Jitin Prasada Join BJP Explained: কংগ্রেস ছেড়ে বছর সাতচল্লিশের জিতিন প্রসাদ বিজেপিতে নাম লেখালেন। উত্তর প্রদেশে ভোট আসছে। তার আগে জিতিনকে জিতল বিজেপি। ভোট এলেই বিজেপি-যোগের মহাপর্ব শুরু হয়। এ রাজ্যেও দমবন্ধ হয়ে আসা বেসুরো-রা গেরুয়াধারী হয়েছেন, তাতে কাজের কাজটা হয়নি তো কী, উত্তরপ্রদেশেও গেরুয়া ব্রিগেড তাদের সেই ট্রাডিশনাল রাজনীতি থেকে সরবে না, তা এখন জলবৎ।
প্রসাদ বিজেপির প্রসাদ পেয়ে থুড়ি বিজেপিভুক্ত হয়ে বলেছেন, বিজেপি হল প্রকৃত রাজনৈতিক দল, এবং বিজেপিই একমাত্র জাতীয় দল। কংগ্রেস রাজনীতির জন্য রাজনীতি করে, বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন কারণ মানুষের জন্য তিনি কিছু করতে চান। রাহুল ব্রিগেডের তরুণ তুর্কি নেতার এই দলত্যাগ এবং পুরনো দলের সম্পর্কে এ হেন বিষোদ্গার রাহুল গান্ধীর চোখের কোল জলে ভরিয়ে দিচ্ছে কিনা, জানা নেই। তবে, এর পর আর কে, সেই প্রশ্ন রাহুলের চিন্তার কারণ হয়ে উঠবেই, কারণ, এখনও তেমন উদাহরণটা জ্যান্ত হয়ে তো রয়েছে বঙ্গেই।
প্রসাদ ব্রাহ্মণ, তাই কি তিনি বিজেপি-ভুক্ত?
২০১৭-য় নোটবন্দির সিঁড়িতে চড়ে উত্তরপ্রদেশে ৪০৩টির মধ্যে ৩১২টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। পেয়েছিল ৪১.৭ শতাংশ ভোট। যোগী আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রী করে ঝলসানো চমক দিয়েছিলেন মোদী-শাহ। কিন্তু অতঃকিম? যোগীরাজ্যে বিজেপির যেন জন-বিয়োগপর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে ব্রাহ্মণ সমাজের মধ্যে বিজেপির সমর্থন নাকি বেশ কমতিতে। ১২ শতাংশ ব্রাহ্মণ ভোট এখানে, যা শুধু ভোটবাক্সের ক্ষেত্রেই নয়, সমাজে প্রভাবপ্রতিপত্তির বিচারেও দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঠাকুর সমাজের যোগী আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে ঠাকুরদের সংখ্যা ৮ শতাংশ।
এটা ব্রাহ্মণসমাজ শুরু থেকেই ভাল চোখে দেখেনি। তেমনই হালে ব্রাহ্মণ গ্যাংস্টার বিকাশ দুবেকে যেভাবে পুলিশ হেফাজতে মেরে ফেলা হয়েছে, তা নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক দানা বাঁধে। ব্রাহ্মণ-ক্ষোভ বিজেপি সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলে দেয়। অযোধ্যা ও বারাণসীতে স্থানীয় ভোটে বিজেপি যেভাবে ধাক্কা খেয়েছে, তাতে এই অ-ঠাকুরদের ক্ষোভটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশের বিজেপিতে কিন্তু ব্রাহ্মণ নেতা রয়েছে ভালই। যেমন উত্তরপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী দীনেশ শর্মা, এছাড়া যোগীর মন্ত্রীদের মধ্যে শ্রীকান্ত শর্মা, ব্রজেশ পাঠক, এবং কংগ্রেস থেকে আসা রীতা বহুগুণা জোশী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মহেন্দ্রনাথ পাণ্ডে, প্রমুখ। তা সত্ত্বেও ব্রাহ্মণ সমাজের বড় মুখ জিতিন প্রসাদের মতো তরুণ একজনকে বিজেপিতে এনে গেরুয়া ব্রিগেড ভোটের আগে ব্রাহ্মণসমাজের ক্ষোভানলে জল ঢালতে মরিয়া হল বিজেপি।
আরও পড়ুন ফের বড় ধাক্কা কংগ্রেসের, বিজেপিতে যোগ দিলেন জিতিন প্রসাদা
এত কেন ব্রহ্ম-ভয়?
