Israel-Lebanon: হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য লেবাননে হামলা জোরদার করল ইজরায়েল। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে যে তারা ৩০ সেপ্টেম্বর লেবাননে স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে প্রায় ২৫০ হিজবুল্লাহ জঙ্গিকে হত্যা করেছে। একইসঙ্গে নিশ্চিত করেছে যে দক্ষিণ লেবাননে তাদের আট জন সৈন্য এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। লেবানন ইজরায়েলের উত্তরে অবস্থিত। ইরান-সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ লেবাননের দক্ষিণে সক্রিয়। সেখান থেকেই তারা গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে রকেট হামলা চালাচ্ছে।
লেবাননে এই ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষকে ইজরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘর্ষ এবং ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধের অংশ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। লেবানন একটি সার্বভৌম দেশ। তার নিজস্ব সেনাবাহিনী আছে। ইজরায়েল যখন লেবাননের ভূখণ্ডে হানা দিচ্ছে, আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ করছে, লেবাননের সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করছে, বাস্তুচ্যুত করছে, তখন লেবাননের সরকার এবং সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী? এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
একনজরে:
- ১৯৪৩ সালে ফ্রান্সের থেকে স্বাধীনতা পায় লেবানন।
- ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান চালাচ্ছে ইজরায়েল।
- এর আগেও দক্ষিণ লেবানন দখল করেছিল ইহুদি রাষ্ট্র।
লেবাননের প্রাচীন সভ্যতায় পশ্চিম এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধর্মীয় বৈচিত্র্য রয়েছে। এটি শিয়া, সুন্নি, ম্যারোনাইট খ্রিস্টান, ড্রুজ, মেলকাইট, গ্রিক অর্থোডক্স, খ্রিস্টান-সহ বেশ কয়েকটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কেন্দ্রস্থল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ীরা তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছিল। তখন লেবানন ফ্রান্সের অধীনে ছিল। ১৯৪৩ সালে ফ্রান্সের থেকে স্বাধীনতার পর, লেবাননে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সরকার গঠিত হয়। বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী সেই সরকারে যোগ দেয়। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকারের পদ সুন্নি, শিয়া এবং ম্যারোনাইটদের দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়।
লেবাননে সমস্যার মূল কারণ
আপাতদৃষ্টিতে ন্যায্য এই ব্যবস্থাই লেবাননের রাজনীতিকে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার দিকে ঠেলে দেয়। পৃষ্ঠপোষকতা এবং দুর্নীতির সংস্কৃতি তৈরি করে বলে অভিযোগ। রাজনীতিবিদরা সাম্প্রদায়িকতার পথে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা চালান। কর্মী নিয়োগে কর্মক্ষমতাকে কম গুরুত্ব দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই পরিস্থিতিতে সিরিয়া, ইজরায়েল, ইরান, সৌদি আরব এবং পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন গোষ্ঠী ও দেশগুলো বিভিন্ন পক্ষকে সমর্থন করে লেবাননকে একের পর এক গৃহযুদ্ধ এবং বিদেশি আক্রমণের মুখে ঠেলে দেয়। আজ অবধি লেবাননে একটি দুর্বল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায়। কারণ ২০২২ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট পদ নিয়ে কোনও ঐকমত্য হয়নি। দেশ চালাচ্ছেন সুন্নি মুসলিম প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি।
هدفنا الأساسي اليوم أن نشبك الأيدي، لاستقطاب فرص العمل إلى طرابلس، ونحقق لشمالنا الحبيب المزيد من الازدهار، ونجد الحلول للبطالة، عبر إيجاد فرص عمل pic.twitter.com/C7i4Jv9JWt
— Najib Mikati (@Najib_Mikati) March 8, 2019
২০১৯ সালের এক ভয়ানক অর্থনৈতিক সংকট লেবাননের সরকারকে আরও দুর্বল করেছে। এই অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে জনগণের ক্ষোভ হিজবুল্লাহর জনপ্রিয়তাকেও আঘাত করেছে। তার ওপর প্রতিবেশী যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে ক্রমাগত উদ্বাস্তুরা লেবাননে প্রবেশ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে, হিজবুল্লাহ নিজেকে একটি আধা রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাদের নিজস্ব বাহিনী আছে। লেবাননের পার্লামেন্টে তাদের আসন আছে। লেবাননে তারা উন্নয়ন এবং আর্থিক পরিষেবা দেয়। এই জগাখিচুড়ি সরকারে প্রয়োজনীয় কর্তৃত্ব এবং বৈধতার অভাব আছে। মিকাতি তাঁর দেশে ক্রমবর্ধমান মৃত্যু এবং ধ্বংসের প্রতি আন্তর্জাতিক দুনিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন। ২ অক্টোবর, তিনি বলেছেন যে লেবাননে প্রায় ১.২ মিলিয়ন মানুষ ইজরায়েলি হামলার কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর, 'অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন।'
এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী মিকাতি, সংবাদমাধ্যমের সামনে রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাব এবং রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব নম্বর ১৭০১ উত্থাপন করেছেন। তিনি লেবাননের স্পিকার নাবিহ বেরির (একজন শিয়া) সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকের পর মিকাতি বলেন, 'আমরা লেবাননে ১৭০১ বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত। যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গেই লেবানন লিতানি নদীর দক্ষিণে লেবাননের সেনাবাহিনী পাঠাতে এবং তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত থাকবে।' রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাব ১৭০১ (২০০৬ সালে গৃহীত), হিজবুল্লাহ এবং ইজরায়েল যুদ্ধের অবসানের জন্য গৃহীত হয়েছিল। তার শর্ত অনুসারে, হিজবুল্লাহকে লিতানি নদীর উত্তরে সরে যেতে হয়েছিল। এই নদী ইজরায়েল-লেবানন সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। ইজরায়েলকে সম্পূর্ণরূপে দক্ষিণ লেবানন খালি করতে হয়েছিল।
আরও পড়ুন- আরবভূমে মহাযুদ্ধ! বড় ভূমিকা নিতে চলেছে মোদীর ভারত?
দক্ষিণ লেবাননে এর আগেও বারবার প্রবেশ করেছে ইজরায়েলের সেনা। সেই সময় সরে যেতে বাধ্য হয়েছিল দক্ষিণ লেবানন থেকে। আর রাষ্ট্রসংঘের ওই প্রস্তাবে বলা ছিল যে, সরকারি লেবানিজ সেনাবাহিনী এবং রাষ্ট্রসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী লিতানি নদীর দক্ষিণভাগ দেখভাল করবে। তারাই লিতানি নদীর দক্ষিণভাগে একমাত্র সশস্ত্র বাহিনী হিসেবে মোতায়েন থাকবে। কিন্তু, এতদিন এসব কোনও প্রস্তাবই লেবাননের প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়িত করেননি। কারণ, লেবাননের সেনা হিজবুল্লাহর চেয়েও দুর্বল। তার ওপর আবার বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত। ফলে, তাদের না হিজবুল্লাহ, না ইজরায়েলকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা আছে।