক্ত করে দেয়। সুতরাং এশিয়ান কোয়ালিফায়ারের আটজন গ্রুপ বিজয়ী এবং চারজন শ্রেষ্ঠ রানার-আপ বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারের দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রবেশ করবে। একই সঙ্গে তারা খেলার সুযোগ পাবে ২০২৩ সালে চিনে অনুষ্ঠেয় মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নশিপেও। বাকি দলগুলি কাতার ২০২২-এর আশা ত্যাগ করে এশিয়ান কাপে খেলার সুযোগের জন্য লড়বে।

কোয়ালিফায়ারের প্রথম দু'টি ম্যাচে ভদ্রস্থ খেলে ভারত। ঘরের মাঠে উদ্বোধনী ম্যাচে উচ্চতর র‍্যাঙ্কিং সম্পন্ন ওমানের কাছে খেলার শেষার্ধে দু'টি গোলের সুবাদে ২-১ হারে তারা। এবং তার এক সপ্তাহ পরে দোহায় কাতারের বিরুদ্ধে সাহসী ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলে গোলশূন্য ড্র করে ঘরে ফেরে। এই দ্বিতীয় ম্যাচের ফলাফলকে অনেকেই ভারতের পক্ষে শতাব্দীর সেরা বলে বর্ণনা করেছেন, ২০০২ বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে বেঙ্গালুরুতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকে ১-০ হারানোর কথা মাথায় রেখেও। কিন্তু তা সত্ত্বেও কাতার বা ওমানের চেয়ে এগিয়ে গিয়ে গ্রুপের শীর্ষে, এমনকি দ্বিতীয় স্থানেও জায়গা করে নেবে ভারত, এমন আশা করছেন না কেউ।

বাস্তববুদ্ধি বলে যে ভারতের আপাতত উচিত, এশিয়ান কাপে ঝামেলাহীন প্রবেশের রাস্তা তৈরি করা। তা যদি করতে পারে, তবে বহু দশক পরে এই প্রথম পরপর মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করবে ভারত। এবং এর সহজতম উপায় হলো গ্রুপে তাদের চেয়ে তালিকায় নীচে থাকা বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাক্সিমাম পয়েন্ট সংগ্রহ করা।

সেই নিরিখে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ ছিল নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, যদিও বাকি দুনিয়ার নজর হয়তো থাকবে অন্যান্য রাজনৈতিক সমীকরণের ওপর।

FIFA World Cup Bangladesh indian football team
Advertisment