এক পোড়-খাওয়া ব্রাহ্মণ বিজেপি নেতা বলছেন, এটা ঠিকই যে হাফ ডজনের বেশি ব্রাহ্মণ মন্ত্রী রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রিসভায়, এছাড়াও বিজেপির নানা পদে ব্রাহ্মণরা রয়েছেন। কিন্তু কেউই ব্রাহ্মণ সমাজের নেতা হয়ে উঠতে পারেননি। নিজের সমাজের হিতের জন্য রাজনীতির ময়দানে বুক চিতিয়ে দাঁড়াননি। ফলে জিতিনের থেকে এই সমাজের বড় আশা রয়েছে, সেই আশার পালেই হাওয়া দিতে চাইছে বিজেপি। তাছাড়া ওই নেতা বলছেন, তাঁরা ব্রাহ্মণদের সঙ্গে-- যোগীর মন্ত্রীদের দিকে আঙুল দেখিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব বলেন বটে, কিন্তু সেই মন্ত্রীরা কার্যত নখদন্তহীন। ক্ষমতাশূন্য। ফলে তাঁদের দিয়ে সে সমাজে চিড়ে কিন্তু ভিজছে না বিজেপির। জিতিন সেই দিক থেকে মুখটা ঘুরিয়ে দিতে পারবে বলেই আশাবাদী গেরুয়া ব্রিগেডের শীর্ষ স্তরের অনেকেই।
দলিত নেত্রীর মুখেও 'ব্রাহ্মণ'
বিএসপি প্রধান দলিতের মসিহা মায়াবতী বলেছিলেন, ২০২২-এ যদি তাঁদের জেতায় জনগণ, তা হলে ভগবান পরশুরামের মূর্তি গড়ে দেবেন। এর পর গত জুলাইয়ের শুরুতে গ্যাংস্টার দুবেকে হত্যা করার ঘটনায় মায়াবতীর যোগী সরকারের বিরুদ্ধে তোপও দাগেন, বলেন, ব্রাহ্মণদের উত্যক্ত করছে সরকার। আবার ২০১৮ সালে অ্যাপেলের এগজিকিউটিভ বিবেক তিওয়ারিকে হত্যা নিয়েও হইচই হয়। অভিযোগ ওঠে দুই পুলিশ-কর্মীর বিরুদ্ধে। ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে হিংসা বাড়ছে-- সুর চড়ান মায়া। ২০০৭-এ বহেনজির ব্রাহ্মণ-কার্ডই তাঁকে পূর্ণ বহুমতে ক্ষমতায় এনেছিল। ফলে মায়াবাতীদের নিরস্ত্র করতেও জিতিন কাজে আসতে পারেন বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
শুধু ব্রাহ্মণ-ইস্যুই নয়, আরও কিছু আছে। কী সেটা?
একজন নেতার কথায়, কংগ্রেসমুক্ত ভারতের ডাক সেই কবেই দিয়েছেন মোদীজি। আবার কংগ্রেস মনে করে, বিজেপি-আরএসএস মহাত্মা গান্ধীর ভারতের ধারণারই বিরুদ্ধে। এখন জিতিনের মতো কংগ্রেসিকে দলে এনে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা এবং কংগ্রেস কতটা পরিত্যায্য, তাই বোঝাতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তা ছাড়া, গান্ধীরা তাদের কাছের লোককে দলে রেখে দিতে অপারগ, এবং বিজেপি সর্বজনগ্রাহ্য দল, একটা সমুদ্রের মতো, যেখানে সব দল থেকে নেতা-কর্মীরা আসতে পারেন, প্রসাদের বিজেপি-যোগ সেই বার্তাও সোচ্চারে দিচ্ছে, বলছেন ওই নেতা।
জিতিন প্রসাদের পরিচয় বহু। তিনি কংগ্রেস নেতা জিতেন্দ্র প্রসাদের ছেলে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, এ রাজ্যে কংগ্রেসের দায়িত্বে ছিলেন, রাহুল ব্রিগেডের বড় মুখ। রাহুল ব্রিগেডের আরেক হেভিওয়েট জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ২০২০-র মার্চে গেরুয়াধারী হয়েছেন। এবার জিতিন। শচীন পাইলটও লাইনে আছেন নাকি? তবে, জিতিনকে পেয়ে বিজেপির আদৌ কোনও সুবিধা হল কি না, নাকি আশার প্রাসাদ চুরচুর হল, উত্তরটা উত্তরপ্রদেশের ইভিএম হাড়ে হাড়ে বোঝাবেই।
অনুবাদ: নীলার্ণব চক্রবর্তী
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন