Israel-Lebanon: অর্ধশতাব্দীর মধ্যেই ফের লেবাননের মাটিতে চতুর্থবার হানা দিল ইজরায়েলি সেনা। শেষবার হানা দিয়েছিল ২০০৬ সালে। সেবার ৩৪ দিন যুদ্ধের পর, এবারের হানাই প্রথম। ইজরায়েলের বাহিনী সোমবার এই স্থল আক্রমণ শুরু করেছে।
১৯৮২ সালের যুদ্ধ
হিজবুল্লাহ এবং ইজরায়েলের মধ্যে ২০০৬ সালের যুদ্ধের শিকড় পোঁতা ছিল ১৯৮২ সালে। সেই সময় প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (PLO)-কে সামরিক এবং রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করার জন্য ইজরায়েল দক্ষিণ লেবানন আক্রমণ করেছিল। তখন পিএলও (PLO)-র লক্ষ্য ছিল, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে প্যালেস্তাইনকে মুক্ত করা। সেই সময় পিএলওর যোদ্ধারা ইজরায়েলে হামলা চালানোর জন্য দক্ষিণ লেবাননকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিল।
ইজরায়েলের সেনা প্রত্যাহার
লেবানন দীর্ঘ ১৮ বছর ইজরায়েলের দখলে ছিল। যার জেরে হিজবুল্লাহ তৈরি হয়। ইরান সমর্থিত, এই সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠীর লক্ষ্য ছিল, ইজরায়েলকে লেবাননের ভূখণ্ড থেকে বের করে দেওয়া। হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির জন্যই ইজরায়েল ২০০০ সালে লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করে। যাকে হিজবুল্লাহ ইজরায়েলের বিরুদ্ধে আরবের প্রথম জয় হিসেবে দাবি করেছিল।
হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘর্ষ
তবে, লেবাননকে দখলমুক্ত করেই কিন্তু ইজরায়েলের বিরুদ্ধে জিহাদ বন্ধ করেনি হিজবুল্লাহ। তারা
ইহুদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিল। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহ মনে করে ইজরায়েলের এই সেনা প্রত্যাহার অসম্পূর্ণ। তারা, 'বিতর্কিত শেবা ফার্মস এলাকা দখল রাখা এবং ইজরায়েলে লেবানিজদের বন্দি করে রাখার অভিযোগ'-এ ইজরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রাখে।
২০০৬-এ যুদ্ধের শুরু
২০০৬ সালের ১২ জুলাই, হিজবুল্লাহর জঙ্গিরা সীমান্তে ইজরায়েলের সেনাদের আক্রমণ করে, আর ইজরায়েলের তিন জন সৈন্যকে হত্যা করে আর দু'জনকে বন্দি করে। বিনিময়ে লেবাননের বন্দিদের মুক্তির দাবি জানায়। জবাবে, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট এই সেনা অপহরণকে 'যুদ্ধ' ও 'খুব বেদনাদায়ক এবং সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া' বলে অভিহিত করেন। তিনি ইজরায়েলবাসীকে বন্দি সেনাদের মুক্ত করার এবং দক্ষিণ লেবানন থেকে হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করার হুঁশিয়ারি দেন।
নর্টন জানিয়েছেন
এ অগাস্টাস রিচার্ড নর্টন তাঁর ২০০৭ সালে প্রকাশিত, 'হিজবুল্লাহ: একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস' বইয়ে লিখেছেন, '১৩ জুলাই ইজরায়েল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে পালটা আক্রমণ শুরু করে। যা ধারণাও করতে পারেননি হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। একদিনের মধ্যে লেবানন তট ইজরায়েলের দখলে চলে এসেছিল। বেইরুট বিমানবন্দরে হামলা হয়েছিল। বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১৪ জুলাই নাসরুল্লাহর অফিসে বোমা হামলা চালানো হয়। পালটা, হিজবুল্লাহ নাসরুল্লাহর একটি রেকর্ড করা বিবৃতি প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়, 'আপনারা প্রকাশ্যে যুদ্ধ চেয়েছিলেন। আমরা সেই রাস্তায় হাঁটছি।'
হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হানা
জঙ্গি গোষ্ঠীটি ইজরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। যার বেশিরভাগই ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যবহৃত কাতিউশা ক্ষেপণাস্ত্র। ১৬ জুলাই, হাইফা ট্রেন ডিপোতে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। যাতে ইজরায়েল রেলওয়ের আট জন কর্মচারী নিহত হন। সাফেদ, নাজারেথ এবং আফুলা-সহ উত্তর ইজরায়েলের অন্যান্য শহরগুলোও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এপির ২০১১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্র ৩৪ দিন ধরে চলা যুদ্ধে ইজরায়েলের মোট ৬,০০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
আরও পড়ুন- লাদাখ থেকে রাজধানীতে, কেন ওয়াংচুকদের 'দিল্লি চলো' ডাক?
ইজরায়েলের পালটা হামলা
ইজরায়েলের পালটা হামলায় লেবাননের ১৫,০০০টিরও বেশি বাড়িঘর, ৬৪০ কিলোমিটার রাস্তা, ৯০০টি বাণিজ্যিক কাঠামো, ৩৫০টি স্কুল এবং দুটি হাসপাতাল ধ্বংস হয়ে যায়। এপির ২০১১ সালের রিপোর্টে বলা হয়, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দাবি অনুযায়ী, 'ইজরায়েলি যুদ্ধবিমান লেবাননে প্রায় ৭,০০০ বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র ফেলেছিল।' শেষ পর্যন্ত, ইজরায়েল ১১৯ সৈন্য এবং ৪৩ জন সাধারণ নাগরিককে এই যুদ্ধে হারায়। আর যুদ্ধে ২৫০ থেকে ৫০০ হিজবুল্লাহ জঙ্গি মারা যায়। লেবাননের প্রায় ১,০০০ সাধারণ নাগরিকও এই যুদ্ধে নিহত হয়েছিল। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতভাবে এই শত্রুতা অবসানের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ১৭০১ অনুমোদিত হওয়ার তিন দিন পর, ২০০৬ সালের ১৪ অগাস্ট যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত হয়। এরপর ফের সোমবার লেবাননে অভিযান চালাল ইজরায়েল।