৭৪ বছর আগের এই দিনে, অর্থাৎ ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৬-এ HMIS Talwar ও রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভির ১১০০ ভারতীয় নাবিক অনশন ধর্মঘট ঘোষণা করেছিলেন। নৌবাহিনীতে ভারতীয়দের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও তাঁদের যে দুর্গতি, তার বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল এই বিক্ষোভ। শুরুটা হয়েছিল ধীরে চলো থেকে- যার অর্থ নৌকর্মীরা তাঁদের কর্তব্য করবেন ধীর গতিতে।
Advertisment
এ ঘটনায় যারপরনাই ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন কম্যান্ডার এফ এম কিং। শোনা যায় নৌকর্মীদের তিনি "কুলি ও কুত্তির বাচ্চা" বলে উল্লেখ করেছিলেন, যার জেরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।
১৯৪৬-এর নৌ বিদ্রোহ- ধর্মঘট ও দাবিদাওয়া
১৮ ফেব্রুয়ারির পরের সকালে, ১০ থেকে ২০ হাজার নাবিক এই বিদ্রোহে যোগ দেন, তার মধ্যে ছিলেন করাচি, মাদ্রাজ, কলকাতা, মণ্ডপম, বিশাখাপতনম ও আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের নাবিকরাও।
প্রাথমিকভাবে এ বিক্ষোভের কারণ ছিল আরও ভাল খাবার ও কাজের পরিস্থিতি, তবে খুব দ্রুতই তা ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতার বৃহত্তর আন্দোলনে পর্যবসিত হয়।
বিক্ষোভকারী নাবিকরা দাবি করেছিল, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজ থেকে ধৃত বন্দিদের সমেত সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে, দুর্ব্যবহার ও কুভাষা প্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হব, রয়্যাল নেভি ও রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভির কর্মীদের বেতন ও ভাতা সমতুল করতে হবে, ইন্দোনেশিয়ায় আটকে থাকা ভারতীয় বাহিনীকে ছাড়তে হবে ও অফিসারদের নিম্নপদস্থ কর্মীদের সঙ্গে সুব্যবহার করতে হবে।
১৯৪৬-এর নৌবিদ্রোহ: জাতীয়তাবাদের উত্থান
যে সময়ে এই ধর্মঘট শুরু হয়েছিল সে সময়ে সারা দেশ জুড়ে তুঙ্গে ছিল জাতীয়তাবাদী হাওয়া। ১৯৪৫-৪৬ সালের শীতে তিনটে হিংসাত্মক অভ্যুত্থান হয়েছে,- ১৯৪৫ সালের নভেম্বরে আজাদ হিন্দ ফৌজের বিচারের সময়ে, ১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আজাদ হিন্দ ফৌজের অফিসার রশিদ আলির শাস্তির সময়ে, এও সেই কলকাতাতেই, এবং সে মাসেই বম্বেতে শুরু হওয়া নৌবিদ্রোহ।
রয়্যাল ইন্ডিয়ান ন্যাভাল ভলান্টিয়ার রিজার্ভের প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট পার্সি এস গর্গি তাঁর পুস্তিকা The Indian Naval Report of 1946-এ লিখেছেন পরপর ঘটনাবলী কীভাবে গোটা রাজনৈতিক পরিবেশের পারদ চড়িয়ে দিচ্ছিল।
নৌবিদ্রোহের শুরুর একটা বড় কারণ ছিল বিসি দত্ত নামের এক নৌকর্মীর গ্রেফতারি। তিনি ভারত ছাড়ো শ্লোগান দিয়ে গ্রেফতার হন। ধর্মঘট শুরুর পর দিন নৌকর্মীরা বম্বের সর্বত্র লরি নিয়ে ঘুরতে থাকেন ও কংগ্রেসের পতাকা দোলাতে থাকেন, এবং কোনও ইউরোপিয় বা পুলিশকর্মীরা তাঁদের বাধা দিলে তা উড়িয়ে দেন।
খুব দ্রুতই এই বিদ্রোহী নৌকর্মীদের সঙ্গে যোগ দেন সাধারণ মানুষ, বম্বে ও কলকাতা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। চলতে থাকে সভা, সমাবেশ, মিছিল ও হরতাল। বম্বেতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও বম্বে স্টুডেন্টস ইউনিয়নের ডাকে শ্রমিকরা সাধারণ ধর্মঘটে যোগ দেন। দেশের বিভিন্ন শহরে ছাত্ররা ক্লাস বয়কট করেন।
রাষ্ট্র এর বিরুদ্ধে বর্বর ভূমিকা গ্রহণ করে। পুলিশের গুলিতে ২২০ জনের মৃ্ত্যু ঘটে, আহত হন ১০০০ জন প্রায়।
ঘটনাবলীর তাৎপর্য
রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভির বিক্ষোভ আজ কিংবদন্তিতে পর্যবসিত। এই বিদ্রোহের জেরে ভারতীয় জনগণের সব অংশের মধ্যে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর সংকল্প দেখা যায়। বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে গভীর সংহতি প্রত্যক্ষ হয় যা তৎকালীন সময়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের পরিবেশের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল।
তবে সাম্প্রদায়িক ঐক্য অনেকটাই ছিল সাংগঠনিক ঐক্য, তার মধ্যে প্রধান দুই সম্প্রদায়ের ঐক্য ততটা ছিল না। কয়েক মাসের মধ্যেই গোটা ভারতে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের আগুন জ্বলে ওঠে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন
আমাদের নিউজলেটার সদস্যতা!
একচেটিয়া অফার এবং সর্বশেষ খবর পেতে প্রথম হন