Kerala BJP chief wants renamed as Ganapathyvattam: এবার কেরলে টিপু সুলতানের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলতে উদ্যোগী হল বিজেপি। টিপুকে কংগ্রেস ও বামেরা জাতীয়তাবাদী মনে করলেও বিজেপির চোখে টিপু ছিলেন ধর্মান্ধ এবং হিন্দু বিরোধী। সেই ভাবনা থেকে এবার টিপুর এক বিশেষ স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার দাবি তুললেন বিজেপি নেতৃত্ব। কেরল বিজেপির প্রধান কে সুরেন্দ্রন দাবি করেছেন, 'সুলতান বাথেরি'র নাম পরিবর্তন করে 'গণপতিভট্টম' রাখতে হবে। এই 'সুলতান বাথেরি' আবার রাহুল গান্ধীর নির্বাচনী কেন্দ্র ওয়েনাদের একটি পৌর শহর। একে মন্দির শহর বললেও ভুল হবে না। টিপু সুলতান তার মধ্যে একটি মন্দির ধ্বংস করেছিলেন। আর, সেই মন্দিরকেই আংশিকভাবে নিজের অস্ত্রভাণ্ডার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।
রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রার্থী সুরেন্দ্রন
কেরল বিজেপি সভাপতি কে সুরেন্দ্রন এবারের লোকসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, সুলতান বাথেরিতে মন্দির ধ্বংস আসলে ছিল হিন্দুদের ওপর হামলা। তাই, সুলতান বাথেরির নাম পরিবর্তন অবশ্যই করতে হবে। এই ব্যাপারে সুরেন্দ্রন বলেছেন, 'সুলতান বাথেরির নাম পরিবর্তন করতেই হবে। এখানে টিপু সুলতান হামলা চালিয়েছিলেন। মন্দির ধ্বংস করেছিলেন। তাই সুলতান বাথেরির নাম পরিবর্তন করে গণপতিভট্টম রাখতে হবে। এই কেরলে টিপু সুলতান হিন্দু এবং খ্রিস্টানদের হত্যা করেছিলেন। টিপু একজন অপরাধী। তারপরও কংগ্রেস এবং সিপিএম চায় কেরলের এই জায়গা সেই অপরাধীর (টিপু সুলতান) নামেই নামাঙ্কিত থাকুক।' এবারের লোকসভা নির্বাচনে খ্রিস্টান অধ্যুষিত ওয়েনাদে ফের রাহুল গান্ধী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি কংগ্রেসের থেকে প্রার্থী হয়েছেন। সিপিআই এখানে প্রার্থী করেছে অ্যানি রাজাকে। আর, বিজেপি প্রার্থী করেছে সুরেন্দ্রনকে।
প্রশ্ন হল গণপতিভট্টম নামটি কোথা থেকে এল?
ওয়েনাদের তিনটি পৌর শহরের মধ্যে একটি হল সুলতান বাথেরি। অন্য দুটি হল- মানন্তবাদী এবং কালপেট্টা। সুলতান বাথেরিতে একটি পাথরের মন্দির আছে। যা একসময় গণপতিভট্টম নামে পরিচিত ছিল। বিজয়নগর রাজবংশের প্রচলিত স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত গণপতিভট্টম মন্দিরটি ১৩ শতকে বর্তমান তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটকের এলাকা থেকে ওয়ানাদে স্থানান্তরিত জৈনদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। ১৮ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে মাইসুরুর শাসক টিপু সুলতানের আক্রমণের সময় মন্দিরটি আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। ১৭৫০ এবং ১৭৯০ সালের মধ্যে, আজকের উত্তর কেরল অন্তর্ভুক্ত ছিল মাইসুরুর শাসক হায়দার আলি ও তাঁর পুত্র টিপু সুলতানের সাম্রাজ্যের। হায়দর এবং টিপু, বেশ কয়েকবার এই অঞ্চলে আক্রমণ চালিয়েছিলেন। তারপর প্রায় ১৫০ বছর ধরে অঞ্চলটি পরিত্যক্ত ছিল। পরে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ, এই জায়গাটিকে অধিগ্রহণ করে।
আরও পড়ুন- তাঁর তত্ত্ব ঝুলিতে এনে দিয়েছিল নোবেল পুরস্কার, পিটার হিগসের এই ‘ঈশ্বর কণা’ আসলে কী?
'সুলতান বাথেরি'র ইতিহাস
টিপুর বাহিনী এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি মন্দির এবং গির্জা ধ্বংস করেছিল। তাঁদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকেই ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হন। কেউ কেউ আবার এলাকা থেকেই পালিয়ে যান। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর আগে রিপোর্ট করেছিল, 'টিপু এই অঞ্চলে প্রায় ২৫টি গির্জা ধ্বংস করেছিলেন। গির্জায় হামলা চালানোর পরে পশ্চিম কর্ণাটকে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন টিপু।' এরপর টিপু সুলতান (আজকের উত্তর কেরল, ওয়েনাদ-সহ) মালাবার অঞ্চলে তাঁর সেনাবাহিনীর জন্য একটি অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে তুলেছিলেন। সেই অস্ত্রভাণ্ডার হিসেবে তিনি সুলতান বাথেরির মহাগণপতি মন্দিরটিকেই ব্যবহার করেছিলেন। এর ফলে ব্রিটিশরা গণপতিভট্টমকে 'টিপু সুলতানের অস্ত্রভাণ্ডার' হিসেবে তাদের তালিকায় নথিভুক্ত করে। আর, 'গণপতিভট্টম' নামটা হারিয়ে গিয়ে 'সুলতান বাথেরি' নামটাই প্রচার পায়।