Multiple gunmen went on a shooting: মস্কোর বিখ্যাত ক্রোকাস সিটি হল। শুক্রবার সেখানেই হামলা চালিয়েছে একাধিক বন্দুকধারী। হামলায় কমপক্ষে ১৪৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত শতাধিক। হামলায় যুক্ত সন্দেহে অন্ততপক্ষে চার সন্দেহভাজন বন্দুকধারী-সহ কমপক্ষে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে, রুশ সরকারের সদর দফতর ক্রেমলিন।
পুতিন যা বলেছেন
ইসলামিক স্টেট অফ খোরাসান (আইএসআইএস-কে) সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা এক বিবৃতিতে ইতিমধ্যেই হামলার দায় স্বীকার করেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দারা এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। রাশিয়ার অভিযোগ, গোটা ঘটনার পিছনে রয়েছে ইউক্রেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শনিবার অভিযোগ করেছেন, 'ইউক্রেনের পক্ষের কিছু লোক জঙ্গিদের রাশিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। জঙ্গি হামলার চার প্রত্যক্ষ অপরাধী, যারা মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের খুঁজে পাওয়া গেছে এবং গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা লুকোনোর চেষ্টা করেছিল এবং ইউক্রেনের দিকে চলে যাচ্ছিল। প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে তাদের জন্য সীমান্ত অতিক্রম করার একটি রাস্তা করে দেওয়া হয়েছিল। সবমিলিয়ে মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।'
আইসিস-কে কী?
ইসলামিক স্টেট অফ খোরাসান (আইসিস-কে), ২০১৪ সালের শেষের দিকে পূর্ব আফগানিস্তানে তৈরি হয়। বর্তমানে এটি সবচেয়ে সক্রিয় আইএসআইএস জঙ্গি সংগঠনগুলোর একটি। 'খোরাসান' বলতে, এই অঞ্চলের প্রাচীন খিলাফত সাম্রাজ্যকে। যার বিস্তৃতি ছিল আজকের আফগানিস্তান, ইরান, পাকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানের কিছু এলাকায়।
কীভাবে তৈরি হয়েছে এই সংগঠন?
তেহরিক-ই-তালেবান (টিটিপি) থেকে বিচ্ছিন্ন জঙ্গিদের সমন্বয়ে গঠিত এই দল প্রয়াত আইএসআইএস প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদির প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করে, চরম বর্বরতার জন্য কুখ্যাতি পেয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবানরা এই জঙ্গিগোষ্ঠীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। যাই হোক, আল জাজিরার কথা অনুযায়ী, আইসআইএস-কে এখনও আফগানিস্তানে তালেবানের শত্রুদের মধ্যে অন্যতম প্রধান।
আইসিস-কে সংগঠনের বিভিন্ন ভয়ংকর হামলা
এই জঙ্গিগোষ্ঠী বহু গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গি হামলার পিছনে। ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময় এই জঙ্গিগোষ্ঠী কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলা চালায়। হামলায় অন্তত ১৩ মার্কিন সেনা ও অন্তত ১৭৫ আফগান নাগরিক প্রাণ হারান। এই জঙ্গিগোষ্ঠী কাবুলে রুশ দূতাবাসেও আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। ২০২৪ সালের গোড়ায় ইরানের কেরমানে এই জঙ্গিদের জোড়া বিস্ফোরণে প্রায় ১০০ জন প্রাণ হারান। চলতি মাসের গোড়ার দিকে, পশ্চিম এশিয়ার শীর্ষ মার্কিন জেনারেল জানিয়েছিলেন যে আইএসআইএস-কে আফগানিস্তানের বাইরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অথবা পশ্চিমী কোনও শক্তির ওপর বিনা সতর্কতায় ছয় মাসের মধ্যে হামলা চালাতে পারে। আর, তারপরই রাশিয়ার ওপর এই হামলা হল বলেই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
আরও পড়ুন- ভারতের রঙের উৎসব, ইউরোপীয়দের উচ্চারণে বুঝতেই পারবেন না, হোলি বলছে
কেন রাশিয়ার ওপর হামলা?
আফগানিস্তান এবং ইরানের বাইরে আইসিস-কে জঙ্গিগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় হামলা বলতে মস্কোয় সন্ত্রাস। কয়েক বছর ধরেই রাশিয়ায় মুসলিমদের প্রতি দুর্ব্যবহার বাড়ছে বলেই অভিযোগ করেছিল জঙ্গি সংগঠনটি। আর, এই কারণে সংগঠনটি প্রকাশ্যে পুতিনেরও বিরোধিতা করেছে। ওয়াশিংটনের গবেষণা সংস্থা সোফান সেন্টারের কলিন ক্লার্ক রয়টার্সকে বলেন, 'আইএসআইএস-কে গত দুই বছর ধরে রাশিয়ার ওপর নিশানা করছিল। এই জঙ্গি সংগঠন বহুবার পুতিনের সমালোচনা করেছে। 'The Islamic State in Afghanistan and Pakistan: Strategic Alliances and Rivalries, (2023)' গ্রন্থের লেখক আমিরা জাদুন সংবাদ সংস্থা আল জাজিরাকে বলেছেন, 'আইএসআইএস এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধে রাশিয়ার যোগদান, বিশেষ করে সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক অভিযান, প্রতিদ্বন্দ্বী আফগান তালেবানদের সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টায় রাশিয়ার ওপর এই জঙ্গি সংগঠন ক্ষুব্ধ।' আর, ভারতের বিরুদ্ধে তো এই জঙ্গি সংগঠন বারবার হামলার হুমকি দিয়েছে। ফলে, সতর্ক থাকতে হচ্ছে নয়াদিল্লিকেও। মস্কোয় হামলার পর যে সতর্কতা আরও বেড়েছে।