সরকার মাত্র দু'দিন আগেই প্রকল্পটির ঘোষণা করেছে। দু'রাত পেরোতে না-পেরোতেই এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে দেশ। এক থেকে অন্য রাজ্যে ছড়াচ্ছে প্রতিবাদের আগুন। চাকরি প্রার্থীদের সেই প্রতিবাদের আগুনে সরকারের ঘোষিত নিয়োগ প্রকল্প 'অগ্নিপথ' এখন ক্ষোভের 'অগ্নিপথ' হয়ে উঠেছে।
কেন চাকরিপ্রার্থীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন?
এই প্রকল্পে চাকরির নিরাপত্তা কোথায়? পেনশন কোথায়? সেটাই এখন বিক্ষোভকারীদের প্রধান প্রশ্ন। প্রকল্পটি অনুযায়ী চার বছরের জন্য জওয়ানদের নিয়োগ করবে সরকার। চার বছর পর নিযুক্ত জওয়ানদের মাত্র ২৫ শতাংশকে সেনাবাহিনীতে নেওয়া হবে। বাকি ৭৫ শতাংশকে নানা ভাবে সাহায্য করবে সরকার। কিন্তু, সরকারের সেই সাহায্য পেয়ে যে বাকি ৭৫ শতাংশ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে, তার নিশ্চয়তা নেই।
যার অর্থ, পথে দাঁড়াতে হবে প্রতিটি ব্যাচে নিযুক্ত ৭৫ শতাংশ জওয়ানকে। তবে, জওয়ান তো নয়। সরকারের ভাষায় তাঁরা, 'অগ্নিবীর'। খোদ 'অগ্নিবীর'রা যে পথে, সেই পথে যে আগুন জ্বলবেই, তা একপ্রকার নিশ্চিত বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বহু বিশেষজ্ঞই। তারই যেন ট্রেলার ইতিমধ্যেই দেশ দেখছে ভবিষ্যতের 'অগ্নিবীর'দের ক্ষোভের মধ্যে দিয়ে।
কারা করছেন প্রতিবাদ?
প্রতিবছর বিহার, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, হরিয়ানা, দার্জিলিং, নাগাল্যান্ডের মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যুবকরা সেনাবাহিনীর চাকরির পরীক্ষা দেন। সেনাবাহিনীতে চাকরি পান। কিন্তু, গত দু'বছর সেই নিয়োগ বন্ধে ইতিমধ্যেই ভারতীয় সেনায় প্রায় দু'লক্ষ পদ খালি। বিরোধীদের চাপেও সরকার সেই নিয়োগ করেনি। উলটে 'অগ্নিপথ' প্রকল্প ঘোষণা করে বুঝিয়ে দিয়েছে, সেই নিয়োগ আর হবে না।
এখন থেকে স্থল, নৌ বা বিমান- যে সেনাতেই নিয়োগ হোক না-কেন, 'অগ্নিপথ' প্রকল্পের মাধ্যমেই হবে। চার বছর পরে ভাগ্যের শিকে ছিঁড়লে, কাশ্মীর থেকে বস্তার, জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করে অক্ষত থাকলে, সেনার চাকরি মিলতেও পারে। না-হলে অসহায় অবস্থায় গোটা পরিবার আর কিছু অনুদান হাতে নিয়ে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায় কাটাতে হবে। এটা প্রকল্পের ঘোষণার পর ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। আর, তাঁরা যতই বুঝছেন, ততই বাড়ছে বিক্ষোভ।
আরও পড়ুন- বেসরকারি ভারত গৌরব ট্রেনে ঘুরতে যাবেন? তাহলে এগুলো জেনে নিন
কারণ, সেনার চাকরির জন্য এখন দেশের বিভিন্ন রাজ্যে রীতিমতো প্রশিক্ষণ বা কোচিং কেন্দ্র চলে। সেখানে লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি, যুবকদের শারীরিক কসরতের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রাক্তন সেনা আধিকারিকরাই এমন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালান। সেই সব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মোটা টাকা দিয়ে ইতিমধ্যেই ভর্তি হয়েছেন বহু যুবকই।
নিয়োগের হাল গত দুই বছর খারাপ থাকার পরও তাঁদের অনেকে আশা ছাড়েননি। যাঁদের নিযুক্ত হওয়ার বয়স পেরিয়ে গিয়েছে, তাঁদের পরবর্তী ব্যাচগুলোও ইতিমধ্যে ওই সব কোচিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে দিয়েছে। 'অগ্নিপথ' প্রকল্পের ঘোষণা সেই সব যুবকদের যাবতীয় প্রত্যাশায় জল ঢেলে দিয়েছে। অথবা বলা ভালো, ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে।
Read full story in